সুব্রত বিশ্বাস: সার কারখানার বর্জ্য প্লাস্টিক জ্বালিয়ে পরিবেশকে ভয়াবহ দূষিত করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন বালির চাঁদমার এলাকার বাসিন্দারা। গত শনিবার এই বর্জ্যে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের ভয়াবহতা ক্রমশ গ্রাস করে মানুষজনকে। রবিবার রাতে এই আগুনের লেলিহান শিখায় ছড়িয়ে পড়ে আতংক। সোমবার দমকল দীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন আয়ত্তে আনে।
[অজ্ঞতায় প্রতারকের জালে, ৬০ হাজার টাকা খোয়ালেন শ্রমিক]
টাইমটেক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সলিউশন নামে ওই কারখানার পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কারখানাটি ভয়ংকরভাবে পরিবেশ দূষিত করছে। বহুবার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়তে বলার পরও নির্দেশ শোনেনি। এমনকী দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র দেখায়নি। বারবার সতর্ক করার পরও সাবধান হয়নি কর্তৃপক্ষ। বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদমারি ভাগাড়ে এই কারখানাটি গড়ে ওঠে। বালি পুরসভার সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ায় হাওড়া কর্পোরেশনের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে সংস্থাটি। আগে বালি পুরসভার বর্জ্য সেখানে আনা হলেও পরে হাওড়া পুর এলাকার হাসপাতালগুলি ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের বর্জ্য এনে এই কারখানা চত্বরে ফেলা হয়। এর পর সেই বর্জ্য পচিয়ে মেশিনে প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। টন টন জমা প্লাস্টিকে এর পর আগুন দেওয়া হয়।
[হাসপাতালের রোগীদের যাতায়াত আরও সহজ, চালু হল ইকো অ্যাম্বুল্যান্স]
গত কয়েক বছরে এভাবে বর্জ্য নষ্ট করার বিষয়টি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জয় শীল। তাঁর বক্তব্য, সারা বছরই এই বর্জ্যে রাতে আগুন নিজেরাই ধরিয়ে দেয়। শীতকালে এই আগুনে যে হারে দূষণ ছড়ায় তাতে এলাকার মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কুয়াশার সঙ্গে নিচের স্তরে নানা রাসায়নিক পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। ফলে শ্বাসকষ্টের শিকার হচ্ছেন বয়স্ক থেকে বাচ্চারা। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, দৈনিক প্রায় ২০০ বস্তা জৈব সার তৈরি হয়। বর্ষাকালে জলের জন্য কাজ বন্ধ থাকে। ফলে বর্জ্যের পাহাড় তৈরি হয়। তা পচে দূর্গন্ধ ছড়ায়। স্থানীয় মানুষজনের কথায়, এলাকাটি দূষিত হয়ে উঠেছে। পুকুর ও জলাশয়ে বর্জ্যের জমা জল এসে মিশে তা দূষিত করে তুলেছে। পুকুরগুলি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। পাশাপাশি প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে বাতাস দূষিত হচ্ছে মারাত্মক। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বাড়ি-ঘরের রং খারাপ হচ্ছে। চোখের রোগ বাড়ছে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত এই আগুনের ছবি সংগ্রহের পাশাপাশি জানান, “স্বচ্ছ ভারতের কথা বললেও আমরা অস্বচ্ছ ভারতের কবরে রয়েছি। এ এক অশনি সংকেত।”