২৩ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  বুধবার ৭ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

দুর্গাপুজোর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পটুয়াপাড়া, তবে বাড়তি বর্ষায় অভাব ভাল এঁটেল মাটির

Published by: Sulaya Singha |    Posted: August 30, 2021 9:07 pm|    Updated: August 30, 2021 9:07 pm

Kumartuli is reviving ahead of Durga Puja 2021 | Sangbad Pratidin

নিরুফা খাতুন: করোনা আবহ কাটিয়ে দুর্গাপুজোর হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে কুমোরটুলি থেকে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা। গতবার যেমন অর্ডারে আকাল ছিল, এবার কিন্তু সেটা নেই। তবুও চিন্তা রয়েছেই। বাড়তি বর্ষার ফলে নদীর ভাল মানের এঁটেল মাটির অভাব। মিলছে না সুন্দরবনের মাটি। বর্ষায় পচে গিয়েছে খড়। প্রকট হয়েছে কাঁচামালের অভাব। আর এটাই চিন্তায় রেখেছে মৃৎশিল্পীদের।

অক্টোবরে পুজো। হাতে খুব বেশি সময় নেই। করোনা (Coronavirus) প্রভাব কমায় পুজোর অর্ডারও শিল্পীদের কাছে আসছে। দুর্গাপুজোর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পটুয়াপাড়া। কিন্তু কাঁচামালের টান নতুন করে ভাবাচ্ছে। নদীর ভাল মাটি না মেলায় জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে এসে প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা। অন্যদিকে, গতবারের থেকে দাম বাড়াতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। করোনা আবহে এবারও কমানো হচ্ছে মূর্তির উচ্চতা।

কুমোরটুলি (Kumartuli) ঘুরে বোঝা গেল, আগে নদীর এঁটেল মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি হত। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গঙ্গায় এঁটেল মাটি একদম নেই, তা বলা যায় না। কিন্তু নদীর জল বেড়ে যাওয়াতে সেই মাটি কাটা যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা মতো শিল্পীদের কাছে মাটির জোগান দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী বাসুদেব পাল বলেন, ক্যানিং-সহ সুন্দরবনের একটা বড় এলাকা, নদিয়া, চাকদহ, উলুবেড়িয়া এইসব জায়গা থেকে কুমোরটুলিতে মাটি আসে। যশের পর থেকে সুন্দরবন অঞ্চল জলে ডুবে রয়েছে। বর্ষায় উলুবেড়িয়া, নদিয়া এইসব এলাকায় নদীগুলোও জলে টুইটম্বুর। জল বেড়ে যাওয়াতে নদী থেকে মাটি কাটা যাচ্ছে না। সেজন্য কুমোরটুলিতে চাহিদামতো মাটির জোগান নেই। তবে শিল্পীরা তাতে দমছেনও না।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: এবার পুজোয় এক টুকরো রাজস্থান ফুটে উঠবে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে]

এদিকে পুজোর (Durga Puja 2021) দিন এগিয়ে আসছে। দুর্গাপুজোর আগে গণেশ, বিশ্বকর্মাও রয়েছে। পটুয়াপাড়ার আর এক শিল্পী কৌশিক ঘোষ বলেন, “কুমোরটুলিতে সুন্দরবনের মাটির চাহিদা সবথেকে বেশি। যশের পর থেকে সুন্দরবন এলাকা জলমগ্ন। এছাড়া উলুবেড়িয়া, নদিয়া, চাকদহ এইসব এলাকা থেকে মাটি আসে। কিন্তু বর্ষায় নদীর জল বেড়ে গিয়েছে। নদী থেকে মাটি কাটা যাচ্ছে না। যে কারণে সময়মতো মাটি পাওয়া যাচ্ছে না।” এমনও জানালেন, সাত বস্তা মাটির অর্ডার দিলে পাঁচ বস্তা মিলছে।

এদিকে জোগান কম থাকায় মাটির মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। একটি সিমেন্টের বস্তায় ছ’খানা মাটির তাল থাকে। এরকম ছটি বস্তার দাম ৫০০ টাকা ছিল, গত পুজোর সময়। বাসুদেববাবুর বক্তব্য, “মাটির দাম কেউ ৫০০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন। আবার কেউ দাম একই রেখে বস্তা কমিয়ে দিচ্ছেন।” শিল্পী দেবব্রত পালের বক্তব্য, নদীর এঁটেল মাটিতে নোংরা থাকে না। মাটি মাখনের মতো মসৃণ হয়। এই মাটির প্রতিমা শুকানোর পর সহজে ফাটল ধরে না। এই মাটির প্রতিমা রং করার পর খুব উজ্জ্বল দেখায়। তাঁর কথায়, নদীর মাটির জোগান কম থাকায় অনেক শিল্পী এখন জমির মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন। শিল্পী জানান, জমির মাটিতে প্রচুর নোংরা থাকে। এই মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করতে খুব সমস্যা হয়। খড়ের গায়ে মাটি মাখানোর সময় মাটি ঝরে পড়ে। প্রতিমা ভাল হয় না। প্রতিমা শুকনো করার সময় ফেটে যায়। রং ভাল ফোটে না। এখন নদীর যেটুকু মাটি পাচ্ছি তা দিয়ে প্রতিমার মুখ, হাত এবং আঙুল তৈরি করা হচ্ছে। জমির মাটি দিয়ে বাকি অংশের কাজ হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: ১ সেপ্টেম্বর থেকে বদলে যাচ্ছে Belur Math খোলার সময়, জেনে নিন নতুন সময়সূচি]

শুধু মাটি নয়, খড়ের দামও বেড়েছে। শিল্পীদের বক্তব্য, বৃষ্টিতে খড় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগে এক বান্ডিলে ১৬টি করে খড় থাকত। দাম পড়ত প্রায় ৫০ টাকা। এখন একই দামে এক বান্ডিলে ১২টি করে খড় দেওয়া হচ্ছে। কাঁচামালের দাম বাড়লেও প্রতিমার খুব বেশি দাম বৃদ্ধি হয়নি বলে কুমোরটুলি মৃৎশিল্প ও সংস্কৃতির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেড়েছে। সেই তুলনায় প্রতিমার দাম বাড়েনি। করোনার কারণে ক্রেতারা কম দামের প্রতিমা চাইছেন। ১০ ফুট প্রতিমার দাম প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পড়ে। ক্রেতারা পুরনো দামও দিতে চাইছে না। আবার অনেকে প্রতিমার উচ্চতা কমিয়ে দিতে বলছেন। অর্ডার আসছে।”

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে