ছোটবেলা থেকেই দরকার এক্সারসাইজ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। বয়সকালে যা অনেক টেনশন থেকে আপনাকে দিতে পারে মুক্তি। বলছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা। জানাচ্ছেন প্রীতিকা দত্ত।
আমাদের রোজকার যাপনই বলে দিতে পারে বার্ধক্যে কতটা ভাল থাকতে পারি আমরা। কথাটা কিন্তু একটুও বাড়িয়ে বলছি না। এটাই সত্যি। এই যেমন ধরুন, কী খাচ্ছি, কতটা খাচ্ছি, কতটা কী পান করছি, ধূমপান করছি কি না ইত্যাদি প্রভৃতিই ঠিক করে দেয় বয়সকালে কেমন থাকব আমরা। শুধুমাত্র দৈহিক স্বাস্থ্যই নয়, এই অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে সাহায্য করে অনেকখানি। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিকতম গবেষণা অন্তত এমনটাই বলছে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত এক্সারসাইজ এবং পরিমিত আহারই দিতে পারে এই সমস্ত চিন্তা থেকে মুক্তি। অর্থাৎ বয়সকালে ভাল স্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে পেতে পারেন ভাল স্মৃতিশক্তিও।
এটা শুনে বলতেই পারেন, এ আর নতুন কী! সবাই জানে এসব কথা। ব্যায়াম এবং পরিমিত আহারের বিকল্প কিছু হয় না। একথা যুগ যুগ ধরে আমরা শুনে এসেছি। খাঁটি কথা। কিন্তু কখন, কীভাবে, কতটা ব্যায়াম করবেন বা খাবেন, সবটা জেনে রাখতে গেলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতেই হবে।
[ক্যানসারকে হার মানাবে দেশের এই তিন প্রজাতির চাল, দাবি গবেষকদের]
দরকার ডেলি ওয়ার্কআউট:
বয়সটা যখন তিরিশের কোঠায় তখন আমাদের অতটা মনে পড়ে না স্বাস্থ্যরক্ষার কথা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়তে থাকে, ইতিমধ্যেই কী কী ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই আগেভাগেই খবর রাখতে হবে শরীরের। সাইক্লিং, জগিং, সাধারণ স্ট্রেচিং বা কার্ডিও ভাসকুলার এক্সারসাইজ ছাড়াও গবেষকরা বলছেন, এটাই মোক্ষম সময় যখন আপনি ট্রাই করতে পারেন ওয়াটার অ্যারোবিক্স, জুম্বা, যোগাভ্যাসও। এছাড়াও রোজকার জীবনে রাখতে পারেন যেকোনও একটি খেলার অভ্যাসও। যেমন টেবিল টেনিস বা ব্যাডমিন্টন।
গবেষণা বলছে, একজন মানুষের যখন বয়স যখন ষাটের কোঠায় পৌঁছয়, তখনই তিনি আস্তে আস্তে ভুলতে বসেন অনেক কিছুই। স্মৃতি নষ্টের খেলাটা কিন্তু শুরু হয় তার অনেক আগে থেকেই। তাই সাধু সাবধান। চিকিৎসকরা বলছেন, স্মৃতি নষ্টের সঙ্গে সঙ্গে, রক্তচাপ, মধুমেহ এবং স্ট্রোকের মতো বড় সমস্যাকে কাছে ঘেঁষতে না দিতে চাইলে আগে ভাগেই এক্সারসাইজ করতে শুরু করে দিন। যার ফলে ফুসফুস থেকে শুরু করে ভাল ভাবে মাথার কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছবে। মুক্তি পাবেন চিন্তা থেকেও।
তবে এক্সারসাইজের নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। কারণ, দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনলেই কিন্তু অনেকটা সুবিধা মিলবে। কীরকম পরিবর্তন?
এই যেমন ধরুন, গাড়িতে অফিস না গিয়ে একটু পাবলিক ট্রান্সপোর্টর সাহায্য নিয়ে যাতায়াত করতে পারেন। এতে শুধু শরীর নয়, পরিবেশটাও বাঁচবে। সাঁতার কাটতে পারেন। গাছপালার শখ থাকলে বাড়িতে বাগানও তৈরি করতে পারেন। কারণ, তাতেও পরিশ্রম কম হয় না। একা এক্সারসাইজ না করতে চাইলে পাড়ায় একটি গ্রুপ বানিয়ে ফেলুন। বন্ধুদের মধ্যে কথাবার্তা চালাচালি করতে করতেও এক্সারসাইজ করতে আগ্রহও বাড়বে।
[দিনের কোন বিশেষ সময় প্রার্থনায় যা চাওয়া যায় তাই মেলে?]
খাদ্য তালিকায় মেডিটেরিয়ান টাচ:
‘কোনটা খাব বা কোনটা খাব না? কতটাই বা খাব?’ কঠিন প্রশ্ন। ঘরে ঘরে রক্তচাপ এবং মধুমেহর যুগে ১০০ শতাংশ মানুষই ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেন না। তাই চিকিৎসকদের সহজ সমাধান। এদেশের খাদ্যতালিকায় নয়। সুদূর গ্রিসের খাদ্যতালিকার দিকে একটু নজর দিন। আমেরিকার নতুন সমীক্ষা বলছে, এই প্রান্তের খাবারই হল ‘ডায়েট নম্বর ১’। গত চার বছর ধরে মার্কিন মুলুকের এক গোষ্ঠী প্রায় হাজার দুয়েক অ্যালঝাইমার্স রোগীকে এই গ্রিসের খাবারই খেতে দিয়েছিলেন। তাতে সাড়াও মিলেছে ভাল। তার পর থেকেই চিকিৎসকরা বলছেন, দেহ এবং মনের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে মেডিটেরিয়ান মন্ত্রেই আস্থা রাখতে পারেন সাধারণ মানুষ। কী কী ধরনের খাবার খেতে হবে ভাল থাকতে গেলে?
ডায়াটেশিয়ানরা বলছেন, রান্নায় বাড়ান অলিভ অয়েলের ব্যবহার। খাদ্যতালিকায় রাখুন গুড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। এই মেডিটেরিয়ান ডায়েটে কিন্তু বলে চিজ বা ঘি খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ নয়। তবে হ্যাঁ, মাত্রাতিরিক্ত কোনও জিনিসই ভাল নয়। তবে খাবারে কার্বোহাইড্রেট রাখা যাবে না কোনও ভাবেই। তাতে ভাত রুটিও ছেঁটে ফেলতে হতে পারে। সাদা চালের ভাত, ময়দার তৈরি খাবার না খাওয়াই ভাল। খাবারে রাখা যাবে না চিনির ছোঁয়া। বাজার থেকে কিনে কোনওরকম মিষ্টি খাওয়া কিন্তু এক্কেবারে চলবে না। বাড়ান সবুজ শাক সবজি খাওয়ার চল। গবেষকদের কথায়, এই তালিকা মেনে চলতে পারলেই কেল্লাফতে। আপনার মুশকিশ আসান হবে অনেকটা।
[সম্পর্কে জটিলতা এড়িয়ে যেতে শুরু থেকেই মেনে চলুন এই বিষয়গুলি]
মানসিক স্বাস্থ্য:
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে মার্কিন চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের শুরুতেই একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। আজকের দিনে কী কী কাজ আপনাকে করতেই হবে, তার সবকিছুই থাকবে এই তালিকায়। ঠিক যেমন অনেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডায়েরি মেনে চলেন, ঠিক তেমনই। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, মস্তিষ্কে হাওয়া দিতে যে কোনও বয়সেই এই নিয়ম মেনে চলা বেশ সুবিধাজনক। মাথায় বেশি চাপ না নিতে চাইলে মোবাইলে রিমাইন্ডারও সেট করে রাখতে পারেন। চিকিৎসকরা বলছেন, স্মৃতিশক্তি খুব ভাল এমন মানুষ খুব কম। যাঁরা মোবাইলের ফোনবুকে নম্বর সেভ করার সময় বা শুনে শুনে মনে রাখতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরও কমতে থাতে স্মৃতি। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, বয়সকালে ভাল থাকতে এক্সারসাইজ ও মেডিটেরিয়ান ডায়েটের জুড়ি নেই।
[আধার কার্ড হারিয়েছেন? জেনে নিন কীভাবে সহজেই পাবেন নতুনটি]