সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের একবার শহরের বুকে ফাঁস হল মাদকপাচার চক্র। এবার খাস সল্টলেকে। ফের দামি পার্টি ড্রাগস উদ্ধার করল পুলিশ। গ্রেপ্তার এক ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের এক যুবক। যাদের নিশানায় ছিল বিভিন্ন কলেজ, ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও ডাক্তারি হোস্টেলের আবাসিকরা। যাঁদের নিয়ে রেভ পার্টি বসিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করত ধৃত নিলয় ঘোষ ও জেরম ওয়াটসন। সব মিলিয়ে দু’দিনে ধরা পড়ল ৫ মাদকপাচার চক্রী।
গত সোমবার কলকাতায় ধরা পড়েছিল এক নামী ডিজে-সহ তিনজন। নিখিল লখওয়ানি নামের ওই ডিজে পার্কস্ট্রিটের কারনানি ম্যানসনের বাসিন্দা। অপর যুবক রবার্ট ডিকসন বালিগঞ্জ প্লেসে থাকেন। তৃতীয়জন হেনরি লরেন্সের বাড়ি এজেসি বোস রোডে। আর গতকাল রাতে যে দু’জনকে ধরেছে সল্টলেক পুলিশ তাদের কাছ থেকে মিলেছে ১৪৮টি ব্লট, প্রচুর এলএসডি এবং এক্সট্যাসি ট্যাবলেট। তাদেরও বিচরণ অভিজাত, ধনী-বৃত্তে। সবমিলিয়ে যেন একটি চক্র। যার পর্দা উঠছে একে একে। সল্টলেকের নিলয় ঘোষ ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া। তার কাজ ছিল মাদক সরবরাহ করা। নিলয়ের আবার নিজস্ব ওষুধের দোকানও রয়েছে। তাকে এই সব জোগান দিত রেভ ওয়াটসন। তাদের টার্গেট ছিল ধনী বাড়ির ছেলেমেয়েরা। যাদের হাতে অগাধ পয়সা। ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। সেই মাঠে উড়ে বেড়ানোর রসদ জোগাত নিলয়। প্রথম দিকে অত্যন্ত কম দামে হাতে তুলে দেওয়া হত এলএসডি, এস্কট্যাসি ট্যাবলেট। যাতে তারা ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ত। একবার নেশা ধরিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। ক্রমশ চড়ত দাম। এই নেশা কাঁঠালের আঠার মতো। একবার ধরলে ছাড়ে না। তখনই আসক্তদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হত। ক্রেতা হিসাবে নাম উঠে এসেছে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ডাক্তারি পড়ুয়ার। যারা মূলত প্রচুর টাকা বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে পেত পকেটমানি হিসাবে। তাদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করা হত নেশার বস্তু। আবার কখনও বসানো হত রেভ পার্টি। সেই পার্টিতে যোগ দিতে কোনও ফি লাগত না।
আসলে পার্টি ছিল টোপ। সেখানে হাজির হলেই মাদক দেওয়া হত। কখনও মদ বা ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে, কখনও সরাসরি। যার যেমন চাই। ঠিক তেমনটাই। এছাড়া জানা গিয়েছে, মাদক মেশানো লজেন্সও পাওয়া যেত পাচারকারীদের কাছে। যাতে লেখা থাকত সাংকেতিক শব্দও। আর শব্দ দেখেই এই মাদক মেশানো লজেন্সগুলিকে চেনা যেত। এর পাশাপাশি যেসব ছাত্রছাত্রীরা মাদক সেবন করত তাদের নামও পেয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তাদের কয়েকজনকে ডেকেও পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে চেষ্টা চলছে এই কারবারের শিকড়ে পৌঁছনোর। এবং পাশাপাশি তাঁদের কাউন্সেলিংয়েরও। তবে এইভাবে পরপর দু’দিন শহরে বিপুল দামি নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধারে ঘুম ছুটেছে পুলিশের। এবং অবশ্য নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর। কেন না সামনেই বড়দিন। ইংরেজি বর্ষবরণের আগে অনুষ্ঠানে মাতবে শহর। বিভিন্ন ক্লাব, হোটেল, ফ্ল্যাটে চলছে তার আয়োজন। বোঝা যাচ্ছে সেই সব মাতোয়ারা করা অনুষ্ঠানের আড়ালে অনেক জায়গাতেই নিষিদ্ধ মাদক জোগানোর কাজ করছে একটি বড় চক্র। যার শাখা ছড়ানো হিমাচল প্রদেশ পর্যন্ত। এখন দেখার, শিকড় কোথায় এবং তা উপড়ে ফেলা যায় কি না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.