Advertisement
Advertisement

পুজোয় ‘অন্তহীন প্রাণের’ কাহিনি বলবে উল্টোডাঙা পল্লিশ্রী

শিল্পীদ্বয় মলয়-শুভময়ের সৃজনে গড়ে উঠছে মণ্ডপ।

Puja 2018: Interesting facts of Ultodanga Pallysree's theme this year
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:September 30, 2018 4:04 pm
  • Updated:September 30, 2018 4:04 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন উল্টোডাঙা পল্লিশ্রীর পুজো প্রস্তুতি৷

রোহন দে: দ্বাপর যুগে মর্ত্যলোকের লীলা সাঙ্গ করে নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের শেষকৃত্যে পঞ্চপাণ্ডবরা তাঁর দেহে অগ্নিসংযোগ করলে লেলিহান অগ্নিশিখায় সমস্ত দেহটি একমুঠো চিতাভস্মে পরিণত হয়। অথচ অক্ষত রয়ে যায় তাঁর হৃৎপিণ্ড। অকস্মাৎ ধরণীর স্তব্ধতা ভেঙে নেমে আসে দৈববাণী। সেই দৈববাণীই পেয়ে পঞ্চপাণ্ডবরা শ্রীকৃষ্ণের সেই অক্ষত হৃৎপিণ্ড সমুদ্রের অতল জলে নিক্ষেপ করেন এবং সেই হৃৎপিণ্ডই এক কাষ্ঠের রূপ ধারণ করে। পরবর্তী কালে এই কাষ্ঠই দৈব আদেশে সমুদ্রের বুকে খুঁজে পান পুরীর রাজা ইন্দ্রদুম্ন। সেই কাষ্ঠ দিয়েই জগন্নাথ মূর্তি নির্মান করে তাঁর মধ্যেই স্থাপন করেন দারুব্রহ্ম। দারুব্রহ্ম যা কিনা চিরন্তন সত্য। নিত্য-অনিত্য জগতের প্রধান চালিকা শক্তি অথবা প্রাণ।

Advertisement

Advertisement

এক পুরান নির্ভর কাহিনি দারুব্রহ্ম থেকেই উৎপত্তি এই থিম ‘অন্তহীন প্রাণ’-এর। পুরাণের দারুব্রহ্মই হল এই থিমের মূল ভিত্তি। আর এই অভিনব থিমের উপর ভর করেই ৭০তম বর্ষে উল্টোডাঙা পল্লিশ্রী সেজে উঠতে চলেছে। মূর্তির নবকলেবর কালে, অমানিশার আঁধারে সমগ্র পুরীর আলো নিভিয়ে এবং পুরোহিতের চোখ এমনকি হাত অবধি কাপড়ে আচ্ছাদিত করে পুরনো মূর্তির ভিতর থেকে নতুন মূর্তিতে দারুব্রহ্মকে স্থাপন করা হয়। মরণশীল জাগতিক জীবনচক্রের মধ্যে মিলে যান চিরনিত্য ভগবান। ভক্তের মতো তিনিও দেহত্যাগ করেন, তাঁর আত্মাও নতুন শরীর ধারণ করে। দেবী দুর্গাও সেই প্রাণেই প্রাণবন্ত। তিনিও প্রতিবছর কন্যারুপে আমাদের ঘরে আসেন। শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় খড়-মাটি-কাদার ভিতর থেকে জেগে ওঠেন অসুরবিনাশকারিনী। এই পুরো বিষয়-ভাবনা শিল্পীদ্বয় মলয় ও শুভময়ের হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠতে চলেছে। শিল্পীর ভাষায়, চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর মূর্তিতে প্রাণ দেওয়া হয়। দেবী দুর্গা হয়ে ওঠেন মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী। আবার বিসর্জনের সময় তিনি সেই সুসজ্জিতা মাটির শরীর ছেড়ে অবগাহন করেন গঙ্গাজলে। কথা দিয়ে যান, আসছে বছর আবার আসব বলে। আগামী বছর ফের সেই গঙ্গাবক্ষ থেকেই মাটি তুলে এনে রূপদান করা হয় মৃণ্ময়ীকে। শরীর নশ্বর কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর।

[পুজোর শহরে মুক্তির স্বাদ দেবে ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যাণ সমিতি]

 

থিম যেখানে ‘অন্তহীন প্রাণ’, সেখানে মায়ের ভূমিকা তো থাকবেই। কী মানুষ কী ভগবান, প্রাণের ক্ষেত্রে সবাইকেই ভরসা করতে হয় মায়ের উপর। মা এবং সন্তানের সম্পর্কও এখানে ফুটিয়ে তোলা হবে। থিম শিল্পীরাই প্রতিমার স্কেচ, রং, আকার ইত্যাদি তৈরি করে দিয়েছেন। প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী পরিমল পাল। মাটি থেকে ৬ ফুটের উঁচু গ্যালারির মাধ্যমে মণ্ডপে প্রবেশের পথ। প্রাণের আধার বোঝাতে মণ্ডপে থাকছে দারুব্রহ্ম। দর্শনার্থীরা দারুব্রহ্মের খুব কাছে গিয়েও স্পর্শ পাবে না, কারণ ব্রহ্মকে ছোঁয়া যায় না। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে শাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য। মণ্ডপের মধ্যে বিশাল আকারের দারুব্রহ্ম থেকে শ্রীকৃষ্ণ, জগন্নাথ সবেরই মূর্তি সবই শোভা পাবে।

[জীবনে ওঠানামার ‘আবর্ত’-এর কাহিনি এবার হিন্দুস্থান পার্কের পুজোয়]

বিগত বছরগুলিতে এই পল্লিশ্রী নানাধরনের অভিনব ভাবনায় বহুবিধ শিল্পকর্মকে দর্শনার্থীদের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। কখনও শিল্পী সুশান্ত পাল ‘শাশ্বত শান্তি’-এর মতো থিম করে চমকে দিয়েছেন শহরবাসীকে, আবার গত বছরে শিল্পী পূর্ণেন্দু দে-র ভাবনায় তৈরি কলকাতা শহর কেন্দ্রিক থিম ‘একটু আকাশ’-এর মাধ্যমে নতুন কিছু ভাবনা ও শিল্পকর্ম উপহার দিয়েছেন দর্শনার্থীদের। উদ্যোক্তাদের মতে, এবারও তাঁরা দর্শনার্থীদের নতুন কিছু শিল্পকর্ম উপহার দিতে চলেছেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ