ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: এক ঘটনার জেরে বহু দুর্ঘটনার সম্ভাবনা গজিয়ে উঠল। মধ্যমগ্রামে সিভিক ভল্যান্টিয়ারের অতি সক্রিয়তায় হেলমেটহীন স্কুটি চালকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি এতটাই স্পর্শকাতর যে, পথের শৃঙ্খলা রক্ষায় ন্যূনতম ব্যবস্থা নিতেও পুলিশকে দু’বার ভাবতে হচ্ছে। আইনরক্ষকরা এভাবে গুটিয়ে থাকাতে পথের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু মধ্যমগ্রামেই নয়, তার প্রভাব পড়েছে পাশের শহর বারাসতেও। পরিণামে এখন প্রতিপদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
[‘কপট’ পাত্রের ছলে লগ্নভ্রষ্টা কন্যা, তুলকালাম বিয়েবাড়িতে]
শনিবারের ঘটনার আগে ও পরে ‘কেস’-এর বহর দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। জেলা পুলিশ অফিস সূত্রে খবর, মধ্যমগ্রাম চৌমাথার ট্রাফিক পোস্টে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি বিনা হেলমেটের কেস রুজু হত। এছাড়া অন্যান্য অনিয়মের কেস তো আছেই। বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে গত সপ্তাহে সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ‘উইদাউট হেলমেট’-এর কেস রুজু হয়েছিল ৪৬টি। তবে শনিবারের পর একটিও কেস রুজু হয়নি মধ্যমগ্রামে। চাঁপাডালি মোড় ট্রাফিক গার্ডের পরিস্থিতিও এক। বারাসত শহরের ডাকবাংলো ট্রাফিক পোস্টে এই তিন দিনে মাত্র ৩টি বিনা হেলমেটের কেস রুজু হয়েছে। সংখ্যা দেখে মনে হতে পারে বিনা হেলমেটের বাইক আরোহী কমেছে। তবে বাস্তব চিত্রটা ঠিক তার বিপরীত। শনিবারের পর থেকে হেলমেট ছাড়া বাইকচালকের সংখ্যা বেড়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রোজই আইন ভেঙে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন বাইকচালকদের বড় অংশ। পুলিশের মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত জনরোষের বারুদে স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে শনিবারের ঘটনা। যার জেরে এখনও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকর্মীদেরও।
[নানা রকমের কয়েন কি আদৌ নেবেন? কী জানাল আরবিআই?]
মধ্যমগ্রাম চৌমাথা ও বারাসত চাঁপাডালি মোড়ে এতদিন ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেত সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের। এই দুই জায়গাতেই যানশাসনের নামে দুর্নীতির অভিযোগও বিস্তর। তবে শনিবারের ঘটনা যেন সেই ছবিটাকে একেবারে বদলে দিয়েছে। মধ্যমগ্রাম চৌমাথা ও বারাসত চাঁপাডালি মোড় এখন শুনশান। মধ্যমগ্রাম ট্রাফিক পোস্ট সূত্রে খবর, অধিকাংশ সিভিক ভল্যান্টিয়ার রবিরার থেকে কাজেই আসেননি। এমনকী ফোনও অফ তাঁদের। শুধুমাত্র খাকি উর্দিধারী কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশেরই দেখা মিলছে সেখানে। সাধারণ মানুষ জানাচ্ছে, হেলমেট না পরলেও এই দুই জায়গায় ধরছে না পুলিশ। যদিও জেলার পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, ট্রাফিক ব্যবস্থা কোনওভাবেই শিথিল করা হয়নি। রবিবার থেকে টানা ছুটি থাকার কারণে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কম ছিল। বুধবার থেকে ট্রাফিক আইন রক্ষার জন্য একইরকম কড়াকড়ি চলবে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, এখন থেকে আর সিভিক ভলান্টিয়াররা নন, শুধুমাত্র পুলিশকর্মীরাই গাড়ি থামিয়ে নথি পরীক্ষা করবেন। এবং হেলমেট না থাকলে বাইক আটকে কেস রুজু করবেন।
মঙ্গলবার ভোরে মধ্যমগ্রাম ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় একটি অটোর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় একটি মালবাহী মিনি ট্রাকের। এই ঘটনায় সুশান্ত হালদার নামে অটোযাত্রী এক শিশু এবং ওই মিনি ট্রাক চালকের মৃত্যু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের একাংশ যেভাবে বাড়াবাড়ি শুরু করেছিলেন তার ফলে শনিবারের ঘটনা। তবে সেই গা-জোয়ারি কমলেও অপরাধ ভাঙার এই প্রবণতা চিন্তার। এত নতুন সমস্যা তৈরি হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.