শরীরের হাড়ের কলকবজা বিকল করছে ধূম নেশা। সেই ক্ষতির হিসেব কষে নেশা করবেন কি? জিনিয়া সরকার।
সুখটানে অসুখের লিস্ট ক্রমশই বাড়ছে। ফুসফুস, হার্টের অসুখের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এর সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, যিনি যত বেশিমাত্রায় ধূমপান করেন তাঁর বয়সকালে হাড় ভাঙার সম্ভাবনা তত বেশি। পুরুষ-মহিলা সকলেরই হাড়ে সমান প্রভাব ফেলে ধূমপান। হাড় ভেঙে গেলে তা ঠিক হতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় নেয় স্মোকারদের। অল্পবয়সিদের মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং-এর প্রবণতা বেশি। এই অভ্যাস হাড়ের ভর বা বোন মাস কমায়। মহিলাদের ধূমপান করলে উপযুক্ত পরিমাণ ইস্ট্রোজেন হরমোন (সেক্স হরমোন) তৈরি হয় না, ফলে মেনোপজ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। যার ফলে হাড় দুর্বল হয় ও সহজেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
স্মোকারদের প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের হিপ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধূমপানের কারণে বার্ধক্যে বা ৭০-৮০ বছর বয়সে হাড়ের ঘনত্ব মারাত্মক হ্রাস পায়। এছাড়া দীর্ঘ ধূমপানের অভ্যাস ৬০ বছর বয়সে ১৭ শতাংশ হাড় ভাঙার সম্ভাবনা বাড়ায়, আর ৮০ বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭১ শতাংশ। তাই সাবধান।
[ প্রস্রাবের সমস্যা থেকে হতে পারে মারাত্মক রোগ, কীভাবে করবেন চিকিৎসা? ]
ক্ষতির খতিয়ান
সিগারেটে থাকা নিকোটিন ও টক্সিন উপাদান রক্তের মাধ্যমে হাড়েও বাহিত হয়। নানা ক্ষতির সঙ্গে হাড়ের ডেনসিটি বা ঘনত্ব নষ্ট করে। ধূমপান শরীরের নানা হরমোন উৎপাদনে বা হরমোনের কার্যক্ষমতা নানাভাবে ব্যাহত করে। যেমন, প্যারাথাইরয়েড হরমোন (যা হাড়ের ক্যালশিয়ামের দ্রবীভূত ক্ষমতা ঠিক রাখে)-এর মাত্রা কমায়, যা অস্টিওপোরোসিস রোগ ডেকে আনে। এছাড়া ধূমপান ‘কর্টিজল’ হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে হাড়ের ক্ষতি করে। ‘ক্যালশিটোনিন’ হরমোন উৎপাদনেও বাধার সৃষ্টি করে। এই হরমোনও হাড় শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয়। সিগারেটে থাকা ‘নিকোটিন’ হাড়ের মজ্জা বা ‘অস্টিওপ্লাস্ট’-এর ক্ষতি করে। এই অস্টিওপ্লাস্ট বোন সেল তৈরি করতে সাহায্য করে।
সিগারেটের ধোঁয়া থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্রি রেডিক্যালস উৎপন্ন হয় বা শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে খুব সহজেই ব্যাহত করে ও হাড়ের প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন ক্ষমতা কমায়। ধূমপান ধমনিতে রক্ত সঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে হাড়েও রক্ত ঠিকমতো পৌঁছয় না। নিউরোমাসকুলার পারফরম্যান্স বা পেশি সচল রাখতে সাহায্যকারী স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বারবার হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
আর দেরি নয়
১. জেনে বুঝে আর বিপদ বাড়তে দেবেন না। হাড়ের অসুখ বা অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে ধূমপান বর্জন করাই সুস্থ থাকার সহজ উপায়। বেশি বয়সে গিয়ে ধূমপান ছাড়লে তাতেও হাড়ের ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।
২. ডায়েটে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন-ডি রাখতেই হবে। ক্যালশিয়ামের সবচেয়ে ভাল উৎস হল, ফ্যাট কম যুক্ত দুগ্ধ জাতীয় খাবার, গাঢ় সবুজ বর্ণের সবজি। বিশেষ করে যাঁদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে তাঁদের এই ধরনের ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খাবার পাতে থাকুক, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ ও মাংসের মেটে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।
৩. রোজ এক্সারসাইজ জরুরি। হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা অথবা নাচ হাড় মজবুত করার এক্সারসাইজ।
৪. যাঁরা দীর্ঘদিন ধূমপানে আসক্ত কিংবা দীর্ঘদিন আসক্ত থাকার পর ধূমপান ছেডে়ছেন তাঁদের উচিত বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করা। এই টেস্ট করলে আগে থেকেই বোঝা সম্ভব অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে কি না।
[ মদ্যপানে এক বছরে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, চিন্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ]