সন্ধের স্বাস্থ্যকর খাবার ভেবে রোজ খান এক ঠোঙা ঝালমুড়ি? মুচমুচে মুড়িতে রয়েছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাবধান করলেন এন আই টি দুর্গাপুরের ফুড বায়োটেকনোলজির গবেষক ড. সুরভী চৌধুরি। শুনলেন জিনিয়া সরকার
ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, মশলামুড়ি কিংবা জলমুড়ি। সন্ধের মুখরোচক আড্ডা থেকে পেট ঠান্ডা সব ক্ষেত্রেই মুড়ি সুষম খাদ্য। সস্তায় পুষ্টিকর খাবার। ভেজাল খাবারের ভিড়ে মুড়ির উপর অগাধ ভরসা অধিকাংশেরই। তবে বর্তমানে ব্যবসায়িক স্বার্থে মুড়ির উৎপাদন বাড়াতেও নাকি মেশানো হচ্ছে নানা রাসায়নিক।
[অল্পেতে ঝিমিয়ে পড়ছেন? তরতাজা থাকার জন্য এই কাজটি অবশ্যই করুন]
আতঙ্কের মুড়ি
বাজারে গেলে বস্তা বস্তা মুড়ি যার কোনওটা লম্বা, মুচমুচে ও একটু লালচে বর্ণের হয়। কোনওটা আবার খুব ছোট, ফোলা ও সাদাটে। কেউ আবার চোখের সামনেই মুড়ি ভেজে বিক্রি করেন। সাদা মুচমুচে ফোলা মুড়ি খেতে বেশি ভাল তাই চাহিদাও বেশি। সাধারণত চাল থেকে মুড়ি তৈরি খুব সাধারণ ব্যাপার। তাই এতেও ভেজাল থাকতে পারে এটা সহজে বোঝা দায়। চাল শুকনো কড়ায় ফেলে অল্প নুন দিয়ে ভাজা হয়। সাধারণভাবেই এই চালগুলি খুব উন্নতমানের হয় না। মোটামুটি মানের চালগুলিকেই মুড়ি ভাজতে ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের চাল দিয়ে তৈরি মুড়ি ধবধবে সাদা হলে স্বাভাবিকভাবেই অস্বাভাবিক ঘটনা। বাজারে মুড়ির চাহিদা অনেক। সেই চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখেই মুড়িকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এতে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া। মুড়ি ভাজার সময় ইউরিয়া দিলে সেই মুড়ি খুব কম সময়ের মধ্যেই মুচমুচে ও ফোলা ভাজা হয়। এতে জ্বালানির খরচ কমে অথচ উৎপাদন বেশি হয়। ইউরিয়া মূ্লত সার বা কীটনাশক যা চাষের কাজে ব্যবহার হয়। এই কীটনাশক বাজারে খুব সহজলভ্য। তাই সবদিক থেকেই ইউরিয়ার ব্যবহারই বেশি সুবিধাজনক।
[ওষুধ নয়, জেনে নিন প্রাকৃতিক উপাদানে ব্যথা নিরাময়ের পদ্ধতি]
মুড়িকে সাদা করতে চাইলে চালের সঙ্গে মেশানো হয় টেক্সটাইল ব্লিচিং এজেন্ট নামের রাসায়নিক। সাদা মুড়ি দেখতে স্বাস্থ্যকর। তাই চাহিদাও বেশি। মুড়ি ফোলাতে হলে ভাজার আগে তাতে মেশানো হয় কেরোসিন তেল। মুচমুচে মুড়ির জন্যে রাসয়নিক রয়েছে। তাতেই মুড়ির রূপ যায় খুলে। প্যাকেটেবন্দি সাদা মুড়ি কিনতে গিয়ে বোঝার উপায়ও নেই, তাই আরও বিপদজ্জনক। বর্তমানে ট্রেনে বাসে কিংবা ঝালমুড়ির দোকানে হলুদ মুড়ি রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে। মুখরোচক ও লোভনীয় দেখতে বলে চাহিদাও বেশি। সাধারণত হলুদ রং করতে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে মুড়িতে। যার প্রভাব পড়ছে স্নায়ুতে।
কেনার সময়
মুড়ি মাখা কিংবা শুকনো মুড়ি বাজার থেকে কেনার সময় মুড়ি সরু, লম্বা ও একটু লালচে দেখে কিনুন। ছোট ছোট, নিটোল সাদা মুড়ির লোভে পড়লে বিপদ। এগুলিতেই বেশি ভেজাল রয়েছে। ইউরিয়া মেশানো মুড়ি দীর্ঘ সময় ধরে খেলে লিভারের ক্ষতি করে, কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। মুড়ির চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর চালভাজা।
বাড়িতেই চিনুন ভেজাল মুড়ি
একমুঠো মুড়ি একটা বাটিতে নিয়ে তাতে ৫ মিলি গরমজল ঢালুন। তারপর সেই মিশ্রণ ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে মুড়ি থেকে সেই জল ছেঁকে অপর পাত্রে রাখুন। সেই ছেঁকে নেওয়া জলে অর্ধেক চামচ অড়হর ডালের গুঁড়ো বা পাউডার বা সোয়াবিন পাউডার মিশিয়ে দিন। সেই মিশ্রিত জল ৫ মিনিট রেখে দেওয়ার পর সেই জলে লাল লিটমাস পেপার দিয়ে ৩০ সেকেন্ড রেখে দিন। যদি সেই লাল লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে এই মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় মুড়ি খাওয়ার পর মুখের ভিতর ছড়ে যায়। তারপর কিছু খেলে তার স্বাদ পাওয়া যায় না। ইউরিয়া মেশানো মুড়ি খেলে অনেক সময়ই এমন হতে পারে। মুড়ি কেনার সময় ইউরিয়া মেশানো মুড়ি কি না তা বুঝতে মুড়ির বস্তার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেখুন। যদি খুব গরম ভাব অনুভব হয় সেক্ষেত্রে এই মুড়ি না কেনাই ভাল।