ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: স্কুল-কলেজের দরজা খুলছে দেড় বছর পরে। চিন্তিত অভিভাবকরা। চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ। আঠারো বছরের নিচে টিকাকরণই যে শুরু হয়নি।
এমতাবস্থায় অসুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা।
হাঁপানি, ডায়াবেটিস অথবা হার্টের অসুখ রয়েছে অনেকেরই। এমন অবস্থায় করোনার (Coronavirus) তৃতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে তাদের স্কুলে না পাঠানোরই নিদান দিচ্ছেন স্টেথোধারীরা। বিশিষ্ট চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বয়স্ক এবং কোমর্বিডিটি আছে এমন লোকেদের জন্যেই ভয়ংকর সার্স কোভ ২। এই কোমর্বিডিটির তালিকায় রয়েছে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের রোগীরা। রাজ্যের অগুনতি কিশোর-কিশোরী আনুষঙ্গিক অসুস্থতা, যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যা, হার্টের জন্মগত ত্রুটি, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত। ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। আপাতত তাদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোই শ্রেয়।”
ভয় অন্য জায়গাতেও। পুজোর পরে একটু একটু করে ফের বাড়তে শুরু করেছে কোভিডের (COVID-19) সংক্রমণ। স্কুল খোলার আগে তাই আগামী ১০ দিনের সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির দিকে চোখ রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঠিক করেছে আপাতত, নবম থেকে দ্বাদশ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে। স্কুলের প্রিন্সিপালরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দেবে তা মেনে স্কুল খুলতে তাঁরা তৈরি। CBSE বোর্ডের গ্রিফিনস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ শর্বরী ব্রহ্ম জানিয়েছেন, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। ক্লাসে মাস্ক, স্যানিটাইজার, শারীরিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক। যে কারণে সকলকে একসঙ্গে স্কুলে আনার পক্ষপাতী নন তাঁরা।
এ কে ঘোষ মেমোরিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ তুহিন গুহ জানিয়েছেন, একেকটি বিভাগে ষাট জন করে ছাত্র-ছাত্রী। ত্রিশজন করে এনে সপ্তাহে তিনদিন করে ক্লাস করার পরিকল্পনা চলছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরাও এমনটাই চাইছেন। চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, নানা এলাকা থেকে স্কুলে আসবে কিশোর-কিশোরীরা। শহর কলকাতার একাধিক ওয়ার্ডে সংক্রমণ বাড়ছে মারাত্মক আকারে। ফলে স্কুলে শারীরিক দূরত্ব মানতেই হবে। সে কথা পাখিপড়ার মতো করে ছোটদের শিখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অভিভাবক আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
শুধু স্কুল-কলেজ নয়, যাতায়াতের পরিবহণের মাধ্যমকেও নজরে রেখেছেন চিকিৎসকরা। ডা. অপূর্ব ঘোষের সতর্কবার্তা, যে বাসে করে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যাবে সে বাসের চালক, হেল্পারকে অবশ্যই টিকার দু’টি ডোজ নিয়ে রাখতে হবে। ভিড় বাস, ট্রেন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না ছোটদের টিকা শুরু হচ্ছে ততক্ষণ আশঙ্কা কাটবে না। কবে শুরু হবে সেই টিকাকরণ? রাজ্যের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ফ্যাসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার জানিয়েছেন, ছোটদের টিকা হিসেবে জাইডাস ক্যাডিলার জাইকোভ ডি এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। আপাতত দাম নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। সরকারি ক্ষেত্রে বিনামূল্যে মিললেও বেসরকারিতে দাম কত হবে তা নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্রের খবর তিন ডোজের জাইকোভ ডি-র দাম হতে পারে ১,৯০০ টাকা। দু’ডোজের কোভ্যাকসিনের দাম হবে ১,৪১০ টাকা। চিকিৎসকদের মতে, পঠন-পাঠন চালু করতেই হবে। দ্রুত ছোটদের টিকাকরণ হয়ে গেলে অনেকটা নিশ্চিন্ত। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ হলেও তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.