সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আদালতে কতই না বিচিত্র ঘটনা ঘটে। তাই বলে কলকাতা হাই কোর্টে যা হল তা মনে হয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এজলাসে মামলার শুনানির সময় বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছে আগেও। ভুরি ভুরি উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু কোনও আইনজীবী বিচারপতিকে অভিশাপ দিয়েছেন, তাও আবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার, এমন ঘটনা অতীতে হয়নি। যা নিয়ে তুমুল হট্টগোল কলকাতা হাই কোর্টে। ওই আইনজীবী বাধ্য করেছেন বিচারপতিকে কড়া পদক্ষেপ করতে। রেগে বিচারপতি আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন আইনজীবীর বিরুদ্ধে।
গ্রামে-গঞ্জে এই ধরনের ঘটনা আকছার শোনা যেত। কারও উপর রাগ হলে অভিশাপ দেওয়ার চল রয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে মরার অভিশাপ দিত। ‘ওলাওঠা হয়ে মরার’ শাপ তো হরদম শোনা যায় পাড়াগাঁয়ে। সালিশি সভায় এই ধরনে শাপ দিলেই ভয় যেত অনেকে। মহামারির ভয়ে চুপসে যেত অনেকে। কিন্তু পাড়াগাঁয়ের সেই দৃশ্য জ্বলজ্যান্ত হয়ে উঠল শহুরে আদালতে। যেখানে বিচারপতির রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে আইনজীবী তাঁকে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার অভিশাপ দিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ থেকে করোনার জেরে বিশেষ মামলাগুলির শুনানি হচ্ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ২৫ মার্চ থেকে শুধুমাত্র জরুরি মামলাগুলির শুনানি হচ্ছে ভিডিও কলের মাধম্যে। কিন্তু আইনজীবী বিজয় অধিকারী একটি মামলার শুনানির জন্য আদালতের কাছে মিনতি করতে থাকেন। তাও আবার হাই কোর্টের এজলাসে যাতে মামলার শুনানি হয় তার জন্য আবেদন করেন আইনজীবী। শেষপর্যন্ত বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। শুনানির গুরুত্ব প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন আইনজীবী। তাঁর মক্কেলের একটি বাস ঋণখেলাপির জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গত ১৫ জানুয়ারি বাজেয়াপ্ত করে। তারপর বাসটির নিলাম আটকানোর জন্য তড়িঘড়ি স্থগিতাদেশ চেয়ে শুনানির আবেদন করেন আইনজীবী।
এরপর ২৩ মার্চ জরুরি শুনানির আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি দত্তর বেঞ্চ। জানিয়ে দেয়, এই মামলা যখন ১৫ জানুয়ারি থেকে চলছে তাহলে এতদিন পর কেন আইনজীবীর হুঁশ ফিরেছে। তখন নিজের মনে মতো রায় না পেয়ে বিচারপতিকে এই অভিশাপ দিয়ে বসেন আইনজীবী। এমনকী বিচারপতি দত্ত যখন রায় শোনাচ্ছিলেন, তখন এজলাসে চেঁচামেচি করে, টেবিল চাপড়ে, মাইকে টেনে আদালতের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন। সালিশি সভায় গ্রাম্য বিবাদের মতো পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বাকিরা হতবাক হয়ে যান। আইনজীবীর অভিশাপে অবশ্য কর্ণপাত করেননি বিচারপতি। বরং আইনজীবীর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন বিচারপতি। ১৪ দিনের মধ্যে আইনজীবীর জবাব দেওয়ার কথা। অবশ্য আদালতে কাজকর্ম স্বাভাবিক হলে বিচারপতির নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে আইনজীবী বিজয় অধিকারীর কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.