সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Labourers) সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে ই-এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ অনলাইন পোর্টাল (Online Portal) চালু করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। কর্মদাতা ও কর্মপ্রার্থী উভয়ের মেলবন্ধনের জন্য ‘বিশ্বকর্মা’ নামে এই বিশেষ পোর্টাল রাজ্যে প্রথম। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পোর্টালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। www.vishwakarma.purulia.in – এই অ্যাড্রেসে রেজিস্ট্রার করে কর্মসংস্থানের নানা তথ্য পাওয়া যাবে। পরিযায়ীদের নিপুণ হাতে নির্মাণ কাজ, কাঠের কাজে নানান শৈলী, এমনকি অদক্ষ শ্রমিকরাও যেভাবে পরিখা কাটছে, তা রীতিমতো শিল্পকলা। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে এই পোর্টালের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশ্বকর্মা’।
[আরও পড়ুন: উদ্বেগের মাঝে সুখবর, করোনামুক্ত শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য]
কর্মসংস্থানের জন্য পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এই অনলাইন পোর্টালটি অনেকটা নকরি ডট কম বা লিংকডিনের মতই। একেবারে ব্লক স্তর পর্যন্ত পরিযায়ীদের সমস্ত তথ্য দেওয়া রয়েছে এখানে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের সম্পদ। তাঁদের দক্ষতাকে ব্যবহার করে কাজের সুযোগ করে দিতে এই অনলাইন পোর্টাল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হল।” সেইসঙ্গে পরিযায়ীদের নিয়ে
‘দ্য হোম কামিং, ডেস্টিনেশন পুরুলিয়া’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার।
এই পোর্টাল তৈরি করার জন্য পরিযায়ীদের তথ্যপঞ্জি তৈরি করে, ব্লক ভিত্তিক হিউম্যান রিসোর্স ম্যাপিং করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। অর্থাৎ কোন ব্লকে কত নির্মাণ শ্রমিক, কাঠের কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা কত কিংবা কতজন রঙ মিস্ত্রি, হোটেল-রেস্তরাঁয় কাজ করা কতজন রয়েছেন, তা ওই পোর্টালে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত তিন মাস ধরে এই জেলায় আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা, কাজের ধরন খাতায়-কলমে তালিকাভুক্ত হয়েছে নাকা পয়েন্টে। সেইসঙ্গে বিডিওরা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ঘুরে ঘুরে পরিযায়ীদের
তথ্যপঞ্জি তৈরির কাজ করেছেন।
[আরও পড়ুন: নেশার টাকা না পেয়ে মাকে ধারালো অস্ত্রের কোপ, নিজেই প্রতিবেশীদের খবর দিল ‘গুণধর’]
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৬৭,০৩২ জন। তার মধ্যে ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী রয়েছেন ৪১,৩৪৮। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসার সংখ্যা ২৫,৬৮৪। এর মধ্যে অদক্ষ শ্রমিক রয়েছেন প্রায় বাইশ হাজার। যাঁদের ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা ছ’হাজার জনকে এই প্রকল্পে কাজ দিয়েছি। বাকিদের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।” তারই পাশাপাশি ‘বিশ্বকর্মা’ নামে নতুন পোর্টাল সামগ্রিকভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ খোঁজার রাস্তা অনেকটা সহজ করে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’-এ বাংলা বাদ পড়লেও, রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নিজেদের জেলাতেই যে কাজের দিশা দেখাচ্ছে, এই পোর্টাল চালু তারই একটা পদক্ষেপ।
ছবি: সুনীতা সিং।