Advertisement
Advertisement

Breaking News

পাহাড়ের কোলে রঙের খেলা, প্রকৃতিকে কাছে পেতে ঘুরে আসুন ভার্সে থেকে

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, জেনে নিন।

New travel destination Varsey
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:February 5, 2019 9:08 pm
  • Updated:February 5, 2019 9:08 pm

ভার্সে পাহাড়ের পায়ের কাছেই স্বপ্নরাজ্য দোদক। পর্যটকদের সেই পথের গল্প শোনাচ্ছেন প্রসূন চক্রবর্তী

সিকিমের একপ্রান্তে সাড়ে দশ হাজার ফুট উচ্চতায় প্রকৃতির নিজস্ব রঙমহল ভার্সে। এই অল্পচেনা পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত গ্যাংটক থেকে ১১৮ কিমি, শিলিগুড়ি থেকে ১৪৩ কিমি দূরে পশ্চিম সিকিমে। ভার্সে পাহাড়ের পায়ের কাছে রয়েছে আরেক স্বপ্নরাজ্য দোদক। চার পাহাড়ের ঘেরাটোপে বন্দি দোদক প্রকৃতির অমিত লাবণ্য মেখে পর্যটকদের অপেক্ষায় দিন গুনছে।

Advertisement

আমরা আসছি গ্যাংটক থেকে। গ্যাংটক থেকে সরাসরি কোনও বাস দোদক অথবা হিলে যায় না। আসতে হবে জোরথাংয়ে। এখান থেকে বাস আছে। তবে গাড়ি নিয়ে সরাসরি আসা যায়। জোরথাং ছাড়িয়ে আকর ব্রিজ পেরিয়ে সর্পিল পথে ঘুরপাক খেতে খেতে উপরে উঠতে থাকি। বাঁ পাশে সবুজ রঙ্গিত দুর্বার ভঙ্গিতে সবুজ ফেনা তুলে এঁকে-বেঁকে ছুটে চলেছে পাহাড়ের বুক চিরে আরও নিচে পাহাড়ি ঝোরাগুলি সমানে। পথে যেতে যেতে রঙ্গিতকে একপলক দেখা আবার পিছিয়ে পড়া। ধীরে ধীরে এলাচ, কমলালেবু সমৃদ্ধ জনপদ জুম, তারপর সোরাং ছাড়িয়ে দোদকে পৌঁছে যাই। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়, একদিকে ঝান্ডিধার, ভার্সে আরেক দিকে মেঘের বোরখা পরে সুখেথাম ও ভুড়তেল। অবাক হয়ে দেখি বিকালের পড়ন্ত রোদ হলুদ সবুজ পাহাড়ের মাথায় দোল খাচ্ছে। দেখতে দেখতে সূর্যদেব পাহাড় রাঙিয়ে ভার্সে পাহাড়ের পিছনে মুখ লুকাল। রঙের খেলা দেখতে দেখতে দোদকে সন্ধ্যা নামে। এখানেই আমাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হল। হাড়-হিম করা ঠান্ডায় অতিথি নিবাসের বাংলোয় তখন শুধু ধোঁয়া ওড়া চায়ের কাপে কিংবা পানপাত্রে ঠৌঁট ছোঁয়ানো একটু উষ্ণতার জন্য। বন্ধুদের সঙ্গে বনভোজনের আনন্দে মেতে উঠি। তারপর প্রকৃতির অনন্তকোলে আরামের ঘুম।

Advertisement

এবার উত্তরবঙ্গে ট্রেকিংয়ের জন্য অনলাইনে বুকিং করতে পারবেন পর্যটকরা ]

সকাল হতেই আবার পরমা প্রকৃতি দর্শন। জলখাবার সেরে আবার ছুটে চলা ভার্সের পথে। সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে এক অনন্ত মুগ্ধতায় দু’চোখ ভরে যায়। হিলিতে পৌঁছে আমরা জিপ ছেড়ে দিই। এখান থেকে শুরু ট্রেকিং। হিলি থেকে দেখতে পাই কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা। এবার পায়ে হেঁটে উপরে ওঠার পালা। পাথর বিছানো সরু রাস্তা। স্যাঁত-স্যাঁতে গহন অরণ্য। চারপাশে রডোডেনড্রন, পাইন, ওক, বেতের জঙ্গল। গাছের ডালপালায় মস জড়িয়ে আছে। এমন কিছু দুঃসাধ্য, দুর্গম চড়াই নয়। আমাদের দারুণ থ্রিলিং অ্যাডভেঞ্চার মনে হচ্ছিল। ঘণ্টা দেড়েকের হাঁটার পর আমরা পৌঁছে যাই গুরাসকুঞ্জে। যার বর্তমান পোশাকি নাম সাম্বালা রডোডেনড্রন রিসর্ট। সাম্বালার উঠোনে পৌঁছে স্তব্ধ হয়ে যাই। এ যেন দেবাত্মা হিমালয়ের কয়েকশো কিমি ব্যাপ্ত তুষারশৃঙ্গের মহাসম্মেলন। কে নেই সেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে মধ্যমণি করে বাঁদিকে নেপালের অন্নপূর্ণা, কাবরু জানু ফ্রে, জোপুনো নরসিমা, শিমভো ইত্যাদি অগুনতি তুষারশৃঙ্গের মালা। চৌকরিতে এখানকার মতো ফুলের বিশাল রাজ্যপাট নেই, সাম্বালার উঠোনের ডাইনে বাঁয়ে পিছনে সর্বত্র গুরাসের মিছিল।

এখানে আসার সেরা সময় এপ্রিল মে। গুরাসের কার্পেটে তখন রঙের ঢল নামে। পাহাড়তলি ভেসে যায় রঙের বন্যায়। ভার্সের অঙ্গজুড়ে তখন বসন্তের উচ্ছ্বাস। পাহাড় আলো করে ফুটে থাকে লাল, নীল, হলুদ ফুল। মধু আহরণের জন্য কাঞ্চনের নিচ থেকে ছুটে আসে মুনালসের ঝাঁক। পরিযায়ী পাখিরা অস্থায়ী সংসার পাতে গুরাসের জঙ্গলে। ফুলের অতিথিশালায় তারা নানা সুরে কথা বলে। রং বেরঙের ডানা মেলে ওড়ে। আর শীতকালে তাদের অঙ্গ থেকে গড়িয়ে আসা তুষারে ঢেকে যায় ভার্সের প্রকৃতি। তুষার প্রান্তে তখন খেলা করে প্রকৃতি আর পাহাড়। সেই খেলায় অংশ নেওয়া আর ঘরে ফিরে গিয়ে শোনানো যায় প্রাপ্তির কলস ছাপিয়ে যাওয়া আরও অনেক কাহিনি। এত খুশি প্রকৃতির চারপাশ জুড়ে, তবু আমাদের ফিরতে হয় কাজের পৃথিবীতে।

হাতে অল্পদিনের ছুটি? ক্লান্তি মেটাতে চট করে ঘুরে আসুন চটকপুর ]

কীভাবে যাবেন

শিলিগুড়ি থেকে বাসে বা জিপে জোরথাং। সেখান থেকে সোরেং, সোমবারিয়া হয়ে ৫৬ কিমি দূরে হিলে। জোরথাং থেকে হিলে পর্যন্ত সার্ভিস জিপ চললেও জিপ ভাড়া করে যাওয়া ভাল। হিলে থেকে আরণ্যক পথ ধরে হেঁটে ৪ কিমি গেলে ভার্সে। জোরথাং থেকে বাসে বা জিপে রিবধি গিয়ে ৮ কিমি ট্রেক করেও ভার্সে পৌঁছন কেউ কেউ। এমনকী উত্তরে গ্রাম থেকেও পায়ে পায়ে পাহাড় পার হয়ে ভার্সে পৌঁছনো সম্ভব।

কোথায় থাকবেন

ভার্সের সবচেয়ে ভাল থাকার জায়গা গুরাসকুঞ্জ নামের বাংলো। এছাড়া আছে ট্রেকার্স হাট এবং বেশকিছু হোমস্টে। এছাড়া যাতায়াতের পথে বিরধি এবং দোদকে সাধারণ মানের হোটেল ও হোমস্টে আছে। সোরেংয়ে পাবেন বেশ কয়েকটা হোটেল ও হোমস্টে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ