Advertisement
Advertisement
Thalassaemia

‘রোগের শেষ দেখে ছাড়ব’, অদম্য জেদ রাজ্যের একমাত্র থ্যালাসেমিক ডাক্তারী পড়ুয়ার

ভবিষ্যতে রক্তরোগ নিয়ে গবেষণা করতে চান এই ছাত্র।

Thalassaemia Student from kolkata and his difficult journey | Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:August 31, 2022 2:21 pm
  • Updated:August 31, 2022 2:43 pm  

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রথম যখন রক্ত নিলাম, বয়স ছ’মাস। মায়ের কোলে ছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম। শুনেছি, আমার কান্না দেখে মাও কেঁদেছিল। যেদিন আর জি করে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম সেদিনও মা কেঁদেছিল। আমিও কেঁদেছি।’’ তবে একটা শপথ নিয়েছি। এই রোগের শেষ দেখে ছাড়ব।’’ আঠারোর রাহুলের এমনই দুঃসহ স্পর্ধা! এই উদ্ধত স্পর্ধা তাঁকে হুগলির চণ্ডীপুরের আকুনি বিবি বিহারীলাল ইনস্টিটিউশন থেকে আর জি কর মেডিক‌্যাল কলেজে টেনে এনেছে।

রাহুল রাজ্যের একমাত্র থ্যালাসেমিক ডাক্তারি পড়ুয়া। স্বাস্থ্য ভবন অন্তত এমনটাই বলছে। কিন্তু নামের আগে এই শব্দটা ওঁর আর বাবা-মায়ের ছোট্ট সংসারকে তছনছ করে দিচ্ছিল। কিন্তু ওঁর হার-না-মানা জেদ ক্রমশ সব ঠিক করে দিয়েছে। জীবনের একটাই লক্ষ‌্য, হেমাটোলজিস্ট হয়ে থ‌্যালাসেমিয়ার মতো মারণ রোগকে জয় করা। সোম থেকে শনি রোজ সকাল ন’টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস। দুপুরে ক‌্যান্টিনে খেয়ে লাইব্রেরিতে একটু বসে ফের প্র‌্যাক্টিক‌্যাল করে সন্ধ‌্যায় হস্টেল। মাঝরাত পর্যন্ত লেখাপড়া। ফের সকালে ন’টায় কলেজ- এটাই রাহুল ঘোষের রোজনামচা। তবে ফি বুধবার মেডিক‌্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ‌্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনে যেতে হয় বি পজিটিভ রক্ত নিতে। ‘‘না হলে যে চলতেই পারব না। শ্বাসকষ্ট হয়। হাঁটতে চলতে কষ্ট হয়।’’ বলছেন রাহুল। সামনে কলেজ ফেস্ট। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ওঁর তুমুল ব্যস্ততা।

Advertisement

এখনও পর্যন্ত ৩০০ ইউনিট বি পজিটিভ রক্ত নিয়েছেন আমাদের হবু ডাক্তার। আগামী দিনেও রক্ত নিতে হবে। ছোট থেকে একটাই ইচ্ছে ডাক্তার হতেই হবে। ‘‘নিতান্তই যদি ডাক্তার না হতে পারি তাই মেডিক‌্যাল টেকনোলজিস্ট বা প‌্যারামেডিক‌্যাল কোর্স করেছিলাম।’’ আর জি করের মেন গেটের সামনে কয়েকশো লোকের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তিনি। ‘‘জানেন দাদা, এই যে ভিড়, এর মধ্যেও থ্যালাসেমিক থাকতে পারে। আমাদের কষ্ট একইরকম।’’ ঝাপসা চোখে স্মিত হাসি রাহুলের। মা-বাবার বাবান। বাবা রমেন ঘোষ বরজ থেকে পান কিনে পাইকারি বিক্রি করেন। মা টুলু ঘোষ সংসার সামলান। ছোট বোন সেভেনে পড়ে। ‘‘মা বড্ড চিন্তা করে। তাই সপ্তাহে একবার এক ঘণ্টা হলেও বাড়ি যেতেই হয়।’’ আবার হাসি।

[আরও পড়ুন: ২০১১ সাল থেকে নিয়োগ হওয়া সব প্রাথমিক শিক্ষকের তথ্য তলব ইডির ]

প্রথমবার জয়েন্ট দিলেও বিজয়লক্ষ্মী অধরা থেকে ষায়। কিন্তু অভিধানে ‘হার’ শব্দটা নেই। তাই দ্বিতীয়বারের জন‌্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। একইসঙ্গে স্টেট মেডিক‌্যাল ফ‌্যাকাল্টি অফ ওয়েস্টবেঙ্গল থেকে পারফিউসন বা প‌্যারা মেডিক‌্যাল কোর্স করেছেন। ইঞ্জেকশন, স‌্যালাইন দেওয়ার মতো প্রাথমিক অভিজ্ঞতা নিয়েই ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েছেন রাহুল। এরমধ্যে শব ব্যবচ্ছেদ করেছেন। চিনেছেন মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ।

আগে মাসে দু’বার রক্ত নিলেই হয়ে যেত। কিন্তু কিছুদিন আগে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে প্লীহার মধ্যে আয়রনের পুরু স্তর জমেছে। তাই বেশি রক্ত নিতে হয়। আর জি কর থেকে ওঁকে মেডিক্যালের হেমাটোলজি অ‌্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রসূন ভট্টাচার্যর কাছে পাঠানো হয়। একটা ছোট অপারেশন করে জমাটবাঁধা আয়রন তুলে ফেলা হবে। কিন্তু তার আগে একটা ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাহুলের কথায়, ‘‘জানেন দাদা, ভ্যাকসিনটা সব স্যররা খুঁজছেন। পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সমস্যা একটু কমত।’’ অধ্যাপক প্রসূন ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘ছোট্ট ছেলে। কিন্তু ভীষণ জেদ। জেদ আছে বলেই এতটা পথ এসেছে। ও ভাল থাকুক। আমাদের বড্ড আদরের রাহুল।’’ রাহুলের ইচ্ছে রক্তরোগ নিয়ে গবেষণা করে ওঁর মতো সমস্যা নিয়ে যারা কষ্ট পায় তাদের সুস্থ করে তোলা। আর এইজন্য ডাক্তার হয়েও গবেষণা করতে চান।

[আরও পড়ুন:বাড়ি-বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ায় দেশে প্রথম সারিতে বাংলা, ঢালাও প্রশংসা কেন্দ্রের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement