স্টাফ রিপোর্টার: সম্পর্কের টানাপোড়েনেই রহস্যজনক মৃত্যু হয় ঘাটশিলার ছাত্রী সুস্মিতা রায়ের। সুস্মিতা মৃত্যুরহস্যের জট খুলতে গিয়ে তাঁর আরও দুই বন্ধু নবারুণ সরকার ও বাবলু মাহাতোর নাম উঠে এসেছে। এদের দুজনকে জেরা করেই সম্পর্কের টানাপোড়েনের তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের। সুস্মিতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সুস্মিতার দুই বন্ধু বিবেক চাসা ও গুরমিত সিংকে গ্রেফতার করেছে কালীঘাট থানার পুলিশ। ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা থেকেই বুধবার রাতে পুলিশ তাদের ধরে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় নিয়ে এসে তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়। দু’জনকেই ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। উল্লেখ্য, বিমানসেবিকা কোর্সের ছাত্রী সুস্মিতা রায় গত ১০ ডিসেম্বর কালীঘাটের ‘পিজি’ থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। গঙ্গা থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের লোকেরা সুস্মিতার দুই বন্ধু বিবেক ও গুরমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্ত শুরুর পর পুলিশের নজরে সুস্মিতার আরও দুই বন্ধু নবারুণ সরকার ও বাবলু মাহাতো। ওই দু’জনের বিরুদ্ধেও অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। পুলিশের কাছে উঠে এসেছে বহু প্রশ্নও। গত ১০ তারিখ কাঁদতে কাঁদতে ‘পিজি’ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সুস্মিতা সারা রাত কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তা জানতে ট্রাফিকের সিসিটিভির ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর দু’টি মোবাইল ফোনের সন্ধান মেলেনি। সেগুলি চুরি হয়েছে, না কি জলে নষ্ট হয়েছে গিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। ১০ তারিখ বিবেক ও গুরমিতের সঙ্গে কনফারেন্স কলে কথা বলার পর কেন সুস্মিতা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান, তার কারণ জানতে পুলিশ দুই যুবককে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করছে। এক রুমমেটের সূত্র ধরে পুলিশ জেনেছে, আপত্তিকর অবস্থায় ‘পিজি’র ঘরের ভিতর ভিডিওচ্যাট করতেন সুস্মিতা। তিনি কার বা কাদের সঙ্গে এই চ্যাট করতেন, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিবেক চাসা ঘাটশিলায় একটি স্কুলের হিসাবরক্ষক। ওই স্কুলেরই অন্য শাখায় চাকরি করতেন সুস্মিতা। সেই সূত্রে দু’জনের আলাপ ও ক্রমে বন্ধুত্ব হয়। গুরমিত সিং ঘাটশিলায় তাঁর বাবার গ্যারাজ চালান। ট্রেনে যাতায়াত করার সময় গুরমিতের সঙ্গে সুস্মিতার আলাপ হয়। এর পর সুস্মিতা ও গুরমিতের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। যদিও ঘাটশিলার অন্য এক যুবক বাবলু মাহাতোর সঙ্গে সুস্মিতার কয়েক বছর আগে আলাপ হয় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। কলকাতায় বাবলুর মাছের ব্যবসা আছে। বন্ধুত্বের সূত্রে বাবলু সুস্মিতাকে একটি মোবাইল ফোনও কিনে দিয়েছিলেন। যে দু’টি ফোন সুস্মিতার কাছে ছিল, তার একটি বাবলুর কিনে দেওয়া। এ ছাড়াও নবারুণ সরকার নামে ঘাটশিলার অন্য এক যুবকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিল সুস্মিতার। ওই যুবক কয়েক বছর ধরে কলকাতায় কাজ করেন। ১০ তারিখ নবারুণ নিজেই সুস্মিতাকে ফোন করেছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। নবারুণ ফোন করার পর বিবেক ও গুরমিতের সঙ্গে ফোনে বচসা হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে খবর। প্রাথমিক জেরার মুখে ধৃত দুই যুবক জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সুস্মিতার বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু তিনি যে ‘পিজি’-র বাইরে বেরিয়েছেন, তা জানা ছিল না তাঁদের। গত ৪ তারিখ গুরমিত কলকাতায় এসে সুস্মিতার কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন সুস্মিতার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.