Advertisement
Advertisement

পালকিতে চড়ে স্নানে যায় কলাবউ! শহরের পুজোয় অভিনব রীতি

হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষরা অংশ নেন এই পুজোয়৷

Kolkata: This puja have a interesting fact on kola bou snan
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 2, 2018 9:43 pm
  • Updated:October 2, 2018 11:06 pm

সায়নী সেন: তিলোত্তমায় তখন সবে কাকভোর৷ মাঝখান দিয়ে পালকি চড়ে কেউ যাচ্ছেন৷ বাহক, বাজনা কত কী৷ আচমকা দেখলে আপনার মনে পড়তে পারে, কোনও উপন্যাসের কাহিনি৷ কিংবা পুজোর আগে বলে আপনি ভাবতেই পারেন, কোনও থিম নিয়ে আলোচনা করছি৷ পুরোপুরি ঠিক না ভাবলেও, পুজোর কথাই বলতে চাইছি সেটা সত্যি৷ তবে থিম নয়, এটা ছিল সপ্তমীতে কলাবউ স্নান করানোর প্রেক্ষাপট৷ এবার ভাবছেন যেকোনও বনেদি বাড়ির পুজোর কথা বলছি৷ না, মোটেই না৷ এই রীতি মেনে নিজেদের অভিনবত্ব বজায় রেখেছেন কলকাতা পৌর কর্মচারী সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা৷ আর সাবেকিয়ানার ছোঁয়া থাকবে না-ই বা কেন,  এই পুজো যে শুরু করেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু৷

[পুজোর শহরে এবার ‘খোলা হাওয়া’ বইবে হরিদেবপুর অজেয় সংহতিতে]

নেতাজির কথা যখন উঠলই, তখন এবার টাইম মেশিনে চড়ে স্বাধীনতার কয়েকবছর আগের ভারতে চলুন যাই৷ ভাবুন তো, অন্ধকার ছাড়া সেই সংগ্রামের দিনগুলিতে আর কী-ই বা ছিল নাগরিকদের জীবনে৷ ব্রিটিশদের নির্মম অত্যাচার, নিপীড়ন৷ আর অন্যদিকে ইংরেজদের রোখার পালটা পরিকল্পনা করতে করতেই দিন কাটত বিপ্লবীদের৷ কিন্তু তা বলে কি তখন আশ্বিন মাস আসত না, কাশফুল ফুটত না নাকি তখন উমা সেই সুদূর কৈলাস থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি আসতেন না? আসতেন নিশ্চয়ই৷ তখন তো আর সেভাবে বারোয়ারি পুজোর চল ছিল না৷ সাবেকি ধাঁচে ধনীদের বাড়িতে মা আসতেন মহা সমারোহে৷ কতই না তার আয়োজন৷ আলো, বাজনা, পালকি আরও কত কী৷ শুধু এক জায়গাতেই ছিল খামতি৷ নিম্নবর্ণের মানুষরা যোগ দিতে পারতেন না বনেদি বাড়ির পুজোয়৷ তাঁদের উৎসবের সময়টা কাটত বছরের আর পাঁচটা দিনের মতোই, একঘেয়ে৷ কিন্তু উৎসব মানে যে মিলন , তা ভুলতে পারেননি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু৷ শারদোৎসবকে মিলনোৎসবের চেহারা দিতেই হাজরা পার্কে নিজে হাতে তিনি শুরু করলেন পুজো৷ সময়টা তখন ১৯৪২৷ হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষরাই মূলত এই পুজোয় অংশ নিতেন৷

Advertisement

[এবার পুজোয় মায়ের চক্ষুদানে রূপান্তরকামীর ছোঁয়া]

সমাজের অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষগুলিকে একটু আলোর সন্ধান দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই পুজোর পথচলা শুরু৷ তারপর থেকে একে একে কেটে গিয়েছে ৭৫ বছর৷ চলতি বছর তাদের থিম ‘তমস মা জ্যোতির্গময়’ অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা৷ শিল্পী শক্তি শর্মার হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠছে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সবকিছুই৷ বর্তমানে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ই এই পুজোর মূল আয়োজক৷ তাঁর ছেলে সায়নদেবেরও উৎসাহ কম কিছু নয়৷ হাজরা  পার্কের এই পুজোয় দায়িত্বের কাঁধ বদলেছে, কিন্তু রীতির বদল!  নৈব নৈব চ৷ আজও কলাবউ স্নানে পালকির বন্দোবস্ত বাধ্যতামূলক৷ অষ্টমী ও নবমীতে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের ভোগ বিতরণ করা হয়৷ এছাড়াও তাঁদের ঘরেরই কচিকাঁচাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বই, খাতা, নতুন পোশাক৷ যার জন্য প্রায় সারাবছরই অপেক্ষা করেন থাকে ওই খুদেরা৷ চলতি বছর চতুর্থীতেই হবে পুজোর উদ্বোধন৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থাকবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে৷ রয়েছে আরও চমক৷ অষ্টমীতে এই মণ্ডপেই অঞ্জলি দেবেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়৷ ইতিহাস বিজড়িত হাজরা পার্কের এই পুজোয় একবার ঢুঁ মারতে পারেন আপনিও৷

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ