Advertisement
Advertisement

Breaking News

চন্দ্রকেতুগড়ের সংগ্রহশালায় মগনলাল মেঘরাজের হানা!

গল্প নয় সত্যি!

Man preserving chandraketugarh artifacts faces threat from anti socials
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 3, 2017 5:22 am
  • Updated:March 3, 2017 5:22 am

ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: চন্দ্রকেতুগড়ের সংগ্রহশালায় কি কোনও মগনলাল মেঘরাজের হানা?

আড়াই হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন ইতিহাস বহন করছে উত্তর ২৪ পরগনা দেগঙ্গার চন্দ্রকেতুগড়৷ মাটির নিচ থেকে পাওয়া হাজার হাজার বছরের পুরনো বহুমূল্যবান নিদর্শনগুলি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আগলে রেখেছেন বেড়াচাঁপার দিলীপকুমার মৈতে৷ তবে এখন সেগুলির উপর নজর পড়েছে স্মাগলারদের৷ আশঙ্কা করছেন দিলীপবাবুর পরিবার৷ সোমবার বিকেলে দুই সন্দেহজনক ব্যক্তির আগমনের পর থেকেই এই আশঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছে তাঁদের মনে৷

Advertisement

“দিলীপবাবুর লাইফ থ্রেট আছে৷ সাবধানে রাখবেন, বয়স হয়েছে তো৷ এই জিনিসগুলির জন্য অনেক স্মাগলাররা অনেক কিছুই করতে পারে৷ বাইরের খাবার খাওয়াবেন না৷ তাতে বিষ থাকতে পারে৷” একের পর এক এই ধরনের কথা বলে দিলীপবাবুর পরিবারের লোকেদের আতঙ্কিত করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷৷ প্রতিটি কথার আড়ালে যেন প্রছন্ন হুমকি রয়েছে৷ যেমন বলতে শোনা গিয়েছিল সত্যজিত্‍ রায়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রের চরিত্র স্মাগলার মগনলাল মেঘরাজকে, “ও সরবতে বিষ নাই৷ বিষ খুব খারাপ জিনিস আমি মনে করি৷ বিষের চেয়ে অন্য জিনিসে কাজ দেয় বেশি৷”

Advertisement

(থিমশিল্পর নয়া ঠিকানা ইকো পার্কের পুজো মিউজিয়াম ‘সংগ্রহ’)

ছোট বয়স থেকেই একটি একটি করে এই প্রাচীন নিদর্শনগুলিকে সংগ্রহ করেছেন দিলীপবাবু৷ নিজের বাড়িতেই এই নিদর্শনগুলিকে নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেছিলেন তিনি৷ বর্তমানে তাঁর বয়স হয়েছে ৮০ বছর৷ বার্ধক্যজনিত রোগ গ্রাস করেছে তাঁকে৷ তাঁর সংগ্রহে রয়েছে শুঙ্গ, গুপ্ত, কুষাণ, পাল ও সেন যুগের পোড়া মাটির আসবাবপত্র, জীবাশ্ম, প্রাচীন বৈদেশিক মুদ্রা, দেব-দেবীর মুর্তি সহ নানা নিদর্শন৷ আন্তর্জাতিক বাজারে যার দাম কয়েক লক্ষ টাকা৷ সম্প্রতি চন্দ্রকেতুগড়কে ঢেলে সাজানোর জন্য গঠন করা হয়েছে চন্দ্রকেতুগড় উন্নয়ন কমিটি৷ দিলীপবাবুর এই সংগ্রহগুলিকে নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করছে রাজ্য পর্যটন দফতর৷ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিলীপবাবুর পরিবারের অভিযোগ, নিজেকে স্ট্যাম্প কালেকটর পরিচয় দিয়েছিলেন ওই সন্দেহজনকদের একজন৷ দিলীপবাবুর প্রাণ সংশয়ের কথা বলার পর তারা এই নিদর্শনগুলি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে নিষেধ করে৷ চন্দ্রকেতুগড় উন্নয়ন কমিটির চেয়ারপার্সন তথা সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “ওই দুই ব্যক্তি দিলীপবাবুর পরিবারকে বলেছে এই নিদর্শনগুলি রাজ্য সরকারকে নয় কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া উচিত৷ তারাই যোগাযোগ করিয়ে দেবে৷ আর দু’মাস এই নিদর্শনগুলি আটকে রাখলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে দিলীলপবাবুকে পুরস্কারও পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলে তারা৷ আসলে তাদের অভিসন্ধি কী৷”

পর পর দু’দিন দিলীপবাবুর বাড়িতে হাজির হয় সন্দেহজনক ওই দুই ব্যক্তি৷ দ্বিতীয়দিন স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনাটি জানান তাঁরা৷ ঘটনাস্থলে যান দেগঙ্গার বিডিও৷ তবে প্রশাসনিক কর্তাদের দেখেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় ওই দই ব্যক্তি৷ বিডিওকে দেখে সন্দেহজনক ব্যক্তিরা বলে তারা সংগ্রহশালা দেখতে এসেছিল৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যায়৷ বিডিও মনোজ কুমার বলেন, “পুলিশকে দিলীপবাবুর বাড়িতে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচেছ৷” দিলীপবাবুর ছেলে দীপেন মৈতে জানিয়েছেন, “এই নিদর্শনগুলি বাবার প্রাণ৷ তাই সংগ্রহশালাটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ২৪ ঘণ্টা দু’জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী বাড়িতে পাহারায় রয়েছেন৷” তবে আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি তাঁদের৷ কারা ছিল এই দুই ব্যক্তি? কেনই বা এসেছিল তারা? এই প্রশ্নই তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের৷ সত্যিই কি কোনও মগনলাল মেঘরাজ থাবা বসাতে চাইছে দিলীপবাবুর এই সংগ্রহগুলির উপর? ঘটনার তদন্ত করছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ