সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা। চড়া রোদে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম হলকায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এই গরমে সুস্থ থাকবেন কীভাবে? জানালেন জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. পল্লব কুমার দাস।
সকাল হলেই আতঙ্ক বাড়ছে। আবার সেই গরম। আবার সেই রোদের সঙ্গে লড়াই করে কাজে বেরতে হবে। বাড়ি থেকে রাস্তায় নামতে গেলে মনটা পিছু হাঁটে বারবার। ন’টা-দশটায় সূর্যের তেজ শুষে নিচ্ছে জীবনটাকে। বেলা বারোটার রোদ মাথায় করে রাস্তায় হাঁটছেন যাঁরা তদের ঝলসানো মুখের দিকে তাকাতেও ভয় লাগে। ধুঁকতে ধুঁকতে ছেলেমেয়ে গুলো দুপুরে যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে তখন বেশিরভাগেরই ডিহাইড্রেশন দশা।
এপ্রিলের শেষ লগ্নে রোজই ফুলদমে ছক্কা হাঁকাচ্ছে গরম। প্রায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নাজেহাল জনজীবন। ডিহাইড্রেশন, সর্দিগর্মি, ডায়েরিয়া, ত্বকের জ্বলুনির সমস্যায় জেরবার সবাই। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আগামিদিনে আরও বাড়বে তাপপ্রবাহ। কীভাবে বাঁচবেন গ্রীষ্মের প্রখর তেজ থেকে?
জল বেশি খান
একজন সুস্থ মানুষকে রোজ অন্তত তিন-চার লিটার জল পান করতে হবে। কিডনি বা অন্য কোনও অসুখের কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল পান করতে হয় যাঁদের, তাঁদের অবশ্য বেশি জল পান করা চলবে না।
রাস্তায় বেরিয়ে কোল্ড ড্রিংক্স বা প্যাকেটজাত লস্যি না খেয়ে ডাবের জল খান।
কী কী খাবেন
শশা, টক দই, রায়তা, কাঁচা পিঁয়াজ রোজ পাতে রাখুন। পাতলা ডাল, মাছের ঝোল খান। আমের ঘন চাটনির বদলে আমের ঝোল খেতে পারেন। মশলাদার নয়, সহজপাচ্য খাবার খান। এমন মেনু ঠিক করুন যার মাধ্যমে জলীয় অংশ শরীরে যায়l তরমুজ, জামরুল ও জলীয় পরিমাণ বেশি এমন টাটকা ফল খান। রাস্তা থেকে কখনওই কাটা ফল খাবেন না।
ডায়েরিয়া হলে
শরীর গরম হয়ে গেলে এই সময় পেট খারাপ হতে পারে। যা ডায়েরিয়ার চেহারা নেয়। এমন হলে শরীরে জলের ব্যালান্স করা জরুরি। এর জন্য ওআরএস অব্যর্থ। বারবার ওআরএসের জল পান করুন। তবে হাই ব্লাড সুগার ও হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী হলে বেশি ওআরএস চলবে না।
ডিহাইড্রেশনে ওআরএস
ওআরএসের জল খান। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। খেয়াল রাখুন কতবার প্রস্রাব হল, তার রং কেমন। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গিয়ে ডিহাইড্রেশন হলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। গাঢ় রঙের প্রস্রাব হয়। ঘণ্টা চারেক প্রস্রাব না হওয়া ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। ডিহাইড্রেশন কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে ডাক্তারের কাছে যান। পেটে ইনফেকশনের কারণেও ডায়েরিয়া হয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। সেক্ষেত্রেও ডাক্তারই একমাত্র চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ করতে পারেন।
ঠান্ডা লাগা থেকে সাবধান
গরমে নাকাল অবস্থা থেকে বাঁচতে অনেকেই রাস্তা থেকে অফিস বা বাড়ি ঢুকেই এসি চালিয়ে দেন। আবার দুম করে এসি ঘর থেকে বেরিয়ে যান। এই করতে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যায়। তাই আগে ঘাম মুছে নিয়ে পাখার তলায় দাঁড়িয়ে ঘাম শুকিয়ে নিন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খানিকক্ষণ থাকার পর এসি ঘরে ঢুকুন সরাসরি ফ্রিজের ঠান্ডা জল পান করবেন না। তার বদলে মাটির কলসি, কুঁজোর জল খান।
তাপ আটকে ঘর ঠান্ডা রাখুন
রোদের তেজ বাড়ার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। ভারী পর্দা জানালায় লাগানো থাকলে ঘর অনেকটা ঠান্ডা থাকে। এছাড়া পুরনো দিনের খসখসের মতো দরজা-জানলায় ভিজে কাপড় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। এতেও ঘর ঠান্ডা হবে। আরাম মিলবে। ঘরে এসি থাকলেও সেখানে সব সময় থাকা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রেও এই উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
কুল ড্রেস, লাগবে ফ্রেশ
রাস্তায় বেরিয়ে কাজ করতে হলে পকেটে রুমাল রাখুন। মাঝে মাঝে তা জলে ভিজিয়ে চোখ-মুখ মুছে নিন। আরাম মিলবে। রোদের তাপ গায়ে যেন সরাসরি না লাগে। তার জন্য গা-ঢাকা ঢলঢলে সুতির পোশাক পরুন। এতে সান বার্ন হয়ে ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করা যাবে। সাদা বা হালকা রঙের জামা পরলে গরম কম লাগবে।
ছোটদের গরম দাওয়াই
বড়দের মতোই বাচ্চাদেরও বেশি করে জল পান করতে হবে। স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে বানানো ফলের রস, দইয়ের ঘোল দিন। কেনা ঠান্ডা পানীয় বা প্যাকেটজাত পানীয় একদম নয়। বাড়ি ফিরেই এসি ঘরে ঢোকা চলবে না। রুমাল ভিজিয়ে চোখ-মুখ মুছে দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.