অর্ণব আইচ ও সন্দীপ চক্রবর্তী: এ ট্রামের জন্য লাইনের প্রয়োজন হয় না। এ ট্রামের মাথার উপর নেই কোনও বিদ্যুতের তার। এ ট্রাম শহরে নিয়ে আসছে একতা ও সম্প্রীতির বার্তা। সাধারণতন্ত্র দিবসে রেড রোডের প্যারেডে চলবে এই ‘ট্রাম’, যার মূল মন্ত্র ‘একতাই সম্প্রীতি’। বাড়তি গুরুত্বে থাকবে কেন্দ্রের ‘বাতিল’ করা এই ট্যাবলো। শুক্রবার মূল আকর্ষণ এটিই। দিল্লির নেতারাও অবশ্য সেই ট্যাবলো কেমন রূপ নেয়, তার দিকে নজর রাখছে।
‘একতাই সম্প্রীতি’-র ট্যাবলোটি দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে হাজির করতে চেয়েছিল রাজ্য। বেশ কয়েকটি ধাপে রাজ্যের থিম-এর প্রশংসা করেছিল কেন্দ্রের কমিটি। গানও চূড়ান্ত হয়েছিল। একদম শেষের ধাপের আগে রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। অর্থাৎ, বাতিল করা হয় ‘একতাই সম্প্রীতি’র ট্যাবলো। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, কলকাতায় রেড রোডের কুচকাওয়াজে সম্মানের সারিতে থাকবে ট্যাবলোটি।
[আচমকা উধাও সিভিক ভল্যান্টিয়াররা, সুযোগে বিনা হেলমেটে বাড়ছে যাত্রা]
রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, বাউল-ছৌ যেমনভাবে দিল্লির আসরে সেরার শিরোপা পেয়েছিল, ‘একতাই সম্প্রীতি’ও তেমনও নজর কাড়ত। রাজনৈতিক কারণেই তা বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনক্ষেত্র হিসাবে বাংলাকে দেখানো হবে। বেজে উঠবে রবীন্দ্রনাথ, কাজি নজরুলের গান। ট্রামের ভিতরই থাকবেন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ, ইসাই- ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ। একে অপরকে আলিঙ্গন করবেন তাঁরা। অনেকটা যেন চণ্ডীদাসের বার্তার মতো, সবার উপরে মানুষ সত্য। ভেদাভেদ ভুলে অখণ্ডতার নিদর্শন। কলকাতার ঐতিহ্যের বার্তাবাহক হিসাবেই তুলে ধরা হচ্ছে ট্রামকে। যেমন বাংলার ঐতিহ্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ট্রামকে সাজানো হয়েছে, কবিগুরু-সহ মনীষীদের ছবি দিয়ে। ট্রামের গায়ের ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বাংলায়। মন্দির-মসজিদ-গির্জার ছবি পাশাপাশি। বেলুড় মঠের ছবিতে স্বামীজীকে চেনা যায়। ছৌ, আদিবাসী নাচ, বাউল-এর দলও আকর্ষণ করবে উপস্থিত দর্শককে।
‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’কে গুরুত্ব দিতে বাইক নিয়েই ‘স্যালুট’ দেবেন কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের সার্জেন্টরা। আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তৈরি থাকে কলকাতা পুলিশের ‘বজ্র’। জঙ্গি দমনের জন্য রাস্তায় নামে ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এর সাঁজোয়া গাড়ি। শুক্রবার রেড রোডে দেখা যাবে এই গাড়িগুলিকেও। সঙ্গে থাকছে কলকাতা পুলিশের নতুন পাইলট কার। একটি বিশেষ গাড়িতে দেখা যাবে ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ’-এর ডুবুরি, ‘লাইফ সেভার’ ও কমান্ডোদেরও। থাকছে জীবন রক্ষাকারী কলকাতা পুলিশের ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ও।
[‘কপট’ পাত্রের ছলে লগ্নভ্রষ্টা কন্যা, তুলকালাম বিয়েবাড়িতে]
এদিকে, সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে তৈরি ফোর্ট উইলিয়ামও। রাজ্যপাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার পরই রেড রোডে আকাশ থেকে ফুল ছড়াবে এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টার। একের পর এক ট্যাবলোয় প্রদর্শিত হবে মর্টার ১৮৬১, ভারতীয় ফিল্ড গান, বফর্স ১৫৫ মিমি কামান, পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার। নৌসেনার পক্ষে ধ্বংসকারী যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস কলকাতা’ ও ‘সিন্ধুঘোষ’ সাবমেরিনের মডেলও প্রদর্শিত হচ্ছে আলাদা ট্যাবলোয়। বায়ুসেনার ট্যাবলোয় রাফালে যুদ্ধবিমান ও মাটি থেকে আকাশে ছোড়া বিমান ধ্বংসকারী স্পাইডার মিসাইলের মডেল নিয়ে থাকছেন মহিলা অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জ্যোৎস্না। অন্য ট্যাবলোয় থাকছে হেলিকপ্টার চিনুক, ওয়াকস ও সি-১৩০ জে হারকিউলিস বিমান, মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের মডেল। পর্বতারোহন ও শৃঙ্গজয়ও ট্যাবলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
[নানা রকমের কয়েন কি আদৌ নেবেন? কী জানাল আরবিআই?]