রিংকি দাস ভট্টাচার্য: সারা বছর আঁটিসাঁটি। কিন্তু এই দু’দিন! একেবারে নো রেস্ট্রিকশন! চিরাচরিত প্রথায় স্বাস্থ্য সচেতনতাকে গুলি মেরে বিজয়া দশমীর পেটপুজোয় গা ভাসাচ্ছে বাঙালি। বিশেষত মিষ্টির ক্ষেত্রে। শহরের নামী-অনামী দোকানে মিষ্টি কেনার ভিড় জানান দিচ্ছে চুলোয় যাক ‘সুগার-ফ্রি’ ব্যাপার-স্যাপার। মিষ্টিমুখেই হোক বিজয়ার শুভেচ্ছা।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র একই ছবি। দশমীর সকাল থেকে ভিড় মিষ্টির দোকানে। সরপুরিয়া, কাঁচাগোল্লা, জলভরার মতো ট্র্যাডিশনাল মিষ্টির পাশাপাশি বাজার মাতাচ্ছে বাটার স্কচ, পাইন অ্যাপেল, চকোলেট সন্দেশের মতো ফিউশন মিষ্টি। তবে সবকিছুকে টেক্কা দিয়েছে ঐতিহ্যের টান। উত্তর কলকাতার নলীন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্স-এর কর্মধার তপনকুমার দাসের কথায়, “বাঙালির সনাতন রসগোল্লা-সন্দেশের বাজার এখনও অপ্রতিরোধ্য। তবে নবীন প্রজন্ম এখন একটু ভ্যারাইটি খোঁজে। সে জন্যই আমরা উপস্থাপনের ধরনটা বদলে দিই।” যেমন- কেশর বাটারমিল্ক সন্দেশ। থাকছে বাবু নামের একটি নরম পাকের সন্দেশ। যার পেটে থাকছে খোয়ার ক্ষীর, কাজু পেস্তার পুর। আবার জলভরা সন্দেশের ভিতর গুড়ের বদলে মধু দিয়ে পরিবেশন করা হয়। তবে বিজয়ার বাজারে চন্দ্রপুলি, ছানার পায়েসের মতো সাবেকি মিষ্টির চল-ই বেশি বলে জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: পাত সাজাতে বিশেষ আয়োজন, দেবীদর্শনে গিয়ে পেটপুজো করুন এসব রেস্তরাঁয়]
২০০ বছরের পুরনো সূর্য মোদকের কর্ণধার শৈবালকুমার মোদকও জানিয়েছেন, দশমীতে সাবেক মিষ্টির চাহিদাই বেশি। তিনি বলেন, “আমাদের দোকানের জলভরার কদর সারা বছরের। তবে পুজোর সময় বিশেষ করে দশমীতে ‘কড়ি-গজার’ চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। পাল্লা দেয় মিহিদানা, সীতাভোগেও। পাতুরি, রসমাধুরীর মতো ফিউশন মিষ্টিও রাখি। তবে এই দিনটার জন্য লোকজন একটু ট্র্যাডিশনাল মিষ্টিই খোঁজে।” সন্দেশের জন্য বিখ্যাত ভীম নাগেও থাকছে অন্তত নানা মিষ্টির সম্ভার। সংস্থার কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বলছেন, “এবারের চমক বেকড কালাকাঁদ। থাকছে মিহিদানা দিয়ে তৈরি শঙ্খ সন্দেশ।” তবে ফিউশন মিষ্টির বাজারেও বিজয়ায় রাজভোগ-রসগোল্লার চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি। বালিগঞ্জের গুপ্তা ব্রাদার্সও দোকানে তাদের বিখ্যাত ‘আবার খাবো’ সন্দেশের বিক্রি থেকে বিন্দুমাত্র ফোকাস সরাতে চায় না। সংস্থার কর্ণধার কুকতেশ গুপ্তা জানাচ্ছেন, সারা বছর অন্য মিষ্টির বিক্রি হলেও পুজোর সময় গুড়ের সন্দেশের চাহিদা বাড়ে।
সাধ্যের মধ্যেই স্বাদ পূরণের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে ছোট-বড় সব মিষ্টির দোকানগুলো। দোকানে কুচো গজা, ছানার মুড়কি, বোঁদে দেখে উত্তর কলকাতার এক মিষ্টির দোকানের ক্রেতা বললেন, “এখানে এগুলো পাব আশা করিনি। এখন তো মিষ্টির দোকানগুলো এসব বানায় না। প্লেটে কুঁচো নিমকির সঙ্গে এই মিষ্টিগুলো না সাজালে কি আর বিজয়ার মিষ্টিমুখ সম্পূর্ণ হয়?’
[আরও পড়ুন: পুজোর ভোজে মিষ্টি মাস্ট, বিশেষ দিনের জন্য রইল ভিন্ন স্বাদের রেসিপি]
তবে ট্র্যাডিশনাল রসগোল্লা, মিহিদানা, কুচো নিমকি, পান্তুয়া, আইসক্রিম সন্দেশ, আবার খাবো, জলভরা তালশাঁস, অপরাজিতা, পারিজাতের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বিকিয়েছে সিল্ক ক্রাউন, স্ট্রবেরি কুম্ভ, মোগলাই অ্যাফেয়ার, চকোলেট মালাই রোলের মতো নতুন স্বাদের মিষ্টিও। নতুন না পুরনো? চিরন্তন এই লড়াই চলবেই। চলবে তর্কও। তবু বিজয়ার মিষ্টিমুখে বাঙালির কখনও অরুচি ধরবে না। এটা গ্যারান্টি করে বলাই যায়।