অভিরূপ দাস: “কেন আমাকে ভোট দেবেন?” দশ মিনিটে তার ব্যাখ্যা দিয়ে নেমে যান মঞ্চ থেকে। ভোটপ্রার্থী নেতা মন্ত্রীদের উদ্দেশে চিকিৎসকদের পরামর্শ, অল্প কথায় উন্নয়নের বৃত্তান্ত শুনিয়ে, বক্তৃতায় দাঁড়ি টেনে দেওয়াই শ্রেয়। তাতে শরীর চাঙ্গা থাকবে নিজেরও। এবং শ্রোতাদেরও। অসহ্য গরমে ঘামতে ঘামতে যাঁরা নেতার ভাষণ শুনতে এসেছেন, তাঁরাও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ঠান্ডা হতে পারবেন। গনগনে সূর্যের আঁচ ঝলসে দিচ্ছে ত্বক। ভেজা গলা মুহূর্তে শুকিয়ে খটখটে কাঠের মতো। তবু নিস্তার নেই। ঠায় বসে শুনতে হচ্ছে বক্তৃতা। মঞ্চে নেতার অবস্থাও তথৈবচ। ঘামতে ঘামতে গায়ের জামা লেপটে গিয়েছে শরীরে সঙ্গে। শুকনো ঠোঁটেই শোনাচ্ছেন উন্নয়নের ফিরিস্তি! এমন অবস্থা নেতা-শ্রোতা দু’জনের পক্ষেই মারাত্মক হতে পারে। ঘন্টার পর ঘন্টা সভায় বসে ঘাম বেরিয়ে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা। অত্যধিক গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোকও। এর থেকে বাঁচতে চিকিৎসকদের নিদান, “অযথা দীর্ঘায়িত সভা নয়, বক্তব্য করতে হবে সংক্ষিপ্ত। বিষয়বস্তু হতে হবে নির্দিষ্ট এবং যতটা সম্ভব ছোট।” এক ঘণ্টার মধ্যেই সভা শেষ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: শরীরেই রয়েছে ‘এসি’, চালানো শিখে নিন]
প্রার্থীর সঙ্গে এলাকার মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে একের পর এক সভা বসছে গ্রামাঞ্চলে। দেখা যায়, প্রার্থী মঞ্চে ওঠার আগে পাঁচ নেতা বক্তব্য রাখেন। এর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। মূল বক্তব্য শোনার আগেই ঘেমে নেয়ে একশা শ্রোতারা। এই সমস্ত বাড়তি অনুষ্ঠান কাটছাট করলে সমর্থকদের মঙ্গল হবে বলেই নিদান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, “অকারণে অনুষ্ঠান দীর্ঘায়িত না করাই ভাল। এই আবহাওয়ায় শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অল্প কথায় প্রার্থী বক্তব্য রাখুক। এতে সমর্থক, নেতা উভয়েরই শরীর ভাল থাকবে।” এর জন্য আগে থেকেই বক্তব্য সাজিয়ে নিতে বলছেন চিকিৎসকরা। মঞ্চে উঠে তাহলে আর আমতা আমতা করতে হবে না। একেক জায়গার গরম এক একরকম। রাঢ় বাংলার শুকনো গরমে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। ডা. সুদীপ্ত চন্দ্র জানিয়েছেন, সাধারণত বৈশাখের এই সময়টায় হাফ লিটার ঘাম বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। কিন্তু আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে, অথবা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সভায় এলে এক লিটার ঘাম বেরিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এতে শরীর জলশূন্য হয়ে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে। ঘাম হলে শরীরের অতিরিক্ত জল এবং নুন বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা নেমে যায়।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ঘামের সঙ্গে যেহেতু সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট বেরিয়ে যায় তাই শরীর দুর্বল ও অস্থির হয়ে যায়। এমন অবস্থায় জলের সঙ্গে নুন, চিনি, পাতিলেবু মিশিয়ে শরবত খেলে ভাল হয়। গরমে দইয়ের ঘোল ও ডাব খেতে পারেন। কিন্তু ভুলেও বরফ দেওয়া পানীয় অথবা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া উচিৎ নয়। ডা. বিশ্বাসের কথায়, অনেকেই জানেন না, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে আরও বেশি জল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত মশলাদার খাবারকেও তালিকা থেকে বাদ দিতে বলেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ভোটে গরম মোকাবিলায় পান্তা ‘প্রেসক্রিপশন’ ডাক্তারদের]
একঝলকে চোখ বুলিয়ে নিন ডাক্তারদের পরামর্শে:
১) অযথা বক্তব্য দীর্ঘায়িত নয়। অল্প কথায় জনগণকে বলুন কেন আপনাকে ভোট দেওয়া উচিত।
২) অসহ্য গরমে বসে থাকতে হয় শ্রোতাদের। সময় বাঁচালে শরীর তরতাজা থাকবে।
৩) টুপি, জলের বোতল নিয়ে সভায় যেতে বলছেন চিকিৎসকরা।
৪) কোনও ভাবেই বরফ দেওয়া পানীয় অথবা, কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া যাবে না।
৫) সম্ভব হলে কোনও গাছের তলায়, অথবা ছাউনির তলায় বসে বক্তব্য শুনুন।
৬) মাঝেমধ্যে মুখে জলের ছিটে দিতে হবে। এতে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা কমবে।
৭) নূন্যতম তিন লিটার জল খেতে হবে।
৮) হাঁটার অভ্যেস না থাকলে ১ কিলোমিটারের বেশি হাঁটবেন না।