অর্ণব আইচ: পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। পুরনো মদের স্বাদই আলাদা। কিন্তু পুরনো মোবাইল? এখানে একটু অন্যরকম। প্রাচীনত্বের কদর অন্তত মোবাইলের ক্ষেত্রে নেই। বরং কিছুটা ছুঁৎমার্গ যেন জড়িয়ে থাকে পুরনো, অকেজো মোবাইল ফোনের অঙ্গে-অঙ্গে। বাড়ি পরিষ্কারের সময় দু’একটা মান্ধাতার জমানার মোবাইল পাওয়া যাবেই। হয়তো অনেক চেষ্টা করেও সেগুলো সারানো যায়নি। তা হলে বিক্রি না করে রেখে দেওয়া হয়েছিল কেন? নস্ট্যালজিয়া?না। মোটেই তেমন রোমান্টিক কিছু কারণ নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ করেছে আশঙ্কা। দুষ্কর্মে ফেঁসে যাওয়ার ভয়। কারণ, বেচে দেওয়া সেই মোবাইলের মাধ্যমে কোনও অপরাধ হলেই চিত্তির। প্রথমেই ধরা হবে সেই ব্যক্তিকে, যিনি প্রথম মোবাইলটি কিনেছিলেন। তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি মোবাইলটি সেই অপরাধে কাজে লাগাননি। সে এক মস্ত হ্যাপা।
[অপরিচ্ছন্ন স্কুলের শৌচাগার, হিন্দু স্কুলের সামনে বিক্ষোভ অভিভাবকদের]
সমস্যার সমাধান এবার হয়তো মিলতে চলেছে। কলকাতায় আসতে চলেছে পুরনো মোবাইল বিক্রির ‘ইটালিয়ান কনসেপ্ট’। যার উপর ভিত্তি করে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা মধ্য কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে খুলছে পুরনো মোবাইলের বিপণি। সেখানে নতুন মোবাইল থাকবে না। থরে থরে সাজানো থাকবে প্রচুর ঝাঁচকচকে, প্রায় নতুনের মতো দেখতে পুরনো মোবাইল। এই ধরনের দোকান ইটালিতে বেশ কয়েকটি রয়েছে। বেলজিয়াম ও লন্ডনে একটি করে। ভারতে দিল্লিতে একটি। এবার দোকান খোলা হচ্ছে কলকাতায়। জানা যাচ্ছে, ব্যাপারটা অনেকটাই পুরনো গাড়ি কেনাবেচার মতো। কারও কাছে কোনও পুরনো মোবাইল থাকলে নিয়ে আসতে পারেন ওই দোকানে। এমনকী, খারাপ মোবাইলেও আপত্তি নেই। সংস্থাটি দেখেশুনে পুরনো বা খারাপ মোবাইল কিনে নেবে। দেখা হবে, কী কী যন্ত্রাংশ বিকল হয়েছে। তার পর সেটি সারিয়ে সুরিয়ে একেবারে ‘নতুন’-এর মতো করে সাজিয়ে রাখা হবে শোকেসে। পছন্দ হলে কিনে নিন। কোনও ঝুঁকি নেই। কারণ পুরনো মোবাইলের কাগজপত্র থাকলে তা যাচাই করেই কেনা হবে। আবার সারিয়ে বিক্রির সময় নতুন ক্রেতাকে কাগজপত্র দেওয়া হবে, যাতে সন্দেহের অবকাশ না থাকে। সঙ্গে এক বছরের ওয়ারেন্টিও। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতা, ও নতুন ক্রেতা, সব পক্ষেরই স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
সংস্থার দাবি, প্রথম মালিক যে সংশ্লিষ্ট তারিখে মোবাইলটি তাদের কাছে বিক্রি করেছেন, তার প্রমাণস্বরূপ রসিদ দেওয়া হবে। ফলে ওই তারিখের পর সেই মোবাইল মারফত কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে তার দায় প্রথম মালিকের ঘাড়ে বর্তাবে না। আবার বিপণি যদি মোবাইলটি অন্য কাউকে বিক্রি করে, তার লিখিত প্রমাণ দু’পক্ষের কাছেই থাকবে। অর্থাৎ, নতুন ক্রেতা সেই মোবাইল দিয়ে কোনও দুষ্কর্ম করলে সংস্থাও দায়মুক্ত থাকবে। একইভাবে মোবাইলটি প্রথমেই কোনও অপরাধে জড়িত থাকলে বিপণি বা দ্বিতীয় ক্রেতা, দু’পক্ষই প্রমাণ করতে পারবেন যে, সেই সময় মোবাইল তাদের হেফাজতে ছিল না। লালবাজারের এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, বহু দোকানই চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল কেনে। কিন্তু দেখা যায়, দাম দিয়ে পুরনো মোবাইল কেনার পরও পুলিশকে তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকেন ক্রেতা। আবার ওই মোবাইল কেনার পর ক্রেতা সেটি ব্যবহার করে কোনও অপরাধ করলে তার দায় প্রথমে পড়বে বিক্রেতার উপর। কিন্তু কোনও দোকান প্রয়োজনীয় নথি বা কাগজ-সহ পুরনো মোবাইল বিক্রি করলেও তাতে কোনও সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[রাশিয়া বিশ্বকাপে ঢুকে পড়ল ইস্টবেঙ্গল, লাল-হলুদে সই তারকা ডিফেন্ডারের]