Advertisement
Advertisement

বাড়িতে ২২ দিনের সন্তান, নামকরণের আগেই শিয়ালদহে দুর্ঘটনায় বলি যুবক, শোকগ্রস্ত পরিবার

একুশ দিনের নিষ্পাপ শিশু বাবাকে চিনে উঠতে পারল না, আক্ষেপ পরিবারের।

Man died in an accident before his 21 days old child was named | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 6, 2022 8:27 pm
  • Updated:October 6, 2022 8:42 pm

সুব্রত বিশ্বাস: একুশ দিন আগে ছেলে হয়েছে রাহুলের। আনন্দে উদ্বেল ছিল খিদিরপুরের (Khidirpur) ৪৯/৫/এইচ/৮ কার্ল মার্কস সরণির প্রসাদ ও গুপ্তা পরিবার। দেড় মাস ধরে ছিল শিশু জন্মানোর একাধিক বিধি অনুষ্ঠান। সবই চলছিল ঠিকঠাকভাবে। আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনায় সরগরম ছিল বাড়ির পরিবেশ। দশমীর রাতে মা দুর্গার বিজয়ার সঙ্গে সব আনন্দও যে বিদায় নেবে দুই পরিবারের থেকে তা কেউ অনুমান করতে পারেনি। দশমীর রাতে শিয়ালদহ উড়ালপুলের (Sealdah Overbridge Accident) উপর একটি বাস পিষে দেয় ছ’জনকে। তিনজন মারা যান, তিনজন গুরুতর জখম হয়ে এখন হাসপাতালে। সবাই গুপ্ত ও প্রাসাদ পরিবারের সদস‌্য।

দুর্ঘটনার পরই এসএসকেএমে মারা যান রাহুলকুমার প্রসাদ (৩০)। দশমীর দিন ঠাকুর দেখার ইচ্ছাটাই কাল হল তাঁর জীবনে। একুশ দিন আগে জন্ম নেওয়া শিশু পুত্রের বাবা রাহুল। ছেলের জন্মের পর চলছিল নানা সামাজিক আচার। সম্প্রতি আতুঁড়ের অনুষ্ঠানে হাওড়া থেকে এসেছিল মামাতো বোন নন্দিনী কুমারী। মেসো শ্বশুরের দুই ছেলে বাঙুরের বাসিন্দা রাহত ও নীতেশ গুপ্তও এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ড: আমিরের ১৫০০ অ্যাকাউন্টের হদিশ, আরও ২০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ]

দশমীর দিন রাহুলই উদ্যোগ নেয় ভাই, বোন, শালা, শালিদের নিয়ে রাতে ঠাকুর দেখবেন। স্ত্রী নীলম অবশ‌্য সে সুযোগ নিতে পারেননি সন্তানের বয়স একুশ দিন হওয়ায়। একদিকে সিজার করে জন্ম দেওয়া। অন‌্য দিকে সন্তানের দেড় মাস হলে হবে গঙ্গা পুজো। তারপরই বাইরে বেরোতে পারতেন নীলম। এই বিধিনিষেধের গেঁরোই তাঁকে বাঁচিয়ে দিল।বিধির লিখন মেনে নিতে পারছেন না তিনি। মাত্র দশ মাস আগে বহু স্বপ্ন নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন। সময় মতো কোল আলো করে এসেছিল সন্তান। তবে তা জীবনে শুধুই ক্ষণিকের ঝলকানি, মেনে নিতে পারছেন না নীলম। বারাবার অস্ফুট স্বরে বলে চলেছেন, রাহুল খাবার নিয়ে আসবে। এই আশা যে কোনওদিন মিটবে না, তা নিশ্চিত জেনে পরিবারের সদস‌্যরা স্বান্তনা দিয়ে চলেছেন।

Advertisement

কার্ল মার্কস সরণির পরিচিত মুখ শিউপূজন গুপ্তা। ফুড ইন্সপেক্টর তিনি। তাঁরই বড় জামাই রাহুল। তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় নীলম, মেজো অদিতি, ছোটটি ছেলে নীলেশ। দুঘর্টনায় বড় জামাইয়ের সঙ্গে তিনি হারিয়েছেন ছোট মেয়ে অদিতিকেও। ছেলে নীলেশও গুরুতর জখম। ডিভাইনে ভরতি। ন‌্যাশনাল হাই স্কুলের বারো ক্লাসের পড়ুয়া ছিলেন অদিতি। উচ্চ মাধ‌্যমিক দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। আর তা হল না। গুপ্তাজির আক্ষেপ, সব শেষ হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি। একুশ দিনের নিষ্পাপ শিশুটি বাবাকে চিনে উঠতে পারল না।

[আরও পড়ুন: উৎসবে বেপরোয়া নাগরিক! পাঁচদিনে প্রায় ৩৫ হাজার ট্রাফিক মামলা ঠুকল কলকাতা পুলিশ]

রাহুল জানিয়ে ছিলেন, ছেলের নাম সেই দেবে। মাস খানেক বাদে এক অনুষ্ঠানে। এখন কে দেবে সেই নাম, বুঝে উঠতে পারছে না দুই পরিবার। আহত গুপ্তাজির দুই শ‌্যালিকার ছেলে রাহত ও নীতেশ এখন ডিভাইন নার্সিং হোমে ভরতি। ছেলে নীলেশ একবালপুর নার্সিং হোমে। তার পা ভয়ানকভাবে জখম। বিপত্তারিণী দেবী দুর্গা যে এভাবে পরিবারকে রিক্ত করে নিয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না সদ‌্য স্বামী হারা নীলম ও তার পরিবারের সদস‌্যরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ