ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: পঞ্চাশটি ময়নাতদন্ত। তাতেই অনেকটাই বদলে যেতে পারে করোনা চিকিৎসার প্রোটোকল। ইটালিতে কোভিড-১৯ (Covid-19) আক্রান্ত পঞ্চাশটি মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে বিশেষজ্ঞরা জেনেছেন, তাঁদের মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া নয়। ফুসফুসের ধমনীর তীব্র প্রদাহ বা জ্বালার ফলে রক্ত জমাট বেঁধেই ওঁদের মৃত্যু হয়েছে।
যার প্রেক্ষিতে গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, কোভিড রোগীদের দ্রুত সুস্থ করতে ভেন্টিলেশন বা আইসিইউতে পাঠানোর বিশেষ প্রয়োজন নেই। বরং রক্ত পাতলা করার দাওয়াই দিয়েই সংকটের মোকাবিলা সম্ভব। আক্রান্তকে বাড়িতে রেখে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চিকিৎসার উপর তাঁরা জোর দিচ্ছেন। অর্থাৎ নতুন প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করলে করোনা রোগীও দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে আরও এমন পরীক্ষা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ওয়েবপ্ল্যাটফর্মে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।
[আরও পড়ুন: করোনা চিকিৎসায় আলো দেখাতে পারে ফ্যামোটিডিন অ্যান্টাসিড! দাবি বিশেষজ্ঞদের ]
বস্তুত, বিশ্বজুড়ে করোনাতঙ্কের আবহে ইটালির প্যাথোলজিস্টদের এই পর্যবেক্ষণ নতুন দিশা খুলে দিল বলে মনে করছেন তাবড় গবেষকরা। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠীর প্রতিক্রিয়া, ‘নতুন পদ্ধতি সঠিক প্রমাণিত হলে চিকিৎসকদের উদ্বেগ অনেকটা কমবে। আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনে পাঠানোর প্রয়োজনটা কমবে। নিঃসন্দেহে কোভিড চিকিৎসার নতুন দিগন্ত খুলে যেতে চলেছে।’ একই বক্তব্য চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসেরও। তাঁর কথায়, ‘ময়নাতদন্ত করলেই বোঝা যাবে করোনা ভাইরাস শরীরের কোন অংশে কতটা সক্রিয় ছিল। প্রদাহ কমাতে থাইরয়েড ইঞ্জেকশন ভাল ফল দেয়।’
প্যাথোলজিক্যাল নির্ণয়ে দফায় দফায় ভ্রান্তির দরুণ বিশ্বে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় ইটালির প্যাথোলজিস্টদের স্পষ্ট দাবি, ৫০টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার সময় করোনা ভাইরাস ফুসফুসের ধমনীতে প্রবেশ করেছিল অক্সিজেনের সঙ্গে। ফলে ফুসফুসে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়েছিল। এবং ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বোসিস ডেকে আনে, যার পরিণতি মৃত্যু।
ইটালির পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের অভিমত, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। নিউমোনিয়াজনিত কিছু নয়। হৃদযন্ত্রের তীব্র প্রদাহের ফলে রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসকেই বিকল করে দিচ্ছে। কারণ, রক্ত জমাট বাঁধায় কোষগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়। হৃদরোগ বা হৃদযন্ত্রের অন্যান্য গোলযোগ। এমনকী, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই চিকিৎসা প্রোটোকল পরিবর্তন করে ফুসফুসের প্রদাহ কমানোর পক্ষপাতী বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমালেই রোগীকে সুস্থ করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, চিনেও বেশ কিছুর রোগীর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে একই সিদ্ধান্তে উপনীত করেছেন প্যাথোলজিস্টরা।
[আরও পড়ুন: আইসক্রিম খেলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়? কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?]
চিকিৎসকদের কারও কারও অভিমত, করোনা রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, অনেকের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বদলে হার্টের ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা সৃষ্টি হয়ে বিপত্তি ডেকে আনছে। তাই আইসিইউয়ে রোগীকে রেখে অহেতুক অর্থ অপচয়ের দরকার নেই। রক্ত পাতলা করার ওষুধই কাজ করবে। উল্লেখ্য, মার্চ মাস পর্যন্ত চিনে করোনা রোগীদের রক্ত পাতলা করার কোনও ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল না। এখন চিনের মতো ইটালিতেও অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্লাড থিনার দিয়ে আশাতীত ফল মিলছে বলে দাবি। হৃদযন্ত্রে রক্ত জমাট না বাঁধায় প্রদাহ কমছে, কোভিড আক্রান্ত দ্রুত সুস্থ হচ্ছে। আর এই ঘটনাই বদলে দিতে পারে করোনা রোগীকে সুস্থ করার নয়া প্রোটোকল।