Advertisement
Advertisement

Breaking News

প্রন পজিশন

করোনায় স্বস্তি দেবে ‘প্রন পজিশন’, চিকিৎসায় সিলমোহর কেন্দ্রের

রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে CCU-এ পাঠানোর আগে এই উপায়ে অক্সিজেন দিতে হবে, জানাল কেন্দ্র।

Prawn position of a patient suffering from breathing trouble is useful for corona treatment
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:June 14, 2020 10:38 am
  • Updated:June 14, 2020 10:44 am

গৌতম ব্রহ্ম: সোজাসুজিতে কাজ হবে না। উলটোতেই লুকিয়ে বিপন্মুক্তির দিশা। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে করোনা আক্রান্ত রোগীকে দুম করে CCU-তে না পাঠিয়ে সেই ‘অ্যাওয়েক প্রন পজিশনে’ রেখে, মানে জাগ্রত অবস্থায় উপুড় করে শুইয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। হয়তো তাতেই কেটে যাবে বিপদ। COVID চিকিৎসার নয়া গাইডলাইনে এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

COVID আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়াটা অন্যতম উপসর্গ। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক চিকিৎসকই রোগীকে তড়িঘড়ি CCUয়ে পাঠাতে চান। অবস্থা আরও খারাপ হলে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট। অনেক সময়ে অনেক জায়গায় এ সবের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকে না। তাই এবার ওই নিয়মে বদল আনল কেন্দ্র।

Advertisement

[আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু পেরল ৯০০০-এর গণ্ডি, বিশ্বের নবম স্থানে উঠে এল ভারত]

শনিবার প্রকাশিত ‘ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল’-এ বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে প্রথম ‘প্রন পজিশন’-এ রেখে অক্সিজেন দিতে হবে। তাতে কাজ না হলে তখন CCUয়ের কথা ভাবতে হবে। বস্তুত, সংক্রমণের যা বাড়বাড়ন্ত, তাতে জুলাইয়ের শেষে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দশ রাজ্যে CCU বেড ও ভেন্টিলেশন সম্ভাব্য হাহাকারের ইঙ্গিত উঠে এসেছে সর্বভারতীয় সমীক্ষায়। তারপরই ‘প্রন পজিশন’ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের গাইডলাইন। ফলে অনেকের কপালেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তবে কি সমীক্ষার পূর্বাভাস সত্যি হতে চলেছে?

Advertisement

Prawn-position1

পূর্বাভাস কতটা মিলবে, সময়ই বলবে। কিন্তু ‘প্রন পজিশন’ যে COVID যুদ্ধে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন শহরের সিসিইউ বিশেষজ্ঞরা। টালিগঞ্জের এমআর বাঙুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকিৎসায় প্রথম থেকেই তাঁরা প্রন পজিশন ব্যবহার করছেন। ফলও মিলেছে ভাল। কিছুক্ষণের মধ্যে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯০ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে। একই অভিজ্ঞতা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেরও। এখানকার করোনাযুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি তথা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগিরাজ রায় জানিয়েছেন, “এই অ্যানাটমিক্যাল পজিশন দারুণ কার্যকর। আমরা অনেকদিন ধরেই রোগীদের উপর প্রয়োগ করছি। তবে ‘হাই ফ্লো’ অক্সিজেন থেকে ‘লো ফ্লো’-তে যাচ্ছি।’’

একই রকম অভিজ্ঞতা ফরাসি গবেষকদের। তাঁরা দেখেছেন, শ্বাসকষ্টে খাবি খেতে থাকা রোগীকে উপুড় করে শোয়ানোর পরে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এক লাফে ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। সাত বছর আগে প্রকাশিত ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ এমনটাই জানানো হয়েছিল।

[আরও পড়ুন: করোনা আবহেই ডেঙ্গুর আতঙ্ক, নমুনা পরীক্ষার জন্য বাড়তি পরিকাঠামোর ব্যবস্থা রাজ্যের]

শহরের চিকিৎসকদের বড় অংশের মতে, ভেন্টিলেটর-সহ পরিকাঠামোর অভাবজনিত প্রতিকূলতায় এই ‘প্রন পজিশন’ টেকনিক করোনা-যুদ্ধে ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। তাঁদেরও বক্তব্য, শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কোভিড রোগীকে দুম করে সিসিইউয়ে না দেওয়াই ভাল। বরং আগে প্রন পজিশনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এমনকী, ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পরও রোগীর উপর এই বিদ্যে প্রয়োগ করা উচিত। সম্প্রতি আমেরিকায় COVID পজিটিভ এক বছর চল্লিশের যুবকের প্রাণ বাঁচিয়েছে প্রন পজিশন। প্রায় মরোমরো যুবকটি কার্যত শ্বাসই নিতে পারছিলেন না। রক্তে দ্রুত কমছিল অক্সিজেনের মাত্রা। তাঁকে উপুড় করিয়ে শোয়ানোর পরামর্শ দেন আমেরিকার নর্থওয়েল হেলথের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট অধিকর্তা ডা. মঙ্গলা নরসিংহম। এই পরামর্শই সঞ্জীবনী হয়ে ওঠে। ভেন্টিলেটর ছাড়াই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা হুড়মুড়িয়ে বাড়ে।

-ম্যাজিকটা কী?
চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, উপুড় অবস্থায় ফুসফুসের যে সব জায়গায় হাওয়া পৌঁছতে পারে, চিত হয়ে শুলে তা হয় না। উলটে চিত অবস্থায় শরীরের ওজন ফুসফুসের উপর চাপ সৃষ্টি করায় অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়। পালমোনারি রি-হ্যাবের এই মূল নীতিই প্রতিফলিত। শুধু আমেরিকা নয়, COVID যুদ্ধে ব্রিটেনের চিকিৎসকদের কাছেও অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই ‘প্রন পজিশন।’ সংকটজনক অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘব করছে এই টেকনিক। আইসিইউয়ে থাকা অনেক রোগীকেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছে। তেমনই দাবি ব্রিটেনের ক্রিটিক্যাল কেয়ার কনসালট্যান্ট ডা. শৈবাল গঙ্গোপাধ্যায়ের।

Prawn-position2

একই বক্তব্য ফিজিক্যাল মেডিসিনের দুই চিকিৎসক ডা. রাজেশ প্রামাণিক ও ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁদের মতে, তিনটি ক্ষেত্রে এই পজিশন কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। এক, রোগীর যদি জ্ঞান থাকে, শারীরিকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হন, তাহলে কিছুক্ষণ উপুড় করে শুইয়ে রাখলে শ্বাসকষ্ট লাঘব হবে। দুই, সি-প্যাপ হুড দিয়ে রোগীকে উপুড় করে শোয়ানো যেতে পারে। তিন, ভেন্টিলেটরে থাকাকালীন রোগীকে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রন পজিশনে রাখা যেতে পারে। ফুসফুসের শ্লেষ্মাও এই পদ্ধতিতে বেরতে সুবিধা হয়। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, ফুসফুসের বেশিরভাগটাই পিছনের দিকে রয়েছে। উপুড় হয়ে শুলে পিঠের ‘এক্সপ্যানশন’ ভাল হয়। ফলে ‘এয়ার ভেন্টিলেশন’ ভাল হয়। কফ তোলার অনেক মুদ্রাই উপুড় করে শুইয়ে প্রয়োগ করা হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ