গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: চাকরিজীবনে অত্যন্ত রাশভারী লোক ছিলেন তিনি। হেডমাস্টার বলে কথা। অবসর নেওয়ার দশ বছর পর সেই মানুষটিই বাড়ির পরিচারিকার প্রেমে এমন হাবুডুবু খেলেন। গোটা এলাকা জুড়ে ছি-ছি পড়ে গেল। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে সত্তর পেরনো মাস্টারমশাই আপাতত সুস্থ। বছর ছেষট্টির প্রৌঢ়েরও প্রায় একইরকম দশা হয়েছিল। ফেসবুকে এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ। ঘনিষ্ঠতা। পরে হোয়াটসঅ্যাপে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বিনিময়। আইটি ইঞ্জিনিয়ার ছেলেরা বাবার গোপন অভিসার হাতেনাতে ধরে ফেলেন। দেখেন হাঁটুর বয়সি এক তরুণীর সঙ্গে ‘প্রাইভেট পার্টস’ ছবি চালাচালি হত নিয়মিতই। এই ব্যক্তিরও পিজি হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগে চিকিৎসা চলছে।
এমন উদাহারণ পাড়ায় পাড়ায়। বেশি বয়সে প্রেমে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। কী পুরুষ কী মহিলা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সময়ের দাবি মেনেই এমনটা হচ্ছে। প্রেম আগেও বয়স মানত না। এখনও তাই। তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও স্মার্টফোন সংস্কৃতি অনুঘটকের কাজ করছে। মস্তিষ্কে ডোপামিন, নরপিনারফ্রিন, সেরাটোনিন নিঃসরণ বাড়িয়ে বিকেলে ভোরের ফুল ফোটাচ্ছে। অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা অনেক সময়েই নতুন সম্পর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রৌঢ়দের। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের কথায়, জীবনে যৌন তৃপ্তি না পেলে অনেকেই বেশি বয়সে সেই অভাব পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। পরিস্থিতি জটিল করে ডোপামিনের মত ‘লাভ হরমোন’।
সমাজবিদ জিগম্যান্ড বোমান বলেছেন, সম্পর্ক, প্রেম, বন্ধন সবই এখন ধাবমান তরল। স্মার্টফোনের দৌলতে প্রেম এখন সেলফিবন্দি। বলিউড, হলিউড ফ্যান্টাসি জড়ানো চোখে পিকচার পারফেক্ট সঙ্গীর সন্ধান। হাইস্পিড ইন্টারনেটের যুগে প্রেম ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো। গভীরতা কম। ফেসবুকে ছবি লাইক করার সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ চলে যায় হোয়াটস অ্যাপে। তারপরেই শুরু হয় ডেটিং। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রেমের আয়ুও ফুরিয়ে যায়। তাই বয়সে বড় সঙ্গীর মধ্যে ‘নিরাপদ’ প্রেম খুঁজছে এই প্রজন্ম। ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের প্রেম, ডাক্তারের সঙ্গে রোগিণীর প্রেম, নেতার সঙ্গে অধ্যাপিকার প্রেম গা সওয়া হয়ে গিয়েছে সমাজে।
প্রেমিক বয়সে ছোট হলেই তো প্রেমিকা ‘হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং’। হলিউড তারকা ডেমি মুর ১৬ বছরের ছোট অ্যাস্টন কুচারকে বিয়ে করে বেভারলি হিলসে চুটিয়ে সংসার করেছেন। পপ সম্রাজ্ঞী ১০ বছরের ছোট ব্রিটিশ পরিচালক গাই রিচির সঙ্গে মহানন্দে দাম্পত্য করছেন। অনেক ভারতীয় উদাহারণও রয়েছে। মহাত্মা গান্ধী-কস্তুরবা গান্ধী, সত্যজিৎ-বিজয়া, আশা-আরডি। উলটোটাও আছে। সত্তর পেরনো অভিনেতা দীপঙ্কর দে ঘর বেঁধেছেন বছর চব্বিশের ছোট দোলন রায়ের সঙ্গে। সত্তর পেরিয়ে পিকাসোও প্রেমে পড়েছিলেন।
এই শহরে বেশি বয়সে প্রেমে পড়ার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। পিজি হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র অধিকর্তা ড. প্রদীপ সাহা জানালেন, “বেশি বয়সের প্রেম সরলরেখায় চলে না। তাই সামাজিক সঙ্কট তৈরি হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। কখনও বিকৃতি আসে। দীর্ঘদিনের পরিবার-পরিজন ছেড়ে চলে যান মনের মানুষের কাছে। কখনও গোপনে অভিসার করতে গিয়ে ধরা পড়ছেন অনেকেই। ফাটল ধরছে দাম্পত্যে। এমন বহু ঘটনা আমাদের সামনে আসছে।”
[চিত্র: প্রতীকী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.