স্টাফ রিপোর্টার: ছুটির সন্ধ্যায় প্রচণ্ড গতিতে প্রায় পাশাপাশি দু’টি বাইককে যেতে দেখে ট্রাফিক পুলিশেরও সন্দেহ হয়েছিল রাস্তায় চলছে বাইক রেসিং। কলকাতার রাস্তায় প্রথম বাইকের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ছুটছিল দ্বিতীয় বাইকটি। কালীঘাট ব্রিজের কাছে প্রথম বাইকটি এসে থামতেই হাত দিয়ে ইশারা করেন দ্বিতীয় বাইকের আরোহী। কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রথম বাইকটিকে ঘিরে ফেলা হয়। আরোহীকে বাইক থেকে টেনে তুলে নেওয়া হয় একটি গাড়িতে। বাইক রেসিং বা অপহরণ নয়। একেবারে ফিল্মি কায়দায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বাইক নিয়ে তাড়া করে গ্রেপ্তার করা হল শাহরুখকে।
[বদলাচ্ছে ৭০ বছরের প্রতীক, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]
না, ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ এ শাহরুখ সে শাহরুখ নন যিনি বলিউডের বাদশা নামে পরিচিত। তাহলে এ কে? আদতে উত্তর কলকাতার ত্রাস ও কুখ্যাত দুষ্কৃতী শাহরুখকে কালীঘাট থেকে গ্রেপ্তার করেছেন চিৎপুর থানার দুই পুলিশ আধিকারিক সন্দীপ পাল, এস বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁদের টিম। পুলিশ জানিয়েছে, এক বৃদ্ধার ৫০ হাজার টাকা চুরির কিনারা করতে গিয়েই ধরা পড়ল এই দুষ্কৃতী। অভিযোগ, চিৎপুর, কাশীপুর ও সংলগ্ন এলাকার ত্রাস শাহরুখ। প্রায়ই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের গোলমালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ত সে। সম্প্রতি সে গ্যাংও তৈরি করে। এলাকায় শুরু করে তোলাবাজি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে ছিনতাই, চুরি থেকে ধর্ষণের মতো অভিযোগ।
[জম্মু ও কাশ্মীরে সেনার ফের সাফল্য, খতম ২ জঙ্গি]
আগেও বহুবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে শাহরুখ। কয়েক মাস আগে কালীঘাটের যৌনপল্লির এক যৌনকর্মী সালমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই যৌনপল্লিতে যাতায়াত করতে করতে সালমাকে ভালবেসে ফেলে শাহরুখ। বারবার গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে সে উত্তর কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল। তাই সালমাকে বিয়ে করে কালীঘাটেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ের জন্য যে টাকার প্রয়োজন। তাই গত ৬ নভেম্বর চিৎপুর থানার অদূরে সন্ধ্যা দাস (৭০) নামে এক ফল বিক্রেতার ক্যাশবাক্স থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করে শাহরুখ। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা শাহরুখকে টাকা চুরি করতে দেখেছিলেন। বৃদ্ধা তাঁর টাকা ফেরত পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হন। কান্নাকাটি শুরু করে দেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
[মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে সাফারি কার, গরুমারায় উত্তেজনা]
শাহরুখ পালানোর প্রায় এক মাস বাদে পুলিশ জানতে পারে যে, সে কালীঘাটে গা-ঢাকা দিয়েছে সে। পুলিশ এও খবর পায় যে, রবিবার খিদিরপুরের ফ্যান্সি মার্কেটের কাছে শাহরুখ তার এক পরিচিতের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। সেই সূত্র ধরে মুখ হনুমান টুপি দিয়ে ঢেকে ছদ্মবেশ ধরেন চিৎপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা। সাতটি পয়েন্টে পুলিশের সাতটি টিম তৈরি থাকে। টাকা আদায়ের পর পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে স্টার্ট দেয় সে। ছদ্মবেশে থাকা পুলিশ আধিকারিকও তার পিছু নেন। খিদিরপুর, মোমিনপুর, আলিপুর হয়ে প্রচণ্ড গতিতে বাইক চালাতে শুরু করে শাহরুখ। পুলিশের বাইকও এমনভাবে তার পিছু নেয়, যেন ছুটির সন্ধ্যায় শহরে চলছে বাইক রেসিং। এভাবে পাঁচ কিলোমিটারের উপর তার পিছু নেওয়ার পর কালীঘাট ব্রিজের কাছে এসে গতি কমায় শাহরুখ। ততক্ষণে পুলিশ অফিসারের নির্দেশে বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা পুলিশকর্মীরা এসে গিয়েছেন কালীঘাট ব্রিজের কাছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিল শাহরুখ। পুলিশ অফিসারের ইশারায় বাইক ঘিরে নেয় পুলিশের টিম। চুরির টাকায় সালমার সঙ্গে সংসার পেতেছিল শাহরুখ। সেই টাকা উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[দাঁড়ি পড়ছে দক্ষিণেশ্বর-বেলুড়মঠ ফেরি পরিষেবায়, চাকরি পাচ্ছেন মাঝিরা]