তরুণকান্তি দাস: করোনা চিকিৎসায় রাতদিন এক করা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যখন অনেকেই অকারণ ভয়ে ভাড়া বাড়ি ছাড়তে বলছেন, তখন তিনি ভিন্ন পথের পথিক। পারিবারিক দু’টি ফ্ল্যাট বিনা পয়সায় ছেড়ে দিতে চান সেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য। যতদিন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই লড়াই চলবে ততদিন তিনিও চান এইভাবে ওই যুদ্ধের এক সৈনিক হিসাবে নিজেকে শামিল করতে। সেজন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। বেশ কয়েকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সরাসরি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী চিকিৎসায় যুক্ত নন বলেই বলে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারেননি সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ওই ছাত্রী।
দমদমের নাগেরবাজারের বাসিন্দা ওই ছাত্রী সূচনা সাহা বলেন, “যখন শুনলাম দেশের সংকটের সময় যাঁরা সামনে থেকে এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিজের জীবনের পরোয়া না করে, তাঁদেরই বেঘর হতে হচ্ছে, হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তখনই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। বাবার সঙ্গে কথা বলি। তিনি সানন্দে রাজি হন। তখন সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই নিজের বন্ধুবান্ধব এবং কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। জানিয়ে দিই, এমন কোনও চিকিৎসক, নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মী যদি এই শহরে আবাসনের সমস্যায় পড়েন তো স্বচ্ছন্দে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে নাগেরবাজারে। সেখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য আপাতত কোনও ভাড়াও গুনতে হবে না।” যে আবাসনে তাঁদের ফ্ল্যাট রয়েছে সেখানে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য আবাসিক সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলেছে ওই পরিবার। আবাসনের সম্পাদক জানিয়ে দিয়েছেন, এতে কোনও সমস্যা নেই।
[আরও পড়ুন : তিন চিটফান্ড কর্তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট]
ইতিমধ্যে আরজিকর হাসপাতালের চারজন নার্স তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা প্রায় সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেলেন। পরে অবশ্য তাঁরা পরিকল্পনা বাতিল করেন। কারণ, এই নার্সদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একটি মেডিক্যাল কলেজের এক নার্স ফোন করে জানান, বাড়িওয়ালা তাঁকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। দ্রুত বাড়ি ছাড়তে বলেছেন। এই অবস্থায় সূচনার ফ্ল্যাট পেলে সুবিধা হবে। কিন্তু তাঁর সেই সমস্যাও পুলিশি হস্তক্ষেপে মিটে যায়। সূচনার বক্তব্য, “এখনও পর্যন্ত ২০ জন কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। তবে অনেকে স্বাস্থ্যকর্মী হলেও সরাসরি করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত নন। আমার পরিবারের নীতি স্পষ্ট। যাঁরা করোনা চিকিৎসায় যুক্ত তাঁরা স্বাগত। অন্য কেউ নন।”