Advertisement
Advertisement

Breaking News

এজলাস বয়কট নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আইনজীবীরা, প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপেও অমিল সমাধান

'মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না', দুর্নীতির তদন্ত প্রসঙ্গে বলছেন হাই কোর্টের বিচারপতি।

HC Justice Abhijit Ganguly stand against Corruption | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 14, 2022 9:51 am
  • Updated:April 14, 2022 9:51 am

গোবিন্দ রায়: “দুর্নীতি দেখলে আমি রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না।” বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যেও ভরা এজলাসে বসে এমনই মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (HC Justice Abhijit Ganguly)। পাশাপাশি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও এজলাসে বসে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি মন্তব্য করেন, “সব আমলেই দুর্নীতি হয়। আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারেন। আমি কোনও রাজনীতি করছি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালত বিচার করছে। তাতে সমস্যা কোথায়!” এই দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রবীণ আইনজীবীদেরও সাহায্য চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট নিয়ে তুলকালাম আইনজীবীদের দু’পক্ষের মধ্যে। শুরুতেই তাঁর এজলাসে বাইরে ও ভিতরে বয়কটপন্থী এবং বয়কটবিরোধী আইনজীবীদের মধ্যে চলে বচসা, হাতাহাতি। তাতেই কয়েকজন আইনজীবী আহত হন বলে অভিযোগ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আপনাদের দেশে মানবাধিকার নিয়েও আমরা চিন্তিত’, আমেরিকাকে যোগ্য জবাব বিদেশমন্ত্রীর]

তুমুল উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যে মামলার শুনানি শুরু করেন বিচারপতি। বয়কটপন্থী এবং বয়কটবিরোধী, দুপক্ষের উদ্দেশ্যেই তিনি বলেন, “যাঁরা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নন, তাঁরা এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। আমি ইচ্ছুক আইনজীবীদের নিয়ে অন্য মামলার শুনানি করব। যদি আমার নির্দেশ পছন্দ না হয়, তাহলে উচ্চতর বেঞ্চে যান। কিন্তু বেঞ্চ বদল না হলে কোর্ট বয়কট, এটা কী?” পরে এজলাসে বসেই প্রবীণ আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বার অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে গতকাল আমার বিরুদ্ধে আপনার সই দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে।” জবাবে চণ্ডীচরণ বলেন, “আপনার বিচার প্রক্রিয়ায় আমি ক্ষুব্ধ নই। আমার আপত্তি সিবিআই তদন্ত নিয়ে।” বিচারপতি বলেন, “কেন সিবিআই তদন্ত, তার বিস্তারিত বিবরণ তো আমি নির্দেশিকাতেই দিয়েছি। আপনারা রাজনীতি করছেন করুন। আমি কিন্তু রাজনীতি করছি না। আদালতে বসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচার করছি।”

Advertisement

একইভাবে অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে অশোক দেবের সই দেখেও দুঃখিত বলে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “কয়েকদিন আগে অশোক দেবের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছিল। চা খেতে খেতে অনেক কথা হয়। আমি তাঁকে বলি, আপনি আমার বিরুদ্ধে যা বলছেন, তা কি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন? অশোকদা আমাকে অনেক কথা বললেন। জানি না, আজ নবান্নে গিয়ে তিনি কী বলবেন।” বিচারপতির আরও মন্তব্য, “কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতিকে অশোক দেব যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠি কে লিখেছেন আমি জানি। তিনি আমার কাছে নমস্য। তিনি হাই কোর্টের কাছেও নমস্য।” তবে বিচারপতি জানিয়ে দেন, দুই পক্ষ উপস্থিত না থাকলে কোনও নির্দেশ জারি করা হবে না।

[আরও পড়ুন: এমনটাও হতে পার! গোসাপকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪]

আদালত (Calcutta High Court) সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের সামনে বিক্ষোভের মুখে পড়েন আইনজীবীদের একাংশ। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তাঁর জুনিয়র সহকর্মীরা। তাঁদের সঙ্গেই ওই এজলাসে ঢোকার চেষ্টা করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কল্লোল মণ্ডল ও কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বোদল ভট্টাচার্য। তাঁদের সঙ্গে বয়কটপন্থীদের খানিকটা ধাক্কাধাক্কি হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁরা এজলাসের মধ্যে ঢুকলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এজলাসের মধ্যে বিবাদে জড়ায় দুপক্ষই। বিচারপতির কাছে সাংবাদিকদের এজলাস থেকে বের করে দেওয়ার দাবি করেন বয়কটপন্থীরা। তার জবাবে বিচারপতি বলেন, “সংবাদ মাধ্যম সংবিধানের চতুর্থস্তম্ভ। তাঁরাই এর অংশীদার। কোনও ঘটনায় তাঁরা থাকবে না, এটা হতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই পাপ কাজ আমি করতে পারব না।”

অন্যদিকে, ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বয়কটবিরোধী। প্রথমে আইনজীবীদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল নিজেরা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বললেও পরে ফের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শুনানি মাঝ পথে থামিয়ে এজলাস ছাড়েন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তাঁর চেম্বারে ডাকা হয় বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ, সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মল্লিক, বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য মিত্র-সহ বেশ কয়েকজনকে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। পরে আদালতের মূল গেটের সামনে একে ওপরের দিকে দোষারোপের আঙুল তোলেন সব পক্ষই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ