গৌতম ব্রহ্ম: করোনা সংক্রমণের চিকিৎসায় চাই জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে যা মজুত নেই। ডিস্ট্রিবিউটরের ঘর থেকে আনাতে হবে। এক বিক্রেতা রাজিও হয়ে যান তাতে। কিন্তু কোথায় কী? ওষুধওয়ালার পাত্তাই নেই। COVID সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালের চৌহদ্দিতে পা রাখতে নারাজ ‘ডেলিভারি বয়’।
অনেক অনুরোধ-উপরোধেও চিঁড়ে ভিজল না। বারবার নিরাপদ দূরত্বের ধুয়া টানলেন তিনি। এমনকী হাসপাতাল গেটের উলটোদিকের ফুটপাতে আসতেও রাজি করানো গেল না তাঁকে। অনেক পীড়াপীড়ির পর হাসপাতাল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের একটি দোকানে ওষুধ রেখে চম্পট দেন ‘সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং’-এর নয়া নজির গড়া সেই কীর্তিমান। বাধ্য হয়েই চিকিৎসকদের হাসপাতাল ছেড়ে সেই ওষুধ আনতে ছুটতে হয়।
এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলেন বেলেঘাটা আইডি’র ডাক্তারবাবুরা। COVID-এর ভয়ে কেউ আইডি’র ছায়াও মারাতে চাইছেন না। ফলে, বিপাকে পড়ছেন ডাক্তারবাবুরা। বাইরে থেকে কিছু আনার দরকার হলে পাচ্ছেন না। এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কেউ ঢুকতে চাইছেন না। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানালেন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের জল নিয়ে আসা ম্যাটাডোর চালকরাও হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে চাইছেন না। গোটা ঘটনায় আইডি’র চিকিৎসক মহলে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আইডি’তে COVID চিকিৎসার অন্যতম দায়িত্বে ডা. যোগীরাজ রায়। তিনি ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। বলেন, “সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং অ্যাট ইটস বেস্ট!!!” মঙ্গলবার তিনি তাঁর ওয়ালে লেখেন, কয়েকজন রোগীকে এই ওষুধটি দেওয়া খুব জরুরি ছিল। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই বাইরে থেকে ওষুধটি আনার ব্যবস্থা হয়। বিকেল তিনটে নাগাদ বিলও মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ধে পর্যন্ত ওষুধ হাসপাতালে এসে পৌঁছয় না।
এদিকে, কর্তব্যরত চিকিৎসকের ডিউটি বদলের সময় হয়েছে। রাত আটটায় ওষুধ কোম্পানির এক প্রতিনিধি ফোন করেন ডাক্তারবাবুকে। জানান, “ডেলিভারি বয় আইডি’র ভিতর ঢুকতে রাজি নন।” শেষে বাধ্য হয়ে ডা. যোগীরাজ রায় নিজে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে দোকানে গিয়ে ওষুধগুলি নিয়ে আসেন। জানা গিয়েছে, ওষুধটির নাম মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। অত্যন্ত সংকটজনক রোগীদেরই একমাত্র ওষুধটি দেওয়া হয়। যাঁদের শরীরে নিজে থেকে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না, তাঁদের জন্য এই ওষুধ প্রয়োজনীয়। সময়মতো ওষুধটি না দেওয়া হলে জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারত। অত্যন্ত দামী ওষুধটির খরচ বহন করছিল রোগীদের পরিবারই।
অথচ সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের সাফাই দিয়ে ডেলিভারি বয়ের এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে চূড়ান্ত ক্ষোভ চিকিৎসক মহলে।যোগীরাজ পরে জানান, “বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। মানুষ আমাদের COVID যোদ্ধা বলে কুর্নিশ জানাচ্ছেন। অথচ দরকারের সময় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পালাচ্ছেন। অকারণ ভয় পাচ্ছেন। আমাদের কাজটাকে কঠিন করে দিচ্ছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.