শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী: পুজোর আগে থাকতে পুরো শীত শুধু বাঙালি উৎসবমণ্ডিত থাকে, এমন নয়। ভ্রমণপিপাসু বাঙালির এই সময় আরও একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ভ্রমণ উৎসব। বেড়ানোর ভাল ভাল ডেস্টিনেশন উপভোগ করার আদর্শ সময়কাল। বিশেষ করে জঙ্গলপ্রেমীদের জন্য সিজন শুরু। একটু চেনা ছকের জঙ্গলমহলকে বাদ দিয়ে নতুন কিছুর সন্ধানে পা বাড়াতে চাইলে এ বছর চলে যেতে পারেন সঞ্জয় ধুবড়ির জঙ্গলে। নামটা সবার শোনা না-ও হতে পারে। কিন্তু সঞ্জয় ন্যাশনাল পার্ক ও ধুবড়ি অভয়ারণ্য হল বন্যপ্রাণীদের অন্যতম স্বর্গ।
[রাজস্থান গেলে অবশ্যই ঢুঁ মারুন এই কেল্লাগুলিতে]
মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায় স্থিত এই দু’টি স্থান প্রায় ৮৩১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপ্ত। এই ন্যাশনাল পার্কে পর্যটকদের আনাগোনা এখনও অনেক কম। তাই এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণীরাও পর্যটকদের নিয়ে খুব ওয়াকিবহাল নয়। অপরূপ শোভামণ্ডিত এই সঞ্জয় ধুবড়ি অভয়ারণ্য। যার সূচনা ১৯৭৫-এ। এটি ন্যাশনাল পার্কের আখ্যা পায় ১৯৮১-তে। সঞ্জয় ধুবড়ি জঙ্গলমহল এলাকাটি উত্তর বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক পালামৌ টাইগার রিজার্ভের সঙ্গে যুক্ত একটি মূল করিডরের মাধ্যমে। এটি প্রথমে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ২০০০ সালে মধ্যপ্রদেশ বিভক্ত হওয়ার পর এই ন্যাশনাল পার্কের একটা বড় অংশ ছত্তিশগড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেখানে এর নতুন নামকরণ হয় গুরু ঘসিদাস ন্যাশনাল পার্ক।
[টয়ট্রেনের দোসর এসি বাস, পর্যটকদের সুবিধায় নয়া ব্যবস্থা পাহাড়ে]
শাল, পিয়াল, বাঁশ, মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ ফরেস্টটি পর্যটকদের বন্যজীবন আস্বাদনের সেরা স্থল। পর্যটকরা এখানে খুব আসেন না বলে বন্যপ্রাণীরাও সভ্য জগতের মানুষের সঙ্গে পরিচিত নয়, তাই গাড়ি বা পর্যটক দেখলেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। চিতল, নীলগাই, চিকারা, বুনো শূকর, বার্কি ডিয়ার, ভালুক, চিতাবাঘ, সাদা বাঘ, হাতি-সবই রয়েছে। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ হল ভালুক। বান্ধবগড়ের সঙ্গে সঞ্জয় ধুবড়ি যুক্ত বলে স্বাভাবিক কারণেই বাঘের দেখাও পাবেন। একটা সময় বুনো কুকুর দেখতে পাওয়া যেত, যা এখন আর নেই।
[শহুরে কোলাহলের বাইরে কাটাতে চান পুজো? গন্তব্য হোক তুরিয়ক মামরিং]
কিছু বিশেষ ধরনের প্রজাতির সরীসৃপের দেখা মেলে। যেমন, গার্ডেন লিজার্ড, ক্যামেলিয়ন, স্কিঙ্ক ইত্যাদি। এছাড়া নানা প্রজাতির সাপের দেখাও পাবেন। যেমন, কোবরা, রাসেল ভাইপার, রক পাইথন, র্যাট্ল স্নেক ইত্যাদি। বার্ড ওয়াচারদের জন্য দারুণ আকর্ষণের জায়গা এই ন্যাশনাল পার্ক। নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। যেমন, হেরন, হোয়াইট নেক্ড স্টর্ক, স্যান্ড পাইপার, ইগল, ডাভ, কিংফিশার, ভালচার, শেষ হবে না তালিকা। জঙ্গলের চারটি রেঞ্জ ধুবড়ি, বাস্তুয়া, পোন্ডি এবং মোহন। টাইগার সাফারির জন্য আদর্শ এই ন্যাশনাল পার্কটি বেশ গভীর গহীন। একাধিক নদী বয়ে গিয়েছে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সঞ্জয় ধুবড়ির সঙ্গে বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক মিলিয়ে এখানে টাইগার সাফারি হয়। সকাল এবং দুপুরে টাইগার সাফারি হয় আর পাঁচটা পরিচিত ন্যাশনাল পার্কের মতোই। সন্ধে ৬ টার সময়ও একটি সাফারি টাইম আছে। ৬ টা থেকে ৭ টা এই সাফারি টাইম এর সময়সীমা ঋতু অনুযায়ী বদলায়। জিপে করে সাফারি হয় এখানে। সাফারির সময় নানা চমক অপেক্ষারত থাকে পর্যটকদের জন্য। ১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী বছর ৩০ জুন পর্যন্ত এই জঙ্গল খোলা থাকে।
[আপনি কি অরণ্যপ্রেমী? পুজোর ছুটিতে গন্তব্য হোক এই অভয়ারণ্য]
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে রয়েছে অনেক ট্রেন। হাওড়া-মুম্বই মেল, শিপ্রা এক্সপেসে করে সাতনা পর্যন্ত পৌঁছে, সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছতে পারেন। গাড়িতে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।
কোথায় থাকবেন
জঙ্গলের আশপাশে রিসর্ট তো আছেই। আর রয়েছে জঙ্গলের প্রবেশদ্বার থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের রিসর্টও।