সুব্রত বিশ্বাস: ‘নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে…’। পুণ্যতোয়া বেলুড়মঠ বা দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে এ কথা আর ভাবতে পারবেন না পুণ্যার্থীরা। কারণ, খুব শীঘ্র বেলুড়মঠ-দক্ষিণেশ্বরের মাঝে চলাচলকারী নৌকাগুলি বিদায় নিচ্ছে চিরতরে। সম্প্রতি পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বেলুড়মঠ সংলগ্ন জেটির উদ্বোধন করে বলেছিলেন, বেলুড়মঠ-দক্ষিণেশ্বরের মাঝে চলাচলকারী নৌকাগুলি বন্ধ করবে সরকার। এজন্য নৌকাপিছু একজনকে চাকরি দেবে সরকার। মাসিক ১১,৫০০ টাকা বেতনের এই প্রস্তাবে রাজি নৌকার মালিক-মাঝিরা। পরিবহণ দপ্তরে ৪০ জনের বায়োডেটাও জমা পড়েছে। সোমবার পরিবহণ দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণ নিগম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় জেটি নির্মিত হচ্ছে। এমআইসির ‘জনসাথী’ স্কিমে জেটিতে দু’-তিনজন করে চাকরি দেওয়া হবে। বেলুড়ের নৌকাগুলির থেকেও লোকজনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নৌকার মালিক-মাঝিদের পক্ষ থেকে সঞ্জীব দাস জানিয়েছেন, সরকারের প্রস্তাবে আমরা রাজি। সেইমতো ৪০ জন বায়োডেটাও জমা দিয়েছেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নিয়োগের কথা রয়েছে। নিয়োগ সম্পূর্ণ হলে তাঁরা যে নৌকা বিক্রি করে দেবেন সে কথাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। ৪০টি নৌকা বিক্রিতেও যে অনিশ্চয়তা রয়েছে তা-ও জানিয়েছেন নৌকার মালিকরা। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার যেসব ঘাটে এখনও এই পরিষেবা রয়েছে, সেখানে এই নৌকা বিক্রির চেষ্টাও শুরু করেছেন অনেকেই। পাশাপাশি একটি নৌকায় দু’তিনজন করে কাজ করেন। তাঁরাও বেকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। যদিও নৌকা ইউনিয়নের সভাপতি পল্টু বণিক মনে করেছেন, সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছে। এতে সম্মতি রয়েছে প্রত্যেকের।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠার পর গঙ্গার পূর্ব পাড়ে ঘাটে নৌকা চলাচল শুরু করে। বেলুড়মঠ প্রতিষ্ঠার পর সেখানেও শুরু হয় নৌকা চলাচল। দুই তীর্থক্ষেত্রের সংযোগে এক সময় বেলুড়মঠ-দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে নৌকা চলাচল শুরু হয়। স্থানীয় নৌকার মালিক পল্টার কথায়, তাঁর বাবা রামপলট চৌধুরি জানিয়েছেন, পাঁচ পুরুষ ধরে তাঁরা নৌকা চালাচ্ছেন। রানি রাসমনিও চড়েছেন তাঁদের এই নৌকায়। আগে ৮-১০টি নৌকা চললেও এখন সংখ্যাটা ৪০। ১৯৮৪ সালে দাঁড় টানা নৌকায় মোটর লাগে। মাঝিদের এককাট্টা করতে সংগঠন তৈরি হয়। বর্তমান সরকার পরিষেবার উন্নতিতে দক্ষিণেশ্বর-বেলুড়মঠের মাঝে লঞ্চ চালানো শুরু করে। এখন আধ ঘণ্টা বাদে সার্ভিস। ফলে ইদাণীং সংকটে রয়েছেন মাঝিরা। ফলে চাকরিটা এখন তাঁদের কাছে সম্বল।
দেখুন ভিডিও-
ভিডিও সৌজন্যে- সুব্রত বিশ্বাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.