গৌতম ব্রহ্ম: দেশজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মাঝে অনেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বিস্তর। এমন সংকটের পরিস্থিতিতে কেন বিদেশ থেকে ফিরে করোনা পরীক্ষা এড়িয়ে গিয়ে, ঘুরে বেড়িয়েছেন সর্বত্র, এই প্রশ্নে জেরবার তাঁরা। তবে সবটাই এত হতাশাব্যঞ্জক নয়। এর মাঝে সিঙ্গাপুর ফেরত এক যুবক আদর্শ দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় দিলেন। দমদম বিমানবন্দরে নেমে তিনি নিজেই গেলেন শারীরিক পরীক্ষা করাতে। তাঁর এই ভূমিকাই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার রাত দু’টো। সিঙ্গাপুর থেকে দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন কলকাতার এক যুবক। শরীরে জ্বর নেই, সর্দি-কাশির মতো নোভেল করোনা ভাইরাসের উপসর্গও আপাতদৃষ্টিতে ধরা পড়েনি বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই যুবক দায়িত্বশীল নাগরিকের মতোই কাজ করলেন। বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সোজা চলে গেলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানে সমস্ত নিয়ম মেনে নিজের শারীরিক পরীক্ষা করানোর কথা বলেন চিকিৎসকদের। তাঁকে বসিয়ে সমস্ত পরীক্ষা করানো হয়। সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্টই ভাল বলে হাসপাতালের তরফে তাঁকে জানানো হয়। তাই ওই যুবককে ফিট সার্টিফিকেট দিয়ে ছেড়ে দেন বেলেঘাটা আইডি’র চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, কলকাতার প্রথম করোনা আক্রান্তের বাবার সদস্যপদ খারিজ করল IMA]
তারপরও বাস, অটো বা ট্যাক্সির মতো গণপরিবহণ ব্যবহার করেননি ওই যুবক। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তাই সংক্রমণের আশঙ্কায় তিনি অ্যাম্বুল্যান্সে চড়েই নিজের বাড়িতে ফেরেন। আবাসনের লোকজন তাঁকে দেখে প্রথমে ভীত হয়ে পড়েন। তখন তিনি সকলকে আশ্বাস দিয়ে জানান যে কোনও অসুখ হয়নি তাঁর। একেবারে নিরাপত্তার স্বার্থেই তিনি বিমানবন্দর থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে রীতিমত ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাতে আশ্বস্ত হন সকলে। যেখানে লন্ডন ফেরত দুই যুবক স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করিয়ে শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, নামী এক চিকিৎসকও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে একই কাজ করেছেন, সেখানে এই যুবকের সচেতনতা শিক্ষণীয় তো বটেই, দৃষ্টান্তমূলকও। সকলেই যদি এভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে হয়ত কলকাতায় করোনা সংক্রমণ এড়ানো যেত, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।