সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কুমোরটুলি। কলকাতার পুজোর আঁতুড়ঘর। কিন্তু করোনা আবহে সেখানেই গরহাজির প্রতিমাশিল্পীর জোগানদারেরা। মূলত নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে এই মানুষগুলোই আসতে চাইছিলেন না কলকাতায়। কারণ অপ্রতুল ও ব্যবহারের অযোগ্য শৌচাগার। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল সংবাদ প্রতিদিন ও শ্রাচী। আজ, বুধবার কুমোরটুলিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল ছ’টি বায়ো টয়লেটের। সেই সঙ্গে সংস্কার করা হল দশটি পুরনো শৌচাগারের। উদ্যোগের নাম ‘নির্মল- Be শুদ্ধ’।
দোরগোড়ায় দুর্গাপুজো। আজ থেকে ঠিক একমাস পর মহাসপ্তমী। পুজো আসছে জানান দেয় এই কুমোরটুলিই। খড়ের উপর মাটির প্রলেপে পুজো পুজো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কিন্তু করোনা কালে সেই কুমোরটুলিতেই নাকি মৃৎশিল্পীর অভাব! গতি পাচ্ছিল না ঠাকুর গড়ার কাজ। কারণ করোনা থেকে বাঁচতে যখন প্রতিনিয়ত নিজেদের স্যানিটাইজ করতে হয়, তখনই কিনা কুমোরটুলির বিভিন্ন শৌচাগার অপরিষ্কার। এমতাবস্থায় ঝিমিয়ে পড়া প্রতিমাশিল্পে হঠাৎই হ্যালোজেনের রোশনাই। সমাধান হল দীর্ঘদিনের সেই সমস্যার। ৬টি বায়ো টয়লেটের নির্মাণ এবং দশটি শৌচাগার সংস্কার করে এদিন তুলে দেওয়া হল মৃৎশিল্পীদের হাতে। সঙ্গে বোনাস দু’টি স্যানিটাইজিং টানেল ও একটি স্বয়ংক্রিয় হাত ধোয়ার মেশিন। ফিতে কেটে এদিন হল তারই উদ্বোধন।
‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সহযোগিতায় এই অভিনব উদ্যোগ শ্রাচী অ্যাগ্রিমেকের। এগিয়ে এল তাদের স্যানিটেশন বিভাগ ‘ইকোপ্যাল’। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস ও শ্রাচী গ্রুপের চেয়ারম্যান রবি টোডি। এক ঝাঁক থিমশিল্পী ও ফোরাম ফর দুর্গোৎসব-এর কর্তাদের সরব উপস্থিতিতেই ‘নির্মল- Be শুদ্ধ’ হওয়ার শপথ নিল কুমোরটুলি।
ষোলো শৌচাগারের সঙ্গে স্যানিটাইজেশন টানেলের মতো করোনার বধের অস্ত্র পেয়ে বেজায় খুশি কারিগররা। তাঁদের মতে, “কেউ তো আমাদের কথা ভাবল।” কৃতজ্ঞচিত্তে উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানালেন থিমশিল্পীরা। সনাতন দিন্দা, সুশান্ত পাল, অমর সরকার, বিশ্বনাথ দে, অনির্বান দাস, শিবশঙ্কর দাস। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কুমোরটুলির ঘিঞ্জি গলিতে সবাই এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিন বর্ষীয়ান মৃৎশিল্পী রমেশচন্দ্র পাল, গোপালচন্দ্র সরকার ও মালা পালকে উদ্যোক্তাদের পক্ষে সংবর্ধিত করা হয়। সম্মান জানানো হয় থিমশিল্পী এবং ফোরামের চেয়ারম্যান নীতিশ সরকার, সহ-সভাপতি সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও সম্পাদক শাশ্বত বসুকে। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, “সংক্রমণের ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল কুমোরটুলি। ঠাকুরের অর্ডার নিচ্ছিলেন না মৃৎশিল্পীরা। এবার সমস্যা অনেকটাই কাটল।”
এদিন থিমশিল্পীদের পক্ষ থেকে সৃঞ্জয় বোস ও রবি টোডিকে সম্মান জানানো হয়। দু’জনের হাতেই উপহারস্বরূপ তুলে দেওয়া হয় অস্ত্রোশোভিত মা দুর্গার মূর্তি। মৃৎশিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি দু’জনেই। সৃঞ্জয় বোস জানালেন, “কুমোরটুলি সুস্থ না থাকলে দুর্গাপুজো ঠিকমতো সম্ভব নয়। আর এই সুস্থতার জন্য শৌচাগার ও স্যানিটাইজেশন টানেল অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই আমরা এগিয়ে এসেছি।” একই বক্তব্য রবি টোডির। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “কলকাতায় ইতিমধ্যেই দেড়শোটি বায়ো টয়লেট বসিয়েছি আমরা। কুমোরটুলিতেও বসানো হল। বায়ো টয়লেট ব্যবহার করার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে কারিগরদের। ভবিষ্যতে বাকি কুমোরপাড়ায়ও এই ‘নির্মল Be শুদ্ধ’ প্রকল্প নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।”