Advertisement
Advertisement

আদালতে পিওন নিয়োগের পরীক্ষায় ‘হাইটেক’ টুকলি, গ্রেপ্তার ৫০

পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের প্রতারণার মামলা।

Fraud in competetive exam

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sayani Sen
  • Posted:December 17, 2018 7:37 pm
  • Updated:December 17, 2018 7:37 pm

অর্ণব আইচ:  কারও অন্তর্বাসের তলায় ছিল মোবাইল। কেউ বা রেখেছিল জামায় গুঁজে। আবার কারও কানে গোঁজা ব্লু টুথ। বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। শুরু হয়েছিল জজ কোর্টের পিওনের পরীক্ষা। মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বাইরে। আর দশ মিনিটের মধ্যেই হাতের মুঠোয় উত্তর। এক ঘণ্টার মধ্যেই একশোয় একশো পাওয়ার আশা। কিন্তু সেই আশায় ছাই ঢাললেন পরিদর্শকরা। ‘হাইটেক নকল’ চলাকালীনই বিভিন্ন কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ধরা পড়ল মোট ৫০ জন পরীক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি জায়গায় বিচারকদের সামনে ও তাঁদের তত্ত্বাবধানেই মোবাইল ও অন্য যন্ত্র-সহ ধরা পড়ে পরীক্ষার্থীরা। গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, যাদবপুর, ভবানীপুর, রবীন্দ্র সরোবর, নেতাজিনগর, বেহালা, পর্ণশ্রী, ঠাকুরপুকুর থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের হয় পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। প্রতারণার অভিযোগে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করার পর সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে পাঠানো হয়। গড়িয়াহাট থানার পুলিশের হাতেই ধরা পড়েছে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী।

[‘হাতে বাঁশ নিয়ে তৈরি থাকুন, কুকুরের মতো ছুটিয়ে মারব’, দিলীপের মন্তব্যে ফের বিতর্ক]

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জজ কোর্টের পিওন পদের জন্য পরীক্ষার আয়োজন করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে। মূলত দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন কলেজে ছিল পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি। মোবাইল নিয়ে ভিতরে ঢোকা নিষিদ্ধ। পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ, পকেট পরীক্ষা করা হয়। যদিও কারও কাছ থেকেই মেলেনি মোবাইল। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরই কারও অন্তর্বাস, কারও জুতো, আবার কারও জামার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে মোবাইল। প্রথমে কিছু বোঝা যায়নি। এমনকী, কানের পিছনে ব্লু টুথও ধরা পড়েনি পরিদর্শকদের চোখে। জানা গিয়েছে, মোবাইলে ছবি তুলে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাইরে। বাইরে রয়েছে মাস্টারমাইন্ডরা। তাদের মিনিট দশেক লাগে বইপত্র দেখে উত্তর খুঁজে বের করতে। এরপর দু’টি পদ্ধতিতে উত্তর চলে আসে পরীক্ষার্থীদের কাছে। যদিও তদন্ত শুরু করে পুলিশের প্রশ্ন, একই মাস্টারমাইন্ড বা চক্র কি নকলের কাজে সাহায্য করছে পরীক্ষার্থীদের? এর আগে শহরে রাজ্য ও কেন্দ্রের একাধিক পরীক্ষায় মোবাইল ও ব্লু টুথ নিয়ে ধরা পড়লেও একসঙ্গে এত পরীক্ষার্থী এতগুলি কেন্দ্র থেকে একসঙ্গে ধরা পড়েনি। তাই কোনও চক্র মোটা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা করছে, এমন সন্দেহ পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। সেই সঙ্গে এই চক্রের মাথারা কারা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে প্রাথমিক জেরার মুখে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই দাবি করেছে, তাদের নিজেদের বাড়ির লোক, আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই তাদের এভাবে নকল করতে সাহায্য করেছে। তারাই বই দেখে অল্প সময়ের মধ্যে পাঠিয়েছে উত্তর। কিন্তু এক বা একাধিক চক্র রয়েছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।

Advertisement

স্কুল তৈরির নামে ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ, মহিলাকে ঠকিয়ে ফেরার ব্যবসায়ী

পুলিশের কাছে খবর, মূলত দু’টি ‘মোডাস অপারেন্ডি’তে চলত এই নকলের কাজ। একটি পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র অনুযায়ী উত্তর লিখে তার ছবি তুলে তা হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিদর্শকরা দেখেছেন, কেউ বা উত্তরপত্রের তলায়, কেউ ফুলহাতা জামার আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রেখেছে মোবাইল। তাদের নজর পরিদর্শকের দিকে। পরিদর্শক একটু অন্যদিকে নজর দিলেই মোবাইলের স্ক্রিন থেকে উত্তর দেখে তা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তরপত্রে। আবার অন্য পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীর কানে লুকানো ব্লু টুথে চলে আসছে উত্তর। তা শুনে অনায়াসে ভরে যাচ্ছে উত্তরপত্র। পরিদর্শকরা পরীক্ষার হলে ছিলেন। তার উপর বেশিরভাগ পরীক্ষাকেন্দ্রেই পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন আলিপুর আদালতের বিচারকরা। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নির্দেশে অথবা তাঁদের সামনেই নকল করতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা ধরা পড়ে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গড়িয়াহাটের একটি কলেজ থেকে ধরা পড়ে ১৩ জন। বালিগঞ্জের হাজরা ল কলেজ থেকে হাতেনাতে ৮ জন ধরা পড়ে ও একজন পালিয়ে যায়। রবীন্দ্র সরোবরের সাউথ সিটি থেকে সাতজন পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য থানা এলাকার পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ধরা পড়ে বাকিরা। এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে, তা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ