বাড়িতে একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। মন জুড়ে অবসাদ। দূরে থাকা বড় খোকাখুকুরা বাবা-মায়ের মনের অসুখ ঠেকাবেন কীভাবে? জানালেন সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. তথাগত চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
ছেলে-মেয়ে যে যার সংসার, কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ অন্য শহরে, কেউ বিদেশে। ফোনে কথা হয় দিনে দুই-একবার। কারও কয়েকদিন অন্তর। কারও আবার কেউ খোঁজই নেওয়ার নেই। মহানগর, শহরতলি, গ্রাম সর্বত্রই একা হয়ে পড়ছেন বয়স্করা। সবার সন্তান যে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ঝেড়ে ফেলে দূর দেশে পালিয়ে যান, তা নয়। সবাই নিজের নতুন সংসারের ব্যস্ততায় মা, বাবাকে ভুলতে বসেছেন, তাও নয়। বিশ্বায়ন, সমাজ পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য বৃহৎ সংসার থেকে ছিন্ন হয়ে পড়ছেন সমাজে প্রবীণদের একাংশ। অণু পরিবারে থাকলেও বড্ড একলা হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যার পরিণতি অবসাদ। একরাশ মানসিক অবসাদ জাপটে ধরে তাঁদের। তবে শুধু ছেলে-মেয়ে দূরে থাকলে বা তাঁদের সঙ্গে কোনও কারণে সম্পর্ক তিক্ত হলেই যে এই একাকীত্বের অবসাদ আসে তা একমাত্র কারণ নয়। বয়সকালীন ডিপ্রেশনের কারণ একাধিক। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর শোক, সাংসারিক অশান্তি, সন্তান যত্ন না নিলে, পরিবারে গুরুত্ব কমলে, শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ার মতো বহু কারণ রয়েছে।
[ব্যস্ততার মধ্যেই গ্রাস করছে বিষণ্ণতা? নিজেকে চনমনে রাখুন এই উপায়ে]
কীভাবে বুঝবেন অবসাদ?
বয়স্কদের মানসিক অবসাদের লক্ষণ- সব কিছুতেই হতাশা-দুঃখ পাওয়া, আনন্দের ঘটনাতেও আনন্দিত না হওয়া, ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ করা, সমাজে কারও সঙ্গে মিশতে না চাওয়া, নিজের শখের কাজেও উৎসাহ না পাওয়া, ওজন কমা, খিদে না পাওয়া, কোনও কাজ করতে ইচ্ছা না করা, নিজেকে উৎসাহিত করার ব্যাপারেও অনীহা, ঘুমের সমস্যা (দিনের বেলায় ঘুম পাওয়া, রাতে ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘুম), কথা কম বলা, হাঁটাচলার গতি কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা, মৃত্যুচিন্তা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া (খাবার না খাওয়া, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, নিজের পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর না দেওয়া)।
দূরে থেকেও পাশে-
বয়স্ক বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখতে না পারার কষ্ট পান ছেলেমেয়েরা। তাঁদের অসহায়তার কথা ফোনে শুনলেও বেশিরভাগ সময়ই বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবু মনে রাখা দরকার, শুধু মাত্র আর্থিক সচ্ছলতা দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করাটাই সব নয়। এই সময় তাঁদের মধ্যে একাকীত্বে ভোগার সমস্যা হয় যা থেকে ধীরে ধীরে অবসাদ গ্রাস করে। তাই বিভিন্ন কারণে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা পরিবারের থেকে দূরে থাকলেও দিনে কয়েক বার ফোনে কথা বলুন। সব সময় যে জরুরি কথা বলতে হবে এমন নয়। স্বাস্থ্যের খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের কথাও মন দিয়ে শুনুন। আর অবসাদের লক্ষণ বুঝতে পারলে প্রথমে নিজে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করুন। তাতে সম্ভব না হলে দ্রুত কোনও মনোবিদের কাছে নিজেরা নিয়ে যান কিংবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে পাঠিয়ে দিন। কারণ সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে পরিস্থিতি হাতছাড়া হতে পারে।
চিকিৎসা থেরাপিতে-
অবসাদ যখন গভীর হয় তখন প্রয়োজন থেরাপি। সমস্যা অল্প হলে কাউন্সেলিং করে ঠিক করেন সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টরা। সে ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি করা হয়। রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, নানা প্রবণতা খুঁটিয়ে দেখা হয়। ঠিকমতো চিকিৎসা করলে বেশিরভাগ বয়স্কের মনের সমস্যা এই কাউন্সেলিংয়ের পরে সাধারণত ঠিক হয়ে যায়।
কাউন্সেলিংয়ে সমস্যা না মিটলে বা সমস্যা একটু জটিল হলে এসিটালোপ্র্যাম জাতীয় অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ দেওয়া হয়। এগুলির সাইড এফেক্ট তেমন নেই। এছাড়াও রয়েছে রিল্যাক্সেশন থেরাপি। এক্ষেত্রে শরীরের পেশি নানাভাবে সংকোচন, প্রসারণ করে রিল্যাক্স করা হয়। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ও শ্বাস ছেড়ে ডিপ ব্রিদিং করতে হবে। এছাড়াও ধ্যান-যোগা, শরীরচর্চা করেও ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা যায়।
শুধু নিজের বাবা-মা নয়, একলা হয়ে পড়া প্রবীণ প্রতিবেশী-পরিজনদের পাশেও থাকুন। কাউকে একাকীত্বের মধ্যে ফেলবেন না। একাকীত্ব ভয়ংকর অভিশাপ। মানুষ সমাজবদ্ধ। সবার সঙ্গে থেকে ও গুরুজনদের সান্নিধ্য নিয়েই সমাজযাপন। পাড়া, কমপ্লেক্সের বয়স্ক কাকু, জেঠিমা, ঠাকুমাদেরও একটু খোঁজ রাখুন।
পরামর্শের জন্য যোগাযোগ: ৯৮৩০০৩৩৭৫৯
[সকালে এলাচ ভেজানো জল মানেই হাজারও রোগ থেকে মুক্তি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.