Advertisement
Advertisement
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি

চাই পুত্রসন্তান, শিশু বদলের গল্প ফেঁদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ পরিবারের

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু বদল কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়।

Child swap case at Medical College Kolkata takes new turn
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:November 20, 2019 9:15 am
  • Updated:November 20, 2019 2:47 pm

অভিরূপ দাস: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু বদলের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। পরপর দু’টি মেয়ে। এবার ছেলে হবে, হতেই হবে। এই সাধ নিয়েই হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন সন্তানসম্ভবা। কিন্তু সেই সাধপূরণ না হওয়ায় অসাধু উপায় অবলম্বন করতেও পিছপা হলেন না ডানকুনি চামুণ্ডাতলার রীতা দেবনাথ (৩০)। হাসপাতালের ঘাড়ে সন্তান চুরির অপবাদ চাপালেন। 

গত শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিংয়ে ভরতি হন এই সন্তানসম্ভবা। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপরেই শুরু গন্ডগোল। প্রসূতির স্বামী রাজু দেবনাথ অভিযোগ করেন, “শিশু চুরি হয়েছে। আমার স্ত্রী বলছে ওর পুত্রসন্তান হয়েছিল। কিন্তু তা বদলে কন্যাসন্তান দিয়ে গিয়েছে।” ঘটনা এতটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় যে শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াতেও অস্বীকার করেন মা। শিশুটির ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান নার্সরা। এরপর একাধিকবার মা’কে বোঝানো হয়। কিন্তু তিনি অনড়। এমনকী, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মারধরেরও অভিযোগ করেন ওই মহিলা। 

Advertisement

খাস কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমন ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে সুপারের কাছে। তৈরি হয় তদন্ত কমিটি। ৪ সদস্যের সে তদন্ত কমিটিতে ছিলেন, স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডেপুটি সুপার, নার্সিং সুপার এবং নিরাপত্তা আধিকারিক। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটেয় রিপোর্ট জমা পড়ে। সেই রিপোর্ট খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ! রীতা দেবনাথের দাবি অনুযায়ী, সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অথচ মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ওইদিন ওই সময়ে হাসপাতালে কোনও শিশুপুত্রের জন্মই হয়নি। তাহলে যে সন্তান চুরির অভিযোগ?

Advertisement

[আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর বলি আরও ১ শিশু, লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ]

হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কথায়, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই মহিলার এর আগে দু’টি কন্যাসন্তান রয়েছে। এক্ষেত্রে উনি আশা করেছিলেন পুত্রসন্তান হবে। তা যখন হয়নি, তাতে হতাশ হয়ে অসংলগ্ন আচরণ করছেন। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে পিওরপেরাল সাইকোসিস। সন্তান জন্মের পর হরমোনের একটা পরিবর্তন হয়। তাতে এরকম অস্বাভাবিক আচরণের উদাহারণ রয়েছে।” এর থেকে বেরিয়ে আসতে মায়ের কাউন্সেলিং করার নিদান দিয়েছেন সুপার। সন্ধে পর্যন্ত সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন পরিবার। শেষপর্যন্ত বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়াবে এই ভয়ে হাল ছাড়েন প্রসূতির স্বামীও। অবস্থা বেগতিক দেখে খোলসা করেন, “আমার স্ত্রীর পর পর দু’টি কন্যাসন্তান। ও আশা করেছিল এবার ছেলে হবে।” প্রসূতির বাবা মেঘনাদ বাগও বলেন, “আমরা আর অশান্তি চাই না। আমার নাতনি হলে তাকে নিয়েই বাড়ি যেতে চাই।”

ভিন রাজ্যে কন্যাভ্রূণ হত্যার ঘটনা শুনেছে শহর। কিন্তু ২০১৯ সালে এমন মানসিকতায় শিউরে উঠছেন অনেকেই। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র ডিরেক্টর ডা. প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, মনোবিদদের ভাষায় একে বলা হয় প্রি-অকুপাইড মাইন্ড। ওই প্রসূতি সন্তান ধারণের আগেই মনে মনে স্থির করে ফেলেছিলেন “আমার পুত্রসন্তান হবে।” এমন চিন্তা থেকেই অবসেশনের শুরু। তারপর ডিলিউশন। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও প্রসূতি বলছে, আমার কোলে ছেলে দেওয়া হয়েছিল। এটা পুরোটাই ওই প্রসূতির কল্পনা বলে জানিয়েছেন ডা. সাহা।  ডা. সাহার কথায়, দুঃখের কথা সমাজে এখনও এমন মানসিকতা কাজ করে। সকলেই চান সন্তানের গায়ের রং ফর্সা হতে হবে। কালো সন্তান নিয়ে মা-বাবা খুশি হন না। কিন্তু ফর্সা-কালো যে মাপকাঠি নয় সেটাই জানেন না। কাউন্সেলিং করালেই এ অসুখ সারবে বলে মনে করছেন ডা. সাহা। 

[আরও পড়ুন: সপ্তাহান্তে নামবে তাপমাত্রার পারদ, শীত আসতে আর দিন কয়েকের অপেক্ষা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ