সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: মদ্যপ দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আটকাতে এবার বিধাননগরে ইংরেজি বর্ষবরণের রাতে পানশালা এবং রেস্টুরেন্টগুলিতে নাচ-গান বন্ধ করে দিল পুলিশ। এর ফলে এবার থেকে বিধাননগর সিটি পুলিশের এলাকায় বর্ষবরণের রাতে পানশালা ও রেস্টুরেন্টগুলির ডান্সিং ফ্লোরে আর উদ্দাম নাচাগানা করা যাবে না। অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে এই কড়া ব্যবস্থা নিলেন বিধাননগর সিটি পুলিশের কর্তারা। তবে কেউ যদি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে চান, সেক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন। তাতেও রাজ্যের আবগারি দপ্তরের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং যাবতীয় নিয়মকানুন মেনেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে হবে। সময়সীমা উত্তীর্ণ হলেই এই অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে পানশালা ও রেস্টুরেন্টের লাইসেন্সও বাতিল করে দেওয়া হবে বলে বিধাননগর সিটি পুলিশের কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিং জানিয়েছেন।
বেশ কয়েকবছর ধরেই ইংরেজি বর্ষবরণের ক্ষেত্রে পার্ক স্ট্রিট তার নিজস্ব জৌলুস হারিয়েছে। মূল কলকাতা ছেড়ে বর্ষবরণের রাতের আনন্দ এখন ছড়িয়ে পড়েছে চায়না টাউন ও বিধাননগর এলাকায়। বিশেষ করে ই এম বাইপাস লাগোয়া বিভিন্ন পানশালা ও রেস্টুরেন্টে কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণের রাতে চলে চটুল নাচগান। এছাড়াও বিধাননগর সিটি পুলিশের আওতাধীন নিউটাউন, বাগুইআটি, লেকটাউন-সহ বিভিন্ন এলাকার পানশালাগুলিতে ঘটা করে ইংরেজি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়। কলকাতায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলির উপর কড়া নজর থাকে পুলিশের। পান থেকে সামান্য চুন খসলেই লালবাজারের পুলিশকর্তারা বাতিল করে দেন শহরের বিভিন্ন পানশালা, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব ও হোটেলগুলির লাইসেন্স। সেক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে বিধাননগর এলাকায় পুলিশি নজরদারি অনেক শিথিল ছিল। তাই শহরের দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে কয়েক বছর ধরেই ঢুকে পড়ছে বিধাননগর এলাকায়। এর ফলে বিধাননগর সিটি পুলিশ এলাকার পানশালা ও রেস্টুরেন্টে একের পর এক দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
একটা সময় বাগুইআটি, লেকটাউন এলাকায় পানশালা ও রেস্টুরেন্টগুলি নিয়ন্ত্রণ করত ‘বার ব্যারন’ নামে পরিচিত জগজিৎ সিং। শুধুমাত্র বিধাননগর সিটি পুলিশ এলাকায় পানশালার সংখ্যা ছিল ৫০টিরও বেশি। তার মধ্যে বাগুইআটি থানা এলাকাতেই ছিল ২২টি পানশালা। বছরখানেক ধরে জগজিৎ সিংয়ের দাপট অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে আইপিএস কর্তা জ্ঞানবন্ত সিং পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই জগজিতের দাপট কমে যায়। কয়েক বছর আগে মধ্যরাত পর্যন্ত পানশালা চলায় জগজিতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল বাগুইআটি থানার পুলিশ। তারই জেরে জগজিৎ পানশালার কর্মী ও দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে এসে থানায় হামলা চালিয়ে ওসি সুকোমল দাসকে মারধর করেছিল। তাতে জগজিতের উপর বেজায় চটে যান পুলিশকর্তারা।
তার জের মিটতে না মিটতে কয়েক মাস আগে জগজিতের বিধাননগরের পানশালায় দু’দল দুষ্কৃতীর ‘গ্যাং ওয়ার’ হয়। পূর্ব কলকাতারই দু’দল দুষ্কৃতী ওই পানশালায় মদ্যপান করে দু’পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। সেখানেও তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, জগজিতের এই পানশালা চলছিল সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে। এরপরই নগরপাল জ্ঞানবন্ত সিংয়ের নির্দেশে জগজিতের ওই পানশালা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বিধাননগর সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি জানান, “প্রায় দশ মাসে বিধাননগরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২০টিরও বেশি বেআইনি পানশালা। তার মালিকদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলাও জারি করা হয়েছে। বাগুইআটি থানা এলাকায় এখন পানশালার সংখ্যা বড়জোর পাঁচ থেকে ছ’টি। সেগুলির উপরও আমাদের কড়া নজর রয়েছে। আমরা আমাদের এলাকায় কোনও পানশালা ও রেস্টুরেন্টে নাচগানের অনুমোদন দিইনি। সব বাতিল করা হয়েছে। বর্ষবরণের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.