সুব্রত বিশ্বাস: হাওড়া থেকে ভেন্ডিং স্টল তুলে দেওয়ার পর হকারদের দৌরাত্ম্য সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছল। গরমের আভাসের সঙ্গে বাড়ল তৃষ্ণা। আর এই সময়েই স্টলগুলি ভাঙায় পানীয় জল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। এর এই সুযোগকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০০ হকার দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে স্টেশনে। এক লিটার জলের দাম ১৫ টাকা। যা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। দু’লিটার ৪০-৫০ টাকা। পূর্ব রেল জানিয়েছে, কিছুদিন এই সমস্যা হবে। নতুন পলিসি মেনে টেন্ডার দেওয়া হবে। ততদিন একটু সমস্যা হবে। এই সমস্যা এখন সীমাহীন পর্যায়ে এলেও তা সমাধানের কোনও পথ খোলা না থাকায় এই হকারি দৌরাত্ম্য চলবেই জেনেছেন রেলকর্মীদের একাংশ। এক শ্রেণির রেলকর্মী থেকে আরপিএফ রীতিমতো সিন্ডিকেট করে এই ‘জলচক্র’ তৈরি করেছে।
[হাওড়া স্টেশনে ভাঙা হল সমস্ত স্টল, উত্তেজনার পাশাপাশি বেকারিত্বর ক্ষোভ]
বুধবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল ১০ নম্বর থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেদার বিকোচ্ছে নানান কোম্পানির মিনারেল ওয়াটার। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিটি পিলারের গোড়াতে বাক্সের মধে্য বরফ দিয়ে বোতল ঠান্ডা করা হচ্ছে। হকাররা তা ট্রেনের কামরায় প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। কুম্ভ, কাঠগুদাম, বিভূতি, জামালপুর প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীরা অতিরিক্ত দাম দিয়ে জল কিনছেন। বাঘা যতীনের বাসিন্দা যাত্রী তরুণ বন্দে্যাপাধ্যায়ের আক্ষেপ, জলের বোতল বাড়ি থেকে বয়ে আনাটা যথেষ্ট কষ্টের। তাই যাত্রার সময় প্ল্যাটফর্ম থেকে জলের বোতল কেনার রেওয়াজ। কিন্তু এবার এই সমস্যা সতি্যই নিদারুণ কষ্টের। তবুও দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হলাম। বাধ্য হয়েই যাত্রীরা অতিরিক্ত দাম দিয়ে হকারদের থেকে জল কিনছেন। হকারদের কথায়, আরপিএফ থেকে নেতা আয়ের বেশিটাই তাদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। শুধু জলই নয়, কেটলিতে করে চা, কফিও বিক্রি করছে হকাররা। কটাক্ষ করে যাত্রীরা বলছেন, ডিজিটালাইজ হওয়ার নামে পুরনো আমলে ফিরে যাচ্ছে রেল। জলের জন্য ভিস্তির অপেক্ষা করতে হবে এবার। অভাবের সুযোগে পুরনো মিনারেল ওয়াটারের বোতলে জল বন্দি করেও বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হকারদের পাশাপাশি হাওড়া পুরনো ও নতুন স্টেশনে রেলের অথরাইজ রেস্তেরাঁগুলি প্ল্যাটফর্মে টেবিল পেতে জল বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করে আরপিএফ। কয়েকজন কর্মীকে আটকও করে।
[ভাতে মারল রেল, হাওড়া স্টেশনের ভেন্ডিং স্টলে বন্ধ খাবারের জোগান]
এনিয়ে রেল প্রশাসনের সঙ্গে রেস্তরাঁগুলির সংঘাতও প্রকাশ্যে আসে। এদিন ‘জন আহারের’ সামনে জল বিক্রি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীরা বলেন, ‘আরপিএফ হকারদের দিয়ে জল বিক্রি করাচ্ছে। আমরা তো অথরাইজ বিক্রি করতে ক্ষতি কী?’ যদিও রেস্তরাঁগুলি বাইরে জল এভাবে বিক্রি করতে পারে না বলে জানিয়েছেন আইআরসিটিসির গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র। যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের পকেট কাটা গেলেও রেলের কিছু যায় আসে না। তবে রেল কর্মীদের প্রশ্রয়ে হকারদের এই সীমাহীন দৌরাত্ম্যের জন্য সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ করা উচিত বলে তাঁদের দাবি।
হকারদের রমরমা প্ল্যাটফর্মে, দেখুন ভিডিও-