অভিরূপ দাস: ভোটের মরশুমে জেনে নিন নেট দুনিয়ার নিয়মকানুন। না হলে যেকোনও মুহূর্তে পড়তে পারেন শাস্তির কোপে।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
আগ বাড়িয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়াবেন না। অনেকেই আছে যারা শুধু আকর্ষণীয় প্রোফাইল পিকচার বা সুন্দর মুখ দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। আজকাল ফেসবুকে ফেক প্রোফাইলের ছড়াছড়ি। রাইমা সেন ভেবে যাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেন হয়তো সে আপনারই পাশের পাড়ার বুঁচি। আবার অজানা লোকজনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে অনেক সময়ই সেসব রিকোয়েস্ট রিজেক্ট হয়ে যায়। আসলে বাস্তব জীবনে যেমন ফেসবুকেও তেমন। আগ বাড়িয়ে আর যা-ই হোক বন্ধুত্ব হয় না। ফেসবুকের বন্ধুত্বটাও হয় বাস্তবের দুনিয়ার নিয়ম মেনেই। অনেকেরই ভুল ধারণা, ফেসবুকে যত বেশি ফ্রেন্ড, থাকবে, ততই আপনি জনপ্রিয় হবেন। সেটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আপনার প্রোফাইল সুন্দর, কার্যকর ও ভাল হলে আপনার কাছে অটোমেটিক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে শুরু করবে।
[ আরও পড়ুন: জানেন, কীভাবে পুরনো মোবাইল থেকে নতুন স্মার্টফোনে ডেটা ট্রান্সফার করবেন?]
লাইকের সাত সতেরো
লাইক কথাটার গুরত্ব বুঝে লাইক দিন। এমনিতে ফেসবুকে জনপ্রিয় হওয়ার খুব সাধারণ একটা উপায় হল বিভিন্ন পোস্টে লাইক দিয়ে যাওয়া। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এটা সত্যি নয়। লাইক কথাটা বুঝে তবেই লাইক বাটন টিপুন। কোনও বিতর্কিত পোস্ট লাইক করলে কিন্তু ফলাফল হিতে বিপরীত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আবার লাইক-এর চেয়ে কমেন্ট বেশি কার্যকর। ধরুন আপনার বন্ধু একটা ছবি পোস্ট করল। আপনি সেখানে শুধু লাইক দিলেন। বন্ধু খুশি হল ঠিকই, কিন্তু যদি সেখানে কমেন্ট করে মজার কিছু বললেন। দেখবেন সেটা আরও কাজে দেবে। তবে এই ভোটের মরশুমে ডান-বাম-গেরুয়া সব পোস্টে লাইক দেওয়ার অভ্যাসটা ছাড়ুন। নিজে কিছু লিখতে পারেন না? কোন সমস্যা নেই। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ভাল ভাল কন্টেন্ট শেয়ার করুন নিজের টাইম লাইনে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠবে এইসব লেখার প্রতি এবং আপনার জনপ্রিয়তাও বাড়বে।
পোস্ট কেমন হবে?
বিরক্তিকর নয়, ব্যতিক্রমী পোস্ট করুন। নিয়মিত পোস্ট করবেন ঠিকই, কিন্তু তা বলে বিরক্তিকর পোস্ট করবেন না। অনেকেই আছেন, গোটা দিনে যা যা করেন সব কিছুই ফেসবুকে পোস্ট করতে শুরু করেন। জল খাওয়া থেকে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত কিছুই বাদ রাখেন না। মনে রাখবেন আপনার যেটা ভাল লাগছে সবার সেটা না-ও ভাল লাগতে পারে। পোস্ট যদি করতেই হয় ব্যতিক্রমী পোস্ট করুন। সাধারণ ঘটনা থেকে মজার বা তাৎপর্যপূর্ণ কিছু জিনিস বের করে ব্যতিক্রমী পোস্ট করুন।
যদি ঘনঘন শেয়ার করার ইচ্ছে হয়….
যদি রাজনীতি সম্বন্ধে আপনি ওয়াকিবহাল হন। তবে নিজে থেকে বানিয়ে বানিয়ে লিখবেন না। আপনি যে মতাদর্শে বিশ্বাসী সেই অনুযায়ী নিউজ সাইটের পোস্ট শেয়ার করুন। মানুষ খবরে থাকতে ভালবাসে। যে কোনও খবরই লোকে মনযোগ দিয়ে পড়ে। ধরুন আপনি খবর পেলেন একটু আগে ভূমিকম্প হয়েছে। কোনও নিউজ সাইটের পোস্ট নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করলেন, দেখবেন বন্ধুরা আপনাকে আলাদা গুরুত্ব দেবে। সাম্প্রতিক কোনও ঘটনা নিয়ে নিজের বক্তব্য লিখুন।
[ আরও পড়ুন: আড়াই বছরেই গ্রাহক সংখ্যা ৩০ কোটি! টেলিকমের দুনিয়ায় নজির Jio-র]
কী লিখবেন নিজে থেকে….
সিনেমা অথবা বই রিভিউ করুন নিজস্ব কায়দায়। নতুন কোনও সিনেমা রিলিজ করেছে। আপনি দেখেছেন ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। সিনেমা সম্বন্ধে লিখুন আপনার টাইমলাইনে। মানুষ অজান্তেই তাদের ফলো করে যাঁরা তাদের পছন্দের বিষয়ে নিয়ে চর্চা করে। সিনেমা বা বই হচ্ছে এমন কিছু বিষয়, যা নিয়ে আপনি চর্চা করলে বা রিভিউ দিলে মানুষ আকর্ষিত হবেই। সপ্তাহের কোনও একটা নির্দিষ্ট দিনে ছোট করে সিনেমার রিভিউ দিন, অন্য একটা দিনে যে বইটা আপনি পড়লেন তা নিয়ে জানান। ধরুন রবিবার আপনি সম্প্রতি রিলিজ হওয়া সিনেমার রিভিউ লিখলেন, আর বুধবার সম্প্রতি পড়া কোনও বই নিয়ে লিখলেন।
যেমন-তেমন ছবি
আপনি ঘনঘন প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেন। যা ছবি তোলেন সেটিই ডিপি করে দেবেন না। প্রোফাইল পিকচারে অভিনবত্ব আনুন, মাঝেমাঝে পরিবর্তন করুন- প্রোফাইল পিকচার হল অনেকটা প্রোডাক্টের প্যাকেটের মতো। প্রোফাইল পিকচার মানে শুধু সেলফি বা নিজের ছবি দেওয়া নয়, বেশিরভাগ জনপ্রিয় ফেসবুক পেজের প্রোফাইল পেজ হয় অভিনব। সেইরকমই কিছু ভাবুন। তবে খেয়াল রাখবেন প্রোফাইল পিকচার একরকম, আর আপনি লিখছেন অন্যকিছু সেরকম যেন না হয়। মাঝেমাঝেই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করুন। একটা সুন্দর মুখের যা আবেদন, সেটা আর অন্য কোনও কিছুতেই নেই। ফেসবুকে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার সবচেয়ে সহজ কৌশল হল দারুণ সব প্রোফাইল পিকচার আপলোড করা। বা কোথাও ঘুরতে গেলেন, আনন্দের মুহূর্তগুলো শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে। দেখবেন দ্রুত বাড়ছে জনপ্রিয়তা।
জনপ্রিয়তা বাড়ানোর নিয়ম
১. নিজের ফেসবুক পেজকে বন্ধুদের একটা প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করতে দিন, নিজের ফেসবুক পেজকে একটা প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজে লাগাতে দিন। সেটা হতে পারে কোনও সেলেব্রিটির ফ্যান হয়ে, কোনও ক্লাবের সমর্থক হয়ে, বা কোনও পোশাক বা খাবারের আলোচনা নিয়ে। আপনার আগ্রহের বিষয়ের কমিউনিটি পেজগুলিতে লাইক দিন। আপডেটগুলো শেয়ার করুন, তারপর আলোচনার জায়গা তৈরি করুন।
২. বন্ধুদের সব পরিস্থিতিতে পাশে থাকার বার্তা দিন। বন্ধুদের বিপদে পাশে থাকার বার্তা দিন। তা দিন সোশ্যাল সাইটেই। যেমন ধরুন কারও খুব তাড়াতাড়ি রক্তের প্রয়োজন। আপনি সেটা দেখেছেন সোশ্যাল সাইটে। এবার আপনার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা করে দিন। কেউ হয়তো খুব অসুস্থ, চিকিত্সার জন্য টাকা প্রয়োজন। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে দিন। মানুষ যদি জানে আপনি বিপদের সময় পাশে থাকবেন তাহলে এমনিতেই আপনি ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন।
৩. জন্মদিন, বিশেষ দিনে আলাদা কিছু করে বন্ধুদের স্পেশাল ফিল করতে দিন। বন্ধুদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা তো ব্যক্তিগত ভাবে জানাবেনই, সঙ্গে বন্ধুকে স্পেশাল ফিল দেওয়ার জন্য আলাদা কিছু করুন। ধরা যাক আপনার বন্ধুর জন্মদিন ২৩ অক্টোবর। সেদিন আবার কিংবদন্তি ফুটবলার পেলের জন্মদিন। আপনি পোস্ট করতেই পারেন, দেখো আমার বন্ধু আর পেলের মতো বড় সেলেব একই দিনে জন্মেছেন।
[ আরও পড়ুন: নির্বাচনের জন্য বিশেষ ফিচার যোগ হল ফেসবুকে, দেখেছেন?]
৪. নেটদুনিয়ার নিয়ম কানুন: শিয়রে ভোট। একেক দলের একেক মত। সাতপঁাচ না ভেবেই সোশ্যাল সাইটে হয়তো কোনও দলের সমালোচনা করলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর ফেসবুক খুলতেই চোখ কপালে উঠল!!! একি আপনাকে নিয়ে তো যা তা গালিগালাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি দলেরই আইটি সেল রয়েছে। ফলে আচমকা কোনও দলের বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলতে যাওয়ার আগে সাধু সাবধান। তাদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বিশেষ করে ভোটের সময় না বুঝে কোনও ছবি শেয়ার অথবা টুইট করলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কী পোস্ট করবেন: বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে পারে, ভুলেও এমন কিছু পোস্ট করবেন না। কোনও গুজব ছড়াবেন না। অথবা কোনও গুজব নিজের টাইমলাইনে শেয়ারও করবেন না। মনে রাখবেন কারও উপর যত রাগই হোক, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কাউকে হুমকি দেওয়া যায় না। রসিকতা বা বাকস্বাধীনতা থাকলেও তার একটা সীমারেখা আছে। কোনও ব্যক্তির মানহানি করতে পারে, এমন কিছু লেখা যায় না।
কীভাবে গুজব থেকে দূরে থাকবেন: সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট এলেই হঠাৎ করে তা শেয়ার করবেন না। আগে যাচাই করুন বিষয়টি সম্পর্কে। সেই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত কোনও সংবাদমাধ্যম কিংবা কোনও সরকারি তথ্যপ্রমাণ রয়েছে কি না যাচাই করে নিন। না জেনে কোনও কিছু ছড়ালে বিপদ হতে পারে।
যৌনতা সম্পর্কিত পোস্ট: মাথায় রাখবেন কোনও শিশু অথবা নাবালক সম্পর্কে যৌনসম্পর্কিত পোস্ট করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। কোনও সাবালক সম্বন্ধেও যৌনতা বিষয়ক কুরুচিকর মন্তব্য করলে বিপদ হতে পারে।
[ আরও পড়ুন: এবার এক ক্লিকেই আপনার ঘরে পৌঁছাবে সোনা, মুশকিল আসান গুগলের]
কোনও পোস্ট নিয়ে আপত্তি থাকলে কী করবেন: ফেসবুক টুইটারে নিজস্ব নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে রিপোর্ট অপশনে গিয়ে সেই পোস্টটির সম্বন্ধে রিপোর্ট করতে পারেন। এছাড়া কলকাতা পুলিশের সাইবার সেল, সিআইডি থানাতেও অভিযোগ জানাতে পারেন।
শাস্তি কী: ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী অশ্লীলতা বা শিশু পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত প্রচার করলে ‘পকসো’ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হবে। দাঙ্গায় উসকানি দিতে পারে এমন পোস্টের জন্য জামিন অযোগ্য ধারাতেও মামলা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু যিনি গুজব বা উসকানিমূলক ছবি দিয়েছেন তিনিই নন, যঁারা সেগুলি না বুঝে ‘শেয়ার’ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে।
মাথায় রাখবেন, কাউকে পাসওয়ার্ড দেবেন না। অশ্লীল বা সাম্প্রদায়িক পেজে লাইক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।