গৌতম ব্রহ্ম: ‘আয়না বসায়া দে মোর কলবের ভিতর’। মুর্শিদি গানটা যদি একটু এডিট করা যায়? ‘আয়না’ হয় ‘এসি’? ভেবেই জুড়িয়ে যাচ্ছে তো শরীর? ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল অনুভূতিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে শরীর মন?
শুধু অনুভূতি-উপলব্ধির কথা নয়। ভারতীয় যোগীরা এমন এক প্রাণায়ম জানেন যা শরীরের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে ফেলতে সক্ষম। মনে হবে, ‘কলব’ অর্থাৎ শরীরের ভিতর যেন শীতাতপ যন্ত্র চলছে।
চাঁদিফাটা গরমের মোকাবিলায় যোগ বিশেষজ্ঞরা এই বিশেষ ‘শীতলি’ প্রাণায়মই প্রেসক্রাইব করছেন। চিড়িয়া মোড়ের একটি যোগা-লাইফস্টাইল ক্লাবে আজ, শুক্রবার ‘ক্যান্ডল লাইট মেডিটেশন’ (ত্রাটক) নিয়ে শিবির হচ্ছে। সেখানেও এই শীতলি প্রাণায়ম অভ্যাস করানো হবে। দলে দলে মানুষ নাম লেখাচ্ছেন। দাবি উদ্যোক্তাদের।
‘শীতলি’। শরীর শীতল করা হয় বলে প্রাণায়ামের এহেন নামকরণ। রাজ্য যোগ-ন্যাচারোপ্যাথি কাউন্সিলের সভাপতি ডা. তুষার শীল জানিয়েছেন, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এর জুড়ি নেই। পদ্মাসন, বজ্রাসন বা যে কোনও ধ্যানাসনে বসে করা যায়। হাঁটুতে ব্যথা বা পায়ে সমস্যা থাকলে চেয়ারে বসেও করা যেতে পারে প্রাণায়মটি।
[ আরও পড়ুন: প্রবল গরমেও ঘামছেন না? আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মারাত্মক বিপদ ]
প্রথমে শরীরকে শিথিল করতে হবে। তারপর ঈষৎ মুখ খুলে জিভটা পাখির ঠোঁটের মতো করে বের করে ধীরে ধীরে শ্বাসগ্রহণ। ঢোক গিলে ফের নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। এমনটাই জানিয়েছেন পুণের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ন্যাচারোপ্যাথি’-র চিকিৎসক ডা. শাহ আলম। তাঁর প্রেসক্রিপশন, প্রাণায়মের সময় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কল্পনা করতে হবে, আপনার শরীরের উষ্ণতা মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এমন ১৫-২০ বার করতে হবে। শাহ আলমের দাবি, চার-পাঁচ মিনিট করলে শরীরের অন্দরমহলের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমবে। মন জুড়োবে শীতল আমেজে। শেষে অবশ্যই ২০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। আর প্রচুর জল খেতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় ঘাড়ে ‘কোল্ড কম্প্রেসন’ নিতে হবে।
তবে সতর্কবার্তাও আছে। যাঁদের শ্লেষ্মার ধাত আছে, ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয় কিংবা হার্ট ব্লক রয়েছে তাঁদের এই প্রাণায়ম না করাই ভাল। প্রচুর ধুলোবালি রয়েছে, এমন জায়গাতেও এই প্রাণায়াম করা যাবে না। এমনটাই জানিয়েছেন যোগ বিশেষজ্ঞ শুভব্রত ভট্টাচার্য। বললেন, ভয়ংকর গরম পড়েছে বাংলায়। ৮ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি হয়েছে। হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তিসূচক। এই পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর ঠান্ডা রাখার অব্যর্থ উপায় হল শীতলি। শুধু শরীরের গরমই নয়, মানসিক উৎকণ্ঠা কমবে। চঞ্চলতা প্রশমিত হবে। গবেষণায় প্রমাণিত, উৎকণ্ঠা বাড়লে ‘বিটা ব্রেন ওয়েভ’ বাড়ে। শীতলি এই বিটা ওয়েভ লক্ষ্যণীয়ভাবে কমিয়ে দেয়। ফলে, শরীর ঠান্ডা হয়। তাছাড়া এই প্রাণায়ম রক্তচাপে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। লিভারের সক্রিয়তা বাড়িয়ে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ধূমপানে আসক্তিও কমায়। পর্যবেক্ষণ যোগ বিশেষজ্ঞদের।
গত সপ্তাহে নরেন্দ্রপুরে একটি শিবিরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার অফিসারদের ‘শীতলি’ অভ্যাস করিয়েছেন যোগ বিশেষজ্ঞ তথা কাউন্সিল সদস্য উজ্জ্বল ঘোষ। ডালহৌসির একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীরাও এখন শীতলি করছেন। ১৬ জুন বারুইপুরেও এই প্রাণায়ম শেখাবেন উজ্জ্বলবাবু। আজ শুভব্রতবাবুরা তাঁদের চিড়িয়া মোড়ের হেলথ ক্লাবে ‘শীতলি’ অভ্যাস করাবেন।
[ আরও পড়ুন: খেয়ে তৃপ্তি মানেই শরীরে পুষ্টি নয়, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? ]