অভিরূপ দাস: “আঁচলে নয় দাদা, দিদিকে বডিতে চাই।” স্ত্রীর আবদারে চমকে যান সুধাকর চাকলাদার। দোকান মালিকের মুখে অমায়িক হাসি। মুচকি হেসে হাঁক পাড়েন, “কে আছিস, উপরের তাক থেকে দিদির বান্ডিলটা নামা।” চমকের তখনও বাকি। বারো হাত শাড়ির বান্ডিল জুড়ে হাজার হাজার মমতা। হালকা সবুজ রঙের শাড়িজুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর নানান অভিব্যক্তি। শাড়ির আঁচল থেকে ভিক্ট্রি সাইন দেখাচ্ছেন সিগনেচার স্টাইলে। এমন শাড়ি পেয়েই ব্যাগবন্দি করেছেন সুধাকরবাবুর স্ত্রী। জানিয়েছেন, দিদির ভক্ত তাঁর এক বান্ধবীই প্রথম এহেন শাড়ি কিনে চমকে দিয়েছেন। পয়লা বৈশাখে সেই শাড়ি পরেই হবে প্রভাতফেরি। একযাত্রায় পৃথক ফল কেন? তাই তিনিও মমতা শাড়ি কিনতে বেরিয়ে পড়েছেন।
[আরও পড়ুন: আরও শৌখিন অন্তর্বাস চান? ওয়ার্ডরোবে রাখুন ডেনিম প্যান্টি]
ইক্কত, বালুচরী, চান্দেরি নয়। এবারের পয়লা বৈশাখে হটকেক ঘাসফুল, পদ্মছাপ আর হাত-হাতুড়ি। বাংলা নববর্ষের আগে শহরের বেশিরভাগ শাড়ির দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়। শিয়রে নির্বাচন। ভোটের বাজার ধরতে চলে এসেছে ‘পার্টি শাড়ি।’ চলছে দেদার উপহার দেওয়াও। কট্টর কমিউনিস্ট ভাসুর, ভাইয়ের বউকে উপহার দিচ্ছেন লাল পতাকার কুচি। কেমন হচ্ছে বিক্রি? নিউ মার্কেটের শাড়ির দোকানের মালিক জানিয়েছেন, ভোটের মরশুম তায় বাংলা নববর্ষ। দুইয়ে মিলে বিক্রি জোরদার। সব দলেরই শাড়ি রয়েছে তাঁর ভাঁড়ারে। রাজ্যের সবচেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী মমতার। সেই হিসাবে মমতা শাড়ির চাহিদাই তুঙ্গে।
[আরও পড়ুন: কেমন হবে প্রার্থীর সাজ? প্রচারের মরশুমে টিপস দিলেন ডিজাইনাররা]
অন্যদিকে রয়েছে গেরুয়া রঙের নমো শাড়িও। বৈশাখী হাওয়ায় আঁচল উড়লেই চোখে পড়ছে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন মোদি। কতটা স্মার্ট এই ধরনের শাড়ি? বিজেপির জেন ওয়াই সমর্থক সুচেতা জানিয়েছেন, মিছিলে হাতে ঝান্ডা নিয়ে হাঁটতে হয়। এই ধরনের শাড়ি পরে হাঁটলে আলাদা করে ঝান্ডা হাতে নিতে হয় না। পার্টির সিম্বলের শাড়ি তাই অনেক বেশি হ্যাপেনিং। এতে যেমন দলের প্রচার হল আবার নতুন ডিজাইনের শাড়িও পরা হল। এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই সিপিআইএমও। তবে তাদের যেহেতু স্টার নেতা-নেত্রী তেমন নেই, তাই সিম্বলেই ভরসা রেখেছেন কাস্তে-হাতুড়ি তারার সমর্থকরা। প্রচারের স্টাইল বদলেছে সময়ের সঙ্গে। পয়লা বৈশাখে পাড়ায় পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলবে প্রচার। আর দলের শাড়ি পরে প্রচার করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউই। পার্টি শাড়ির দাম বারোশো ত্রিশ। দরদাম করলে সস্তায় মিলতে পারে মোদি শাড়ি, কাস্তে-হাতুড়ি আঁচল। কিন্তু মমতার দরদাম হবে না। এমন কেন? “বিক্রি বেশি দাদা। কি করব বলুন তো?” মুখ বাঁকান দোকানের মালিক নবীন ঈশানী।