স্টাফ রিপোর্টার: এ যেন মাসকাবারির ফর্দ! সাবান, হরলিক্স, গ্লুকোন ডি, ডালিয়া, স্যানিটাইজার, দুধ, ছাতু, কর্নফ্লেক্স, চ্যবনপ্রাশ…। করেনাজয়ীদের কাছে এমন চোদ্দো সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর। এই কারণেই দক্ষিণ কলকাতার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা কোনও আতঙ্ক নয়। বরং এমন এক হার্ডল, যা হাত ধরে পার করে দিচ্ছেন কো-অর্ডিনেটর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত।
অতিমারীর শুরু থেকেই ওয়ার্ডের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন ছিপছিপে তরুণ। ইতিমধ্যেই ১৩৮৩ বাড়ির চৌকাঠে তাঁর কপালের ঘাম পড়েছে। এ ওয়ার্ডে ঠিক ওই সংখ্যক মানুষই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। মারা গিয়েছেন ৩৬ জন। স্বজনহারা শোকস্তব্ধ যে সমস্ত পরিবার, তাদের কাঁধেও হাত রেখেছেন বাপ্পাদিত্য। বুঝিয়েছেন, পাড়া নয় এটা। আদতে একটা বিশাল যৌথ পরিবার। কারও বিপদে দরজায় পৌঁছে যাওয়াটাই দস্তুর। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরের অখণ্ড দিয়া ও ধূপকাঠি। কোভিডের নাম শুনলেই যখন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অন্য পাড়ায় ঘুরছে সামাজিক বয়কটের গল্প। তখন এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম পাটুলি সংলগ্ন ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাপ্পাদিত্য। তিনি পুজো-পাগল। কিন্তু উৎসবের মরশুমেও জানান দিয়েছেন, উৎসবের থেকেও এবার অনেক বেশি জরুরি মানুষের পাশে থাকা।
রাজ্যে ৮ হাজারের বেশি পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রন্ট ওয়ার্কার বলে উর্দিধারীদের ঘরে বসে থাকার জো নেই। সম্প্রতি বাপ্পাদিত্যর ওয়ার্ডেও দুই পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। শরীর খারাপে তাঁদের চব্বিশ ঘণ্টা খবর নিতেন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর। তাঁদের লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে এদিন গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডে নিজেই পৌঁছে গিয়েছেন। সংবর্ধিত করেছেন করোনাজয়ী আধিকারিক ও সার্জেন্টকে। দুই পুলিশ কর্মীর হাতে তুলে দিয়েছেন মন ভাল করা বিশেষ উপহারের ডালা। বাপ্পাদিত্যর কথায়, প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে ভাল থাকলেই সবাই মিলে ভাল থাকা সম্ভব। তাই এলাকার প্রতিটি বাসিন্দার খোঁজ রাখছেন তিনি। ওয়ার্ডের সকলের প্রতি তাঁর বার্তা, “আমি আছি আপনাদের পাশে। চিন্তা করবেন না।” এমন এক অসহায় সময়ে দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠেছেন বাপ্পাদিত্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.