সুমিত বিশ্বাস: করোনা কাঁটায় বন্ধ ছৌ পালা। মুখোশ কেনার ভিড়ও নেই। তাই আনলক থ্রি’তে দোকানের ঝাঁপ খুললেও খাঁ খাঁ করছে মুখোশ গ্রাম বলে প্রসিদ্ধ পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির চড়িদা। তাই রুটিরুজির জন্য মুখোশ-মাস্ক (Mask) বানিয়ে নজর কাড়ছে এই ছৌ মুখোশ গ্রাম। আর করোনা আবহে এই ছৌ’এর আদলে এই মুখোশ-মাস্ক সহজেই হয়ে উঠেছে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। একেবারে নজর কাড়ার মতো এসব মুখোশ-মাস্ক যাচ্ছে ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও।

কেমন সেই মুখোশ-মাস্ক? পুরুষ, মহিলার মুখের আদলে তৈরি মাস্কের আকৃতিতে তৈরি করা হচ্ছে মুখোশ। যেমন ভাবে কাগজ, কাপড় দিয়ে তৈরি হয় আসল ছৌ মুখোশ। সেই মুখোশেই পিছন থেকে মাস্কের কাপড় জুড়ে, তা কানের কাছে বা মাথার পিছনে বেঁধে নিতে হচ্ছে। এই মুখোশ-মাস্কের দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। মুখোশের পিছন থেকে মাস্ককে আলাদা করে তা প্রয়োজনমত পরিষ্কারও করে নেওয়া যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: শুধু শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতেই নয়, সুগন্ধীর অন্য চার ব্যবহার আপনাকে অবাক করবে]
আসলে মাস্ক তো আজকের জনজীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাই তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদার শিল্পীদের এমন ভাবনা। মুখোশ শিল্পী জগদীশ সূত্রধর বলছিলেন, “চৈত্র-বৈশাখ ছৌ পালার মুখোশ বিক্রির মরশুম। কিন্তু সেই সময় টানা লকডাউন থাকায় দোকানই বন্ধ ছিল। ওই মুখোশ বানাতে আগে থেকে আনা কাঁচামাল সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। আর এখন দোকান খুললেও মারণ রোগের সংক্রমণের ভয়ে পর্যটকরা আর পা রাখছেন না এখানে। ফলে রঙবাহারি মুখোশের বিক্রিবাটা একেবারেই নেই। তাই মুখোশ-মাস্ক নিয়ে কিছু করা যায় কি না, এই ভাবনাতেই মাস্ক বানিয়ে বাজারে নিয়ে আসি।”
[আরও পড়ুন: মাস্কের দাপটে ঠোঁট রাঙাতে পারছেন না? লিপস্টিকের অন্য ৫ ব্যবহার জানলে চমকে যাবেন]
লকডাউন রোজগারে কোপ বসালেও, মাস্কের হাত থেকে ফিরে এসেছেন মুখোশ শিল্পীরা। এখন চড়িদা গ্রামের বহু শিল্পীই এই মুখোশ-মাস্ক বানিয়ে এই কঠিন সময়ে আয়ের পথ সুনিশ্চিত করেছেন। আরেক শিল্পী জন্মেজয় সূত্রধরের মতে, “এই মুখোশ-মাস্ক ফ্যাশানেরও অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। শপিং মলগুলিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কয়েক দিন আগে আমরা এই মুখোশ-মাস্ক ঝাড়খণ্ডেও পাঠিয়েছি।” অনেকরকম মাস্কই হয়ত বাজারে মিলছে আজকাল, কিন্তু ঐতিহ্যের ছোঁয়া লাগা ছৌ-মাস্ক কিন্তু সত্যিই বিশেষ। সুরক্ষার সঙ্গে ফ্যাশনের একেবারে পারফেক্ট কম্বিনেশন।
ছবি: অমিত সিং দেও।