Advertisement
Advertisement

Breaking News

জানেন কি, রক্তদানে কেন বিপন্ন হতে পারে আপনার জীবন?

রক্ত দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় না রাখলেই নয়?

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 8, 2016 4:28 pm
  • Updated:June 11, 2018 4:42 pm

সোমা মজুমদার: রক্তদান নিঃসন্দেহে পুণ্যের কাজ! কয়েক ফোঁটা রক্ত পেলেই বেঁচে যায় মুমূর্ষু-প্রাণ৷ তাই অবশ্যই রক্ত দিন৷ কিন্তু রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার সময় সামান্য ভুলচুকে নষ্ট হতে পারে জীবন৷ বিপদে পড়তে পারেন দাতা-গ্রহীতা দুজনেই!
আসলে অনেকেই জানেন না, রক্ত দেওয়ার আগে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হয়! জানেন না, রক্ত দেওয়ার পর দাতার শরীরে কোনও প্রভাব পড়তে পারে কি না! একইভাবে ব্লাড ব্যাঙ্ক কিংবা সরাসরি কোনও ব্যক্তির দেহ থেকে রক্ত নেওয়ার সময়েও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না৷ পরিণাম? সেই জীবনদায়ী রক্তই গ্রহীতার শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যুকে!
তাহলে সাবধান থাকতে হবে কোন কোন বিষয়ে?

রক্ত নেওয়ার আগে কী কী দেখবেন?
গ্রহীতার সঙ্গে দাতার রক্তের গ্রুপের অবশ্যই মিল থাকতে হবে৷ রক্তের চারটি গ্রুপ রয়েছে৷ গ্রুপ A (+-), B (+), AB (+-) এবং O (+-)। O গ্রুপের মানুষ যে কোনও গ্রহীতাকে রক্ত দিতে পারেন৷ এই কারণে এই গ্রুপটিকে সর্বজনীন দাতা বলা হয়৷ A- গ্রুপের দাতা রক্ত দিতে পারেন A এবং AB গ্রুপকে৷ গ্রুপ B-র দাতা রক্ত দিতে পারে B এবং AB গ্রুপকে৷ আর গ্রুপ AB শুধুমাত্র AB গ্রুপের গ্রহীতাকেই রক্ত দিতে পারেন৷ যদিও বাকি সকল গ্রুপ থেকে রক্ত নিতে পারে AB৷ এই কারণে গ্রুপ AB-কে সর্বজনীন গ্রহীতা বলা হয়৷ এছাড়াও রক্তের একটি থার্ড অ্যান্টিজেন রয়েছে যাকে RH ফ্যাক্টর বলা হয়। এই RH ফ্যাক্টর রক্তে উপস্থিত (+) থাকতে পারে অথবা অনুপস্থিত (-) থাকে৷ সাধারণত RH নেগেটিভ রক্ত RH নেগেটিভ রোগীর শরীরেই দেওয়া হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে RH পজিটিভ বা RH নেগেটিভ- যে কোনও রক্ত RH পজিটিভ রোগীকে দেওয়া যেতে পারে৷
কোনও রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের কম্পোসিটের মিল হওয়াও অত্যন্ত জরুরি৷ গ্রুপ মেলার পরেও গ্রহীতার শরীরের রক্ত যে ধরনের কম্পোসিট চায়, তার সঙ্গে দাতার রক্তের কম্পোসিটের মিল আছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে৷
কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তের নম্বর খেয়াল রাখতে হবে৷ অর্থাত্‍ কবে সেই রক্তটি নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টিও খুঁটিয়ে দেখা উচিত৷
পাশাপাশি, ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই রক্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই রক্ত নিলে রোগীর শরীরে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে৷
রক্তের উপাদানের রূপ অর্থাৎ কম্পোনেন্ট ফর্মও ভাল করে দেখে নিয়ে তবে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে হবে৷
এক জায়গা থেকে অন্যত্র রক্ত নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়৷ সাধারণ ২০-৬০ তাপমাত্রায় রক্ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া উচিত৷

Advertisement

ব্লাড ডোনার কী রকম হওয়া বাঞ্ছনীয়:
দাতার অবশ্যই শরীর সুস্থ থাকা উচিত৷ অর্থাৎ কোনও বিশেষ শারীরিক সমস্যায় ভুগলে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ সেক্ষেত্রে দাতার নিজেরই শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে৷ পাশাপাশি অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণও দেখা দিতে পারে৷
১৮ বছরের আগে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ তবে ১৬-১৭ বছরে রক্ত দিতে চাইলে অভিভাবকদের অনুমতি এবং সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থা বিচার করে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত দেওয়া যেতে পারে৷
বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী দাতার ওজন সঠিক হওয়া উচিত৷
রক্ত দেওয়ার আগে সম্পূর্ণ মেডিক্যাল চেকআপ করানো উচিত৷ দাতার রক্ত গ্রহীতার শরীরে প্রবেশ করলে তা নিরাপদ হবে কি না তা যাচাই করতে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিসের মতো বেশ কিছু টেস্ট করা হয়৷ এর ফলে দাতার শরীর থেকে গ্রহীতার শরীরে রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রোধ করা যায়।
রক্ত দেওয়ার আগে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চেক করিয়ে নিন৷ তাহলে রক্ত দেওয়ার পর রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হবে না৷ একই সঙ্গে নাড়ির স্পন্দন (পালস), ব্লাড প্রেশার এবং দেহের তাপমাত্রা চেক করতে হবে৷
ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত না দেওয়ার জন্যই ডাক্তাররা পরামর্শ দেন৷

Advertisement

রক্ত দেওয়ার আগে:
আয়রনযুক্ত খাবার খান৷ এতে রক্ত দেওয়ার পর কোনও শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে৷
শস্যজাতীয় খাদ্য, মাছ, পোলট্রি ডিম, সোয়াবিন খাওয়া ভাল৷ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে৷ ফলের রস, আমলকি, পেয়ারা নিয়মিত খেতে হবে৷
নির্দিষ্ট পরিমাণ জল বা ফলের রস খাওয়াও অত্যন্ত জরুরি৷ সাধারণত রক্ত দেওয়ার পর অনেক সময় রক্তদাতাকে দুর্বল এবং বিবর্ণ লাগে৷ এর কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেশার এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা অনেক সময় কমে যায়৷ এই ধরনের ঝুঁকি এড়ানো তখনই সম্ভব যখন দাতা রক্ত দেওয়ার আগে ভাল করে হাইড্রেটেড হতে পারবেন৷ রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে, বিশেষত গরমকালে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হয়৷
রক্ত দেওয়ার আগের রাতে যথাযথ ভাবে ঘুমানো জরুরি৷
খালি পেটে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ আবার খুব বেশি ভরা পেটেও রক্ত দিতে আসা ঠিক নয়৷ রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে রক্তদাতার ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়৷ সঠিক পরিমাণে খাবার খেলে তা দাতার ব্লাড সুগারের মাত্রাও ঠিক রাখতে সাহায্য করবে৷
রক্ত দেওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান করা উচিত নয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যালকোহল খাওয়াও ঠিক নয়৷ একইসঙ্গে রক্ত দেওয়ার আগে চুইংগাম, ক্যান্ডি বা মিন্ট জাতীয় কিছু না খাওয়াই উচিত। কারণ এগুলি মুখের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷

কতদিন অন্তর রক্ত দেওয়া যেতে পারে?
একবার রক্ত দেওয়ার পর অন্তত আট সপ্তাহ (৫৬ দিন) বাদে ফের রক্তদান করা যায়৷ ডবল রেড সেল ডোনেশনের মধ্যে ১৬ সপ্তাহ (১১২ দিন) অপেক্ষা করা উচিত৷

দাতা-গ্রহীতার সতর্কতা:
রক্ত দেওয়া এবং নেওয়ার আগে দাতা-গ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং টেস্টগুলি করিয়ে নিতে হবে৷ সতর্ক থাকতে হবে যাতে দাতার শরীর থেকে কোনও রোগ রক্তের মাধ্যমে গ্রহীতার শরীরে বাহিত না হয়৷ কেউ যদি রক্ত দেওয়ার পর জানতে পারেন যে তাঁর শরীরে এইচআইভি রয়েছে তাহলে তিনি নির্দিষ্ট ব্লাড ডোনেশনের হেল্পলাইন কিংবা নির্দিষ্ট চিকিৎসককে অবশ্যই জানান৷

আরও জানতে মেরিল্যান্ড নার্সিংহোমের বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট তুফান দলুইকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9830523390। পাশাপাশি ক্লিক করে দেখে নিন epratidin.in

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ