Advertisement
Advertisement

Breaking News

দুর্গাপুজো

বনেদিয়ানার গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বজনীন, বদলের শতবর্ষে হাসনাবাদের ঠাকুরবাড়ির পুজো

১৯১৮ সালে পুজো শুরু হয় ওই ঠাকুরবাড়িতে।

Amazing history of about hasnabad's bishpur rajbari
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:September 16, 2019 4:44 pm
  • Updated:September 16, 2019 4:44 pm

নবেন্দু ঘোষ,বসিরহাট: যেন চোখের নিমেষে কেটে গিয়েছে একটা শতক। তবু আজও হাসনাবাদের বিশপুরের বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির পুজোর জাঁকজমকে কোন ভাঁটা পরেনি। বরং যত বয়স বাড়ছে ততোই যেন জাঁকজমক আরও বাড়ছে পুজোর। আর বহু বছর ধরে বিশপুরের মানুষের কাছে দুর্গাপুজো মানেই এই ঠাকুরবাড়ির পুজো। কারণ, কয়েক বছর আগেও বিশপুর গ্রামে একমাত্র দুর্গাপুজো হত ঠাকুর বাড়িতেই। আর তাই সেখানেই ভিড় জমাতেন গোটা গ্রামের মানুষ। এমনকী এখনও বিভিন্ন এলাকার মানুষ যান ওই পুজো দেখতে।

[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, এবার পুজোর থিম সং লিখলেন চন্দ্রিমা]

ঠাকুরবাড়ির প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে,  ১৯১৮ সালের সংস্কৃত পণ্ডিত হৃষিকেশ পাণ্ডার হাত ধরে পুজো শুরু হয় ওই ঠাকুরবাড়িতে। তখন আশেপাশের কোথাও কোনও দুর্গাপুজো হত না। তাই পণ্ডিত হৃষিকেশবাবু গ্রামবাসীর সঙ্গে পুজো উপভোগ করবেন বলে গ্রামের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পুজোর সূচনা করেন। সেই থেকেই শুরু। যা এবছর ১০১ বছরে পদার্পণ করল বিশপুরের ঠাকুর বাড়ির পুজো। এই পুজোর সঙ্গে গ্রামবাসীরা এমনভাবে যুক্ত থাকেন যে, দেখলে মনে হয় যেন এটা বিশপুরবাসীরই পুজো।

Advertisement
durga-puja-2
তৈরি হচ্ছে প্রতিমা

জানা গিয়েছে, সুন্দরবন অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র বিশপুরের এই ঠাকুরবাড়ির পুজোতেই কুমারী পুজো হয়। কুমারী পুজোর রীতি হল, অনূর্ধ্ব বারো বছর বয়সের পরিবারের কন্যাসন্তান অথবা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কোনও মেয়েকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। সেইসঙ্গে ওই বাড়ির পুজোয় ছাগল বলি দেওয়ার প্রথাও ছিল। কিন্তু গত বেশ কিছু বছর হল পশুবলি বন্ধ। জানা গিয়েছে, গত একশো বছর ধরেই ঠাকুরের ভোগ রান্নার জন্য রাঁধুনি আনা হয় পুরীর জগনাথ মন্দির থেকে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, এই ঠাকুরবাড়িতে প্রতিমা এবং দেবীর পোশাক ও গয়না সবেতেই থাকে সাবেকি আনার ছোঁয়া। বলা যায় আজও কোনও আধুনিকতা গ্রাস করেনি ঠাকুরবাড়ির পুজোকে। প্রাচীন প্রথা মেনেই আজও দেবীর আরাধনা হয় ওই বাড়িতে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনেদি বাড়ির পুজোর জৌলুস কমতে থাকে, কিন্তু বিশপুরের ঠাকুর বাড়িতে কার্যত উলটো ছবি। যতই পুরানো হছে এই পুজো, ততই যেন জাঁকজমক পূর্ণ হয়ে উঠছে। ঠাকুরবাড়ির পুজোর একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল গত ৩৮ বছর ধরে পঞ্চমীর দিনে গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য বস্ত্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও গ্রামের গুণিজনদের সম্মান প্রদান করা হয়।

কিন্তু কেন বাড়ির পুজোতে এমন উদ্যোগ? উত্তরে ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য অমলকৃষ্ণ শাস্ত্রী জানান, হৃষিকেশ পাণ্ডা ঠাকুর বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীদের নিয়ে। তাই হৃষিকেশবাবুর বর্তমান উত্তরসুরিরাও চান দরিদ্ররা যেন পুজোয় নতুন পোশাক পায় এবং পুজোর দিনগুলো সবাই পেট ভরা খাবার পান। তাই পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতে সারাদিন জ্বলে বড় বড় উনুন, চলে রান্না। সবার জন্য সবসময় থাকে ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা। পুজো-সহ সব কাজ যাতে সঠিকভাবে হয় তার তদারকি করেন বাড়ির বড় ছেলে রামকৃষ্ণ শাস্ত্রী। বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার জন্য থাকেন চল্লিশ-পঞ্চাশ জন কর্মী ও গ্রামবাসীরা। সবমিলিয়ে দুর্গা পুজোর কটাদিন ঠাকুর বাড়ি চত্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। চারটি দিন বাড়ির সামনে কার্যত মেলা বসে যায়। পুজো প্রাঙ্গনে সারাদিন ধরে চলতে থাকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। যেখানে অংশ নেয় গ্রামের কচিকাঁচারা, এমন কী মহিলারাও।

temple
বিশবাড়ির মন্দির

স্থানীয় বাসিন্দা কাজলি ঘোষ, অদিতি দাসরা বলেন, “ঠাকুরবাড়ির পুজো না দেখলে যেন দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ হয় না। থিমের পুজো দেখতে যেখানেই যাই না কেন, সাবেকি আনার পুজো দেখতে ঠাকুর বাড়িতে অবশ্যই যাই। এই পুজো না দেখলে যেন কিছু একটা খামতি থেকে যায়।” ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য অমল শাস্ত্রী বলেন, “আমাদের এই পুজো আজ আর শুধু বনেদি বাড়ির পুজো নয়, আমরা মনে করি এখন এই পুজো হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। গ্রামের বিভিন্ন মানুষ আমাদের সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন বলে আমরা সুন্দর ভাবে এই পুজো পরিচালনা করতে পারি। এবং বহু বছর ধরে আমরা যেভাবে পুজো করছি তাতে খুশি হয়ে বিশ্ব সেবাশ্রম সংঘ আমাদেরকে সাহায্য করে থাকে।”

[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় নয়া চমক, চন্দ্রযান ওড়াবে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব]

উল্লেখ্য, এই বাড়ির দুই ছেলে রামকৃষ্ণ শাস্ত্রী ও অমল শাস্ত্রী তাঁরা দুজনেই পেশায়  জ্যোতিষ। অন্য ভাইয়েরা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। তাই এই পরিবারে বেশিরভাগ সদস্যরা সারা বছর কলকাতায় থাকেন। তবে পুজোর কটাদিন পরিবারের সবাই চলে আসেন বিশপুরের গ্রামের বাড়িতে। এই বাড়ির মহিলা সদস্য গোপা শাস্ত্রী ও মিনতি শাস্ত্রীরা বলেন, “ কলকাতাতে থাকলেও দুর্গা পুজো এলেই আমাদের মন টানে গ্রামের বাড়ি। পুজোর দিনগুলোতে আমরা বাড়ির সমস্ত মহিলারা লাল পেড়ে শাড়ি ও গয়না পরি। এটাই আমাদের পরিবারিক রীতি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ