রাজা দাস, বালুরঘাট: রাজ্যের উদ্যোগে তাঁত হাব চালু হতেই মন্দা কাটল গঙ্গারামপুর তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাঁতিদের। পুজোর আগে জোরকদমে চলছে শাড়ি তৈরির কাজ। আশ্বাস ও পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করায় তাঁতিরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন রাজ্য সরকারকে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে ঘরে ঘরে তাঁত শিল্প। এছাড়া এই জেলার বংশীহারী এবং তপন ব্লকের কিছু অংশে বহু মানুষ তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শুধুমাত্র গঙ্গারামপুরেই তাঁতের উপর নির্ভরশীল অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। একসময় এখানকার তাঁতের বেশ নামডাক ছড়িয়েছিল অন্য রাজ্যেও। কিন্তু পরবর্তীতে মিল এবং বাংলাদেশের তাঁত শাড়ির কাছে মুখ থুবড়ে পরে এখানকার তাঁত। সস্তায় বাজারে ছড়িয়ে পড়া ওই শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পেছনে পড়ে যায় এখানকার এই শিল্প। ফলে চাহিদা কমছিল জেলার তাঁতের। অত্যাধুনিক মানের যন্ত্র ও পরিকাঠামোর অভাব ছিল। বাজার মন্দা হওয়াতে অধিকাংশ শিল্পী ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। নতুন প্রজন্মও এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। ফলে একে একে বন্ধ হতে থাকে হাজার হাজার তাঁত কারখানা। দুই একটি কারখানা চলত দাদন প্রথার মাধ্যমে। নিজেদের দুর্দশার কথা বহুবার জেলা প্রশাসন থেকে সরকারের নজরে আনেন তাঁত শিল্পীরা। পরবর্তীতে জেলার তাঁত শিল্পীদের করুন অবস্থার কথা জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
[ আরও পড়ুন: এবার পুজোয় ট্রেন্ড রানু্ শাড়ি, আপনি কিনেছেন তো? ]
২০১৫ সালে তপনে এক সরকারী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে গঙ্গারামপুরে টেক্সটাইল হাব বা শিল্প তালুক করা হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। এরপরেই গঙ্গারামপুরের ঠ্যাঙ্গাপাড়া এলাকায় ২ একর জমিতে টেক্সটাইল হাব তৈরির জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। বছর তিনেক আগে কাজ শুরু হয়। তিতল বিশিষ্ট হাবটি উদ্বোধন হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে। এখানে শাড়ির সামগ্রী প্রদান, কারখানাগুলোর উৎপাদিত শাড়ি ক্রয় করা এবং বাজারজাত করার সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এবছর থেকেই গঙ্গারামপুর তথা জেলার তাঁত শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কারখানার উৎপাদিত শাড়ি ঠিকঠাক ভাবেই শিল্পী বা মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করছে কর্তৃপক্ষ।
গঙ্গারামপুরের তাঁতি তথা তাঁত কারখানার মালিক ঝুলন ভৌমিক, সান্ত্বনা ভৌমিক জানান, আগে হাটের উপড় নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরা। সেখানে দোকান মালিকরা কাপড় ক্রয় করত তাদের কাছ থেকে। মিল ও বাংলাদেশের শাড়ির সাথে পাল্লা দিতে তারা খুব কম দামে কাপড় বিক্রি করতে বাধ্য হতেন তাঁরা। আবার সব কাপড় কিনতেন না ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁত হাব তৈরি হওয়ার পরেই তাদের তৈরি করা সব কাপড় ক্রয় করে নেওয়া হচ্ছে তন্তু সমবায়ের মাধ্যমে। আবার প্রতি কাপড় প্রতি ৩৪০ টাকা করে নিদিষ্ট মূল্য দেওয়া হয় তাদের। এর জন্য কতৃপক্ষ একটা বিশেষ কোয়্যালিটির কাপড় চিহ্নিত করে দিয়েছে। তবে হাব থেকে যে সুতো দেওয়া হয় তার মান আরও একটু ভাল প্রয়োজন। তবে তাঁত হাব গড়ে উঠে তাদের সার্বিক উন্নতি হয়েছে। এখন আর বিক্রয় বাজারের অভাব নেই বলেই দাবি তাঁত শিল্পীদের।
[ আরও পড়ুন: হ্যান্ডলুমের দাপটে কোণঠাসা বালুচরি, পুজোর আগে মাথায় হাত শিল্পীদের ]
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান অর্পিতা ঘোষ বলেন, রাজ্য সরকারের মহতি উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গঙ্গারামপুরের পাশাপাশি জেলার তাঁত শিল্প। প্রচুর অর্ডার পাচ্ছ সেখানাকার কারখানাগুলো। উৎপাদিত সামগ্রী ক্রয় করা হচ্ছে। নতুন নতুন ডিজাইন দিয়ে কীভাবে শাড়ি তৈরি করা যায় তা দেখছে কতৃপক্ষ। তারা সব সময় এই তাঁতিদের পাশে রয়েছেন। তাঁত নিয়ে সমস্ত রকমের অসুবিধা সুবিধার কথা আমাদের এই তাঁত হাবের অফিসে এসে জানাবে তাঁতিরা। তাদের সমস্যার কথা শুনে সমাধান করা হবে।