Advertisement
Advertisement

Breaking News

Eye

পুষ্টিকর খাবারেই বাড়বে দৃষ্টিশক্তি, চোখের যত্ন নিতে মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ

চোখে পাওয়ার এলে ছোটদের তিন মাস ও বড়দের এক বছর অন্তর চেকআপ প্রয়োজন।

According to doctor healthy foods can protect your eye। Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 15, 2023 1:50 pm
  • Updated:July 15, 2023 5:24 pm

ডা. সৌমি মল্লিক: সেই কবে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন ‘চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে…
কিন্তু চোখের সেই আলোটাই যদি নিভু নিভু হয়ে আসে, তবে বাইরেটা দেখবেন কী করে?

বিখ‌্যাত মার্কিন অভিনেতা রবার্ট ইউরিখ বলেছিলেন, ‘আ হেলদি আউটসাইট স্টার্টস ফর্ম দ্য ইনসাইড।’গোদা বাংলায় যার অর্থ- হৃদয়ের অন্তঃস্তল সুন্দর হলেই বাইরের পৃথিবীটাও মধুময় হয়। সেই কথাটাকেই একটু ঘুরিয়ে চিকিৎসকরা বলে থাকেন, আপনি যা দেখবেন, তা কতটা ভাল দেখবেন, সেটা নির্ভর করবে যে চোখ দিয়ে দেখছেন সেই চোখটা কতটা ঠিক রয়েছে তার উপরে। আর এই চোখের ঠিক থাকা নির্ভর করবে দু’বেলা পাকস্থলীতে কী যাচ্ছে, তার উপর।
সোজা কথায়, যেমনটা খাবেন, তেমনটাই দেখবেন!

Advertisement

সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, রাইস ব্র্যান তেল চোখ ভাল রাখার উপাদানগুলির প্রথম সারিতে রয়েছে ‘ওমেগা ৩’গোত্রীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। কিন্তু এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে তৈরি হয় না। বাইরের থেকে শরীরকে দিতে হয়। মূলত তিন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এএলএ (ALA), ডিএইচএ (DHA) এবং ইপিএ (EPA)। সামুদ্রিক মাছ যেমন- কড লিভার তেল, স্যামন, ম্যাকারেল প্রভৃতি এর উৎস। কখনও কখনও প্রয়োজনে চোখের চিকিৎসায় তাই কড লিভার অয়েলের সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। এছাড়া ফ্ল্যাক্স ও চিয়া সিডস, আখরোট, বিভিন্ন উদ্ভিদের নির্যাস থেকে তৈরি তেলে এগুলি রয়েছে। বিশেষত সয়াবিন ও রাইস ব্র্যান তেল ও ঘি চোখের জন্য উপকারী। এই খাবারগুলি এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডি-জেনারেশন ডিজিজ ও ড্রাই আই-এর সমস্যা প্রতিহত করতে কার্যকর।
মেনোপজের পর মহিলাদের ড্রাই আই-এর সমস্যা বাড়ে। তাঁদের সঠিক পরিমাণে কড লিভার তেল, চিয়া বীজ প্রভৃতি ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

Advertisement
হলুদ ক্যাপসিকাম প্রভৃতিতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে।

হলুদ রঙের ফল-সবজি
পর্যাপ্ত ভিটামিন এ কর্নিয়া সুস্থ রাখে। গাজর, পালংশাক, বিনস, মিষ্টি আলু, চিজ, সবুজ টাটকা শাকসবজি এবং হলুদ রঙের ফল ও সবজি যেমন পাকা আম, কুমড়ো, হলুদ ক্যাপসিকাম প্রভৃতিতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার চোখের রোডোপসিন (Rhodopsin) নামক পিগমেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। এটি চোখের রেটিনার রড সেল থেকে উৎপন্ন হয় ও আমাদের রাতে দেখতে সাহায্য করে। তাই ছোট থেকে সঠিক পরিমাণে ‘ভিটামিন এ’সমৃদ্ধ খাবার না খেলে রেটিনায় রোডোপসিন তৈরি হবে না। রাতকানা রোগ হতে পারে ও কর্নিয়া সাদা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট নিন

ভিটামিন ই হল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। অ্যাভোকাডো, কিউই, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও সবুজ শাকসবজি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হওয়ায় রোজের ডায়েটে রাখা উচিত। এটির অভাবে চোখের নার্ভ শুকিয়ে যাওয়া, এএমডি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা প্রতিহত করে ভিটামিন ই।

এছাড়া রয়েছে ভিটামিন সি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। কোলাজেন কর্নিয়া ও স্কেলেরা অর্থাৎ চোখের মণির বাইরের সাদা অংশে থাকে। ভিটামিন সি পাতিলেবু, কমলালেবু, ব্রকোলিতে রয়েছে। চোখের জন্য সূর্যের নীল রং ক্ষতিকারক। ভিটামিন সি এই নীলরঙকে ফিল্টার করে দেয় ও ছানি, এএমডি প্রতিহত করে।

এছাড়া ভিটামিন বি২-তে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায় চোখের ম্যাকুলা ও রেটিনাকে ফ্রি রেডিক্যালস ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। ওটস, দুধ, কর্নফ্লেক্স প্রভৃতি ভিটামিন বি টু সমৃদ্ধ খাবার। এছাড়া গ্লুকোমা রোগকে প্রতিহত করতে পারে ভিটামিন বি ৩। শিশুদের পারিবারিক সূত্রে গ্লকোমা হতে পারে। ভিটামিন বি ৩ সমৃদ্ধ খাবার খেলে যা কিছুটা বিলম্ব করানো যেতে পারে। ডিম, মাছ, মাশরুম ও চিনাবাদামে প্রচুর ভিটামিন বি ৩ পাওয়া যায়।

[আরও পড়ুন: রোগ থাকবে দূরে, শরীরে পড়বে না বয়সের ছাপ, ভরসা রাখুন আয়ুর্বেদে]

বাদাম বা পিনাট বাটার খান
চোখের জন্য জিঙ্ক ভীষণ উপকারী। কুমড়োর বীজ, পিনাট বাটার, চিনাবাদাম প্রভৃতিতে জিঙ্ক থাকে। এর প্রধান কাজ হল রেটিনায় ভিসুয়াল পিগমেন্ট তৈরি করা। শরীরে জিঙ্কের ঘাটতিতে রাতকানা রোগও হতে পারে।

পিনাট বাটারে থাকা জিঙ্ক চোখের জন্য ভীষণ উপকারী।

বাদের খাতায়

  • পাস্তা ও সাদা পাউরুটি চোখের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। এতে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরে প্রবেশ করে সুগারে পরিণত হয়ে ভেঙে সরাসরি ব্লাড সুগার লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি হতে পারে। তাই মাল্টি গ্রেন রুটি বা আটা-ময়দা বাজারে উপলব্ধ, সেটিই খাওয়া উচিত।
  •  প্রসেসড মিট সসেজ, সংরক্ষিত প্যাকেটজাত মাংসতে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম থাকায় ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে চোখে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি হয়।
  • যে কোনও ঠান্ডা পানীয় বা কোল্ড ড্রিংকস এড়িয়ে যেতে হবে।
  •  অতিরিক্ত মদ্যপান তাড়াতাড়ি চোখের ছানি ও ম্যাকুলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বেশি কফি খেলে চোখের প্রেশার বেড়ে গ্লকোমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চোখের কথা ভেবে রান্না ও খাওয়া
আমাদের রোজের রান্নায় রাইস ব্র্যান ও সয়াবিন তেল ব্যবহার করাই চোখের পক্ষে ভাল। শিশু খেতে শিখলে গাজর, ডিম ও অন্যান্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার একটু করে দিতে হবে। যাতে ছোট বয়স থেকে তাদের চোখের স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং বয়সকালে তাদের ছানি বা অন্যান্য সমস্যা একটু দেরিতে শুরু হয়। চোখে পাওয়ার এলে ছোটদের তিন মাস ও বড় হলে এক বছর অন্তর চেকআপ প্রয়োজন। স্ক্রিনটাইম অবশ্যই কম করা উচিত। রোদে বেরোলে সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচাতে সানগ্লাস পরা ও চোখের জলের ঝাপটা দেওয়া আবশ্যিক।

অধ্যাপক ডা. সৌমি মল্লিক
মেডিক্যাল কলেজের রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ
অপথালমোলজির চিকিৎসক।

[আরও পড়ুন: অবসাদ শুধু বড়দের নয়, শিশুমনেও থাবা বসাচ্ছে, দায় কার?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ