Advertisement
Advertisement

তিলোত্তমার এক অন্য রূপ, পুজোর শহরে ঘরহারা লক্ষাধিক ফুটপাতবাসী

আশ্রয় হারানোর আশঙ্কা একদল মানুষের চোখেমুখে।

Footpath dwellers worried over Durga Puja eviction
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:October 11, 2018 6:32 pm
  • Updated:October 11, 2018 9:14 pm

মণিশংকর চৌধুরি: মা আসছেন। আকাশে-বাতাসে ভাসছে আগমনির সুর। আলোর মালায় সেজে উঠেছে ‘সিটি অফ জয়’-আনন্দের শহর কলকাতা। বিপুল ব্যয়ে নির্মিত পুজো প্যান্ডালে ‘আসবেন’ মা। তুঙ্গে ‘থিমযুদ্ধ’। উপচে পড়া ভিড় বাজারে। পুজো বলে কথা, নতুন স্টক মিলিয়ে দেখতে হবে না! পুজোর শহরে এই চিত্র নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটু কান পেতে শুনলে, বা খানিকের জন্য ‘স্মার্টফোন’ থেকে চোখ তুলে আশেপাশে তাকালেই ধরা পড়বে অন্য চিত্র। দেখা যাবে ‘ঘর’ থুড়ি আশ্রয় হারানোর আশঙ্কা একদল মানুষের চোখেমুখে। প্রশাসন থেকে ‘ভদ্রলোক’, তাদের নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নয় কেউই। তাদের নাম নেই, পরিচয় নেই। তথাকথিত সভ্য সমাজের কাছে আবর্জনার চাইতে খুব বেশি কিছু নয় তারা। তাদের তকমা ‘ফুটপাতবাসী’।হ্যাঁ, পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা শহরে প্রত্যেক বছরই ঘর ভেঙে যায় লক্ষাধিক ফুটপাতবাসীর। দর্শনার্থীদের চলাফেরার সুবিধার্থে তুলে ফুটপাত থেকে তুলে দেওয়া হয় তাদের। এবারেও এর অন্যথা হওয়ার কথা নয়।

[নস্করি মায়ের আশীর্বাদ পেতে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন ওপার বাংলার মানুষ]

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, শহর কলকাতায় ফুটপাথবাসীই আশ্রয় লক্ষাধিক মানুষের। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, দেখা মিলবে সকলেরই। পুরুষেরা অনেকেই জনমজুরের কাজ করেন, আবার বহুতল আবাসনে পরিচারিকার কাজ করে অন্নসংস্থান করেন মহিলাদের একাংশ। হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে, ফুটপাতের সংসারে ফিরে আসেন তাঁরা। বছরের অন্য সময় বিশেষ চিন্তা নেই, তবে পুজোর সময় সবটাই ওলটপালট হয়ে যায়। প্রশাসন, পুলিশ ও পুজো কমিটিগুলির তাড়া খেয়ে ছাড়তে হয় থাকার জায়গা। বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা মেডিক্যাল বোর্ডের ডিরেক্টর ডি আশিস জানিয়েছেন, সব থেকে বেশি ফুটপাতবাসী রয়েছে উত্তর কলকাতায়, বিশেষ করে শ্যামবাজার। তবে দক্ষিণের গড়িয়াহাট, কালীঘাটের ফুটপাতেও বাস অনেকের। এছাড়াও টালিগঞ্জ, শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়ও বহু মানুষের কাছে ঘর বলতে ফুটপাত। পুজোর সময় এদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়।আনন্দের উৎসবে ঘর হারান ফুটপাতবাসীরা। আশিসবাবু বলেন, “এ কেমন রীতি? অসহায় মানুষগুলিকে ঘর ছাড়া করলে কি মা দূর্গা খুশি হবেন? মৃন্ময়ী মায়ের জন্য কোটি টাকার আয়োজন, অথচ শিশুকোলে অথৈ জলে রাস্তার মা।”

Advertisement

প্রায় ৩৮ বছর ধরে দুঃস্থদের স্বার্থে কাজ করছেন ডি আশিস। পথশিশুদের শিক্ষায় কলকাতা পুলিশের ‘নবদিশা’ প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। হাজার-হাজার দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত তাঁর মেডিক্যাল ব্যাংক। ফুটপাথবাসীদের সমস্যা কীভাবে মিটবে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, প্রশাসনের আরও বেশি ‘নাইট শেল্টার’ বানানো উচিত। এখন শহরে ৮ থেকে ১০টির মতো শেল্টার রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এছাড়াও সেখানে শুধুমাত্র মহিলা ও শিশুকন্যাদের থাকতে দেওয়া হয়।ফলে অনেকেই স্বামী বা পরিবার ছেড়ে হোমে থাকতে চান না। তাই শেল্টারের নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আনা উচিত। তিনি আরও বলেন, মানবিকতার খাতিরে এই দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে পারে পুজো কমিটিগুলি। প্যান্ডেলের পিছনে কয়েকজন ফুটপাতবাসীকে কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় দিতেই পারে। এরাও তো সমাজের একটা অংশ। পুজোর সময় এঁদেরও তো আনন্দ করতে ইচ্ছে হয়। এছাড়াও পুজোর সময় অন্য জায়গায় সরিয়ে দেওয়ার ফলে অনেক শিশুই হারিয়ে যায়। ফলে অপরাধীদের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। 

গড়িয়াহাটের ফুটেই থাকে নিমাই। গায়ের রং একটু চাপা বলে সঙ্গীরা ‘কালা’ নামেই ডাকছিল তাকে। বছর ১২-র ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, সরকারি আবাসনে পরিচারিকার কাজ করে তার মা। বাবা ফেরিওয়ালা। মা কাজে গেলে খেলতে বেরিয়েছে সে। স্কুলের বালাই নেই। পুজো নিয়ে জিজ্ঞেস করতে বলল, মা বাবাকে বলছিল, ‘ওরা তো বলছে জায়গা খালি করতে’। ওরা কারা জিজ্ঞেস করতে ঠোঁট উলটে বলল, ‘সে আমি কী জানি?” পুজোয় কী করবে, প্রশ্ন করা হলে বলল, ‘বেলুন বিককিরি করব’। আর খাওয়া দাওয়া, ‘মাংসের ছাঁট গো, মা যা রান্না করে, তোমাকে কী বলব। তবে জামা পুজোর পর কিনব।বেলুন বিককিরি করে টাকা পাব তো।’ পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝলেও, তার সরল কথা কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে বাস্তব তুলে ধরছে।  

[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ