Advertisement
Advertisement
SSC

পুরনো OMR গ্রহণযোগ্য? কীভাবে হবে নিয়োগ? আদালতের রায়ে দুশ্চিন্তায় চাকরিহারারা

এর পর কী হবে? সেটাই প্রশ্ন সকলের।

SSC recruited teachers in trouble due to court verdict
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 25, 2024 1:44 pm
  • Updated:April 25, 2024 9:34 pm

গোবিন্দ রায় ও দীপালি সেন: কেউ পাঁচ বছর ধরে স্কুলে পড়াচ্ছেন। কারও শিক্ষকতার মেয়াদ সাত পেরিয়ে আট ছুঁইছুঁই। আদালতের নির্দেশে রাতারাতি সেই চাকরি হারিয়ে কার্যত দিশাহারা। অথচ রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু ‘দুর্নীতির কলঙ্কের দাগ’ লাগায় সেই নিয়োগই এখন ‘অবৈধ’! আর তারই জেরে দু’দিন আগেও সম্ভ্রমের আসনে থাকা শিক্ষক আচমকাই প্রতিবেশী থেকে শুরু করে একশ্রেণির স্বজন ও অভিভাবকদের বাঁকা চাউনির শিকার। চাকরি হারানোর ধাক্কার পাশাপশি সামাজিক এই হেনস্তার মুখে এসে দাঁড়ানো মাস্টারমশাইরা এখন নেহাতই  অসহায়। এর পর কী হবে? সেটাই প্রশ্ন সকলের।

শহিদ মিনারের নিচে জড়ো হয়ে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজেছেন চাকরিহারারা। চোখ ভরা জল নিয়ে কেউ অধোবদন। কেউ সোচ্চারে উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। হাতে হাতে নিজেদের যোগ‌্যতার প্রমাণ ওএমআর শিটের প্রতিলিপি। কিন্তু নতুন করে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলেছে আদালত, সেক্ষেত্রে এই ওএমআর শিট কি আদৌ বৈধ বলে গণ‌্য হবে? নাকি সত্যিই আবার পরীক্ষায় বসে আরও একবার যোগ‌্যতার প্রমাণ দিলে তবেই হারানো চাকরি ফিরে পাওয়া যাবে? ইতিমধ্যেই বয়স তো বেড়েছে সবারই, তো তার নিরিখে নতুন করে আয়োজিত নিয়োগ পরীক্ষার বসার সুযোগ আদৌ মিলবে কি? রাতারাতি চাকরিহারা অথচ যোগ‌্য প্রার্থীদের সামনে এখন এমন কঠিন প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর অজানা। হকের চাকরির দাবিতে দীর্ঘদিন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন যাঁরা, সেই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরাও চরম অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ,  আদালতের রায়ে অবৈধ চাকরি বাতিলের কথা বলা হলেও নতুন করে শুরু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বঞ্চিত এই চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান কী হবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই বলে অভিযোগ। আবার ফের পরীক্ষা নেওয়া হলে ইতিমধ্যেই নির্ধারিত বয়সের সীমারেখা পেরনো বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা বসার সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়েও ধন্দ। বাড়তি সংকট বাংলার স্কুলে স্কুলে। ফরাক্কা এলাকার যে স্কুলে ৩৬ জন শিক্ষক কোর্টের রায়ে রাতারাতি চাকরি খুইয়েছেন, কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে সব স্কুলে গড়ে তিন থেকে পাঁচজন শিক্ষক এমন কোপে পড়েছেন, সেইসব স্কুলে পঠনপাঠন কীভাবে সচল থাকবে তা অনিশ্চিত। উত্তর খুঁজছে মধ‌্যশিক্ষা পর্ষদ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আমেঠি-রায়বরেলিতে মনোনয়নের আগেই রামলালার দর্শনে অযোধ্যায় রাহুল-প্রিয়াঙ্কা! তুঙ্গে জল্পনা]

বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তার জন‌্য ওএমআর শিট তৈরি, মূল্যায়ন থেকে শুরু করে স্ক্যান করার জন্য ওপেন টেন্ডার ডাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে, তা নিয়ে চাকরিহারা, আন্দোলনরত বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে আইনজীবীদের একাংশ, এসএসসি-সব মহলেই সংশয় চরমে। প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র চাকরিহারা বা ওই প্যানেলেরই ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদেরই নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা হবে? নাকি, পুরানো ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের পুনর্মূল‌্যায়ন করে হবে নিয়োগ? এই প্রসঙ্গে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের তরফে দাঁড়ানো আইনজীবীরাই দ্বিমত পোষণ করায় ধন্দ বাড়ছে।

Advertisement

ডিভিশন বেঞ্চে মামলায় অংশ নেওয়া আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী বলেন, ‘‘একটা ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয়েছিল। আগের ওএমআর শিটগুলি পুনরায় মূল্যায়ন করে যাঁরা প্যানেলে ছিলেন তারাই চাকরির সুযোগ পাবেন বলা হচ্ছিল। কিন্তু সেটা একেবারেই ভুল। এরকম কোনও কথা আদালতের নির্দেশিকাতে লেখা নেই। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে স্বচ্ছভাবে নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। তার মানে একেবারেই শূন্য থেকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যেখানে সবাই নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যাঁদের যোগ্যতা আছে, তাঁরাও ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।’’ তবে তিনি জানান, যাঁদের ইতিমধ্যেই বয়স পেরিয়েছে তাঁরা এই নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আদালতের নির্দেশিকায় কিছু বলা নেই। তাঁরা চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

[আরও পড়ুন: ‘ভোট না দিন, অন্তত আমার শেষকৃত্যে আসবেন’, নিজের গড়ে আবেগঘন আবেদন খাড়গের]

অন‌্যদিকে সংশ্লিষ্ট মূল মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব‌্য, ‘‘আদালত বলেছে এসএসসিকে শূন্য পদে স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ করতে হবে। সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারা অংশ নিতে পারবেন বা পারবেন না, সবটাই ঠিক করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। তারাই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে, ফ্রেশ টেন্ডার ডাকবে, শর্ত তৈরি করবে, সবটাই এসএসসি করবে। এক্ষেত্রে পুরানো ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন হবে কি না বা বয়স পেরিয়ে যাওয়া প্রার্থীদের ছাড় দেওয়া হবে কি না তাও এসএসসিই ঠিক করবে। আদালত এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করেনি।’’ আর এই ধন্দ ঘিরেই ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে চাকরিহারা থেকে শুরু করে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ