BREAKING NEWS

১৬ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

শরীরে ভিটামিন বেশি হলেই বিপদ, সতর্ক করলেন শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

Published by: Suparna Majumder |    Posted: March 21, 2023 3:27 pm|    Updated: March 21, 2023 3:27 pm

Too much Vitamin in the body can be dangerous, warned the expert Doctor of the Kolkata | Sangbad Pratidin

শরীরের সমস্ত কাজকর্ম ঠিক রাখতে প্রতিটি ভিটামিন (Vitamin) যেমন অপরিহার্য তেমনই তা আবার বেশি হলেও বিপদ। কোনটি কতটা প্রয়োজন, কী তার উৎস? সেই নিয়েই কলকাতা ফর্টিস হাসপাতালের ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।

শরীর গঠনে, রোগ প্রতিরোধে ভিটামিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে জানেন কি? এর ঘাটতিতে যেমন সমস‌্যা দেখা দেয়, তেমনই বাড়বাড়ন্তেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ভিটামিন সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা সকলের জন‌্যই জরুরি।

Vitamins-2

ভিটামিন A – চোখের স্বাস্থ‌্যরক্ষা করে, দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে। শরীরে ঘাটতি হলে রাতকানা, চোখের সাদা দাগ (বিটটস স্পট), জেরপথ‌্যালমিয়া হয়। উৎস, ডিম, দুধ, গাজর, কুমড়ো, পালং শাক, আম।
ভিটামিন B – এর আওতায় একাধিক ভিটামিন রয়েছে।
ভিটামিন B 1 – থায়ামিন। অভাবে শরীরে বেরিবেরি রোগ হয়।
ভিটামিন B 2 – রাইবোফ্লাভিন। ঘাটতি হলে মুখের নানা রকম ঘা যেমন অ‌্যাঙ্গুলার স্টমাটাইটিস, গ্লসাইটিস প্রভৃতি হয়।
ভিটামিন B 3 – নিয়াসিন। শরীরে এর হার কমে গেলে পেলাগ্রা হয়। এটি এক ধরনের ত্বকের অসুখ।
ভিটামিন B 5 – প‌্যান্টোথেনিক অ‌্যাসিড। ঘাটতিতে পায়ের তলায় তীব্র জ্বালা হয়।
ভিটামিন B 6 – পাইরিডক্সিন এবং ভিটামিন

Vitamins-3

ভিটামিন B 12 – সায়ানোকোবালামিন। এই দু’য়েরই ঘাটতিতে অ‌্যানিমিয়া, পেরিফেরাল নিউরোপ‌্যাথি প্রভৃতি হয়। ভিটামিন বি ১২-র হার শরীরে কমে গেলে ‘সাব-অ‌্যাকিউট কম্বাইন্ড ডিজেনারেশন অফ দ‌্য কর্ড’- হতে পারে। এটি স্পাইনাল কর্ডের এক রকম সমস‌্যা।
ভিটামিন B 9 – ফলিক অ‌্যাসিড। এর ঘাটতিতেও পেরিফেরাল নিউরোপ‌্যাথি, অ‌্যানিমিয়া, নার্ভের সমস‌্যা হতে পারে। উৎস–অ‌্যাভোক‌্যাডো, ব্রোকোলি, কলা, চিকেন।
ভিটামিন C – অ‌্যাসকরবিক অ‌্যাসিড। শরীরের জন‌্য অত‌্যন্ত জরুরি। ইমিউনিটি তৈরিতে ভূমিকা অপরিহার্য। কোভিডকালে এর গুরুত্ব ভালভাবে বোঝা গিয়েছে। ঘাটতিতে স্কার্ভি হয়। হাড়ের কিছু সমস‌্যাও হতে পারে। উৎস–লেবু জাতীয় ফল, টম‌্যাটো, স্ট্রবেরি
ভিটামিন D – ক‌্যালসিফেরল। বোন মিনারালাইজেশনে সাহায‌্য করে। কমে গেলে হাড় পাতলা, ভঙ্গুর হয়ে যায়, বেঁকেও যায়। উৎস – সবচেয়ে বড় উৎস সূর্যরশ্মি। এছাড়া
ডিম, চিজ।
ভিটামিন K – ফাইটোনাডিয়ন। রক্ত জমাট বাঁধতে অর্থাৎ তঞ্চনে সাহায‌্য করে। এর অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্লিডিং ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। উৎস – বাঁধাকপি, লেটুস, কলা।
ভিটামিন E – আলফা টোকোফেরল। শরীরে হার কমলে ইনফার্টিলিটি তথা বন্ধ‌্যত্ব দেখা দেয়।
উৎস–হুইটজার্ম ওয়েল, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম।

[আরও পড়ুন: পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় বাড়ছে খুদের দুরন্তপনা! আশঙ্কার কথা শোনালেন চিকিৎসক]

অতিরিক্তেও সমস‌্যা
মনে রাখতে হবে, ভিটামিন সাধারণত দু’ধরনের হয়। জলে দ্রবণীয় এবং স্নেহপদার্থে দ্রবণীয়। যে সমস্ত ভিটামিন প্রথম শ্রেণির মধ্যে পড়ে, তাদের কোনওটির অতিরিক্ত সেবনে খুব একটা সমস‌্যা হয় না। কারণ অতিরিক্ত অংশটুকু প্রস্রাবের মাধ‌্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ভিটামিন B-এর অন্তর্গত সব শ্রেণি, ভিটামিন C এই তালিকায় পড়ে। অন‌্যদিকে ‘ফ‌্যাট সলিউবল’ অর্থাৎ স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি হল A, D। শরীরে এগুলি বেড়ে গেলে অতিরিক্ত অংশ বেরিয়ে যেতে পারে না। শরীরেই থেকে যায়। তখন নানা ধরনের সমস‌্যা দেখা দিতে পারে।

Multivitamin foods may help to fight against COVID-19

যেমন ভিটামিন A বেড়ে গেলে চোখ এবং ত্বকের নানাবিধ অসুখ দেখা দেয়। পাশাপাশি তন্দ্রাচ্ছন্নতা দেখা দেয়। খাবার ইচ্ছা কমে যাওয়া, বমি ভাব, হাতে-পায়ে ব‌্যথা, হাড়ের ব‌্যথা, আর্থারালজিয়া প্রভৃতি হয়।
শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন D হয়ে গেলে রোগীর কিডনি স্টোন-এর সমস‌্যা বাড়ে। ডায়েরিয়া, গা-হাত পায়ে ব‌্যথা, দুর্বলতা প্রভৃতিও হয়।

জরুরি কোনগুলি?
প্রতিটি ভিটামিন শরীরের কাজে লাগে। তাই প্রতিটিই জরুরি।

সমতার গুরুত্ব
ভিটামিনের কমতি বা বাড়তি, শরীরে কোনওটাই যাতে না হয়, ‘ব‌্যালান্স’ বজায় রাখা সম্ভব যাতে হয়, তার জন‌্য সবচেয়ে জরুরি হল সুষম আহার করা। খাদ‌্যতালিকায় যেন প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল থাকে। আর তার সঙ্গে যেন থাকে প্রাণিজ প্রোটিনও। উল্লেখ‌্য, ভিটামিন B 12 প্রাণিজ প্রোটিন থেকে আসে। ফলে যাঁরা নিরামিশাষী, তাঁরা প্রায়ই এর ঘাটতিতে ভোগেন। তাই দুধ, শাকসবজি ও ফলমূল খাদ‌্যতালিকায় রাখা অবশ‌্যই উচিত।
তবে ভিটামিন D কিন্তু আবার কোনও খাবার থেকে আসে না। সূর্যরশ্মিই এর উৎস। তাই বাড়ির ভিতরে বসে সারাক্ষণ না থেকে বাইরে বেরোনো উচিত। দিনের অনেকখানি সময় ‘ইনডোরে’ কাটলে শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হয়।

Vitamin

উপসর্গেই বুঝুন
প্রথমত, নিজে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি বা আধিক্যে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। ডাক্তারকে তা জানাতে হবে। তিনি খতিয়ে দেখলেই বলে দেন, সমস‌্যার উৎস কী। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হয়। খাদ‌্যাভ‌্যাসের সূচি বলে দেওয়া হয়। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।

টেস্ট আর চেকআপ
এমন কোনও ল‌্যাবরেটরি টেস্ট নেই, যাতে শরীরে কোনও ভিটামিনের ঘাটতি বা আধিক‌্য বোঝা যায়। তবে এর প্রথম ব‌্যতিক্রম ভিটামিন D। শরীরে এর ঘাটতি হলে তা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এছাড়া ভিটামিন B 12, ফলিক অ‌্যাসিড (ভিটামিন B 9)-ও ‘চেক’ করা যায়।

মুঠো মুঠো মাল্টিভিটামিন
মনে রাখবেন, নিজে ডাক্তারি কখনও করবেন না। অপ্রয়োজনীয় ভিটামিন নেবেন না। চোখ ঝাপসা লাগছে, দোকানে গিয়ে ভিটামিন A সাপ্লিমেন্ট কিনে এনে, খেয়ে নিলাম– এতে সুরাহার বদলে সমস‌্যা বাড়বে। তাই আগে ডায়েটে নজর দিন।

[আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন কিডনিতে সিস্ট? ওষুধেই কি কাজ হয়? উত্তর দিলেন বিশেষজ্ঞ]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে